ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শরণার্থী শিবির থেকে বিশ্বকাপের অধিনায়ক

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ১ জুন ২০১৮

শরণার্থী শিবির থেকে বিশ্বকাপের অধিনায়ক

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ক্রোয়েশিয়ার শরণার্থী শিবিরে কেটেছে শৈশব। ফুটবল খেলতে যেতে হয়েছে প্রাণ হাতে করে। অনেকবার কামানের ভয়ঙ্কর গোলার শব্দে খেলা ভুলে পালাতে হয়েছে নিরাপদ আশ্রয়ে। শরণার্থী শিবিরে তিল তিল করে বেড়ে উঠেছে তার ফুটবল স্বপ্ন। সেই স্বপ্নই আজ ফুলে-ফলে সমৃদ্ধ। বলা হচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদের তারকা ফুটবলার লুকা মডরিচের কথা। ২০১৮ বিশ্বকাপে যিনি ক্রোয়েশিয়ার অধিনায়কের ভূমিকা পালন করবেন। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত সেই দেশ থেকে বিশ্ব ফুটবলের সাড়া জাগানো মিডফিল্ডার মদ্রিদের জীবন অনেকটাই রূপকথার গল্পের মতো। ছোট বেলায় তাদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছিল সার্বিয়ার দুষ্কৃৃতকারীরা। দাদুকে খুন করা হয়েছিল পরিবারের লোকের সামনে। ফলে নিজেদের বাড়িতে থাকা হয়নি লুকার পরিবারের। লুকার জন্মস্থান জ্যাডার থেকে ৪০ কিলোমিটার (১৯ মাইল) দূরে। শরণার্থী শিবিরে জায়গা হয় গোটা পরিবারের। মডরিচের ছোটবেলার এই রোমহর্ষক গল্প শোনান এনকে জ্যাডার ক্লাবের কোচ যোসিফ বাজলো। তার কথায়, ‘মডরিচের নাম শোনা গিয়েছিল রিফিউজি ক্যাম্পে থাকার সময় থেকেই। ফুটবল ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান। সেই সময়ই তাকে জ্যাডার ক্লাবে নিয়ে আসা হয়েছিল দেশ স্বাধীন হওয়ার পর। সেই ক্লাবে লুকা নিজেকে চেনাতে পেরেছিল।’ তার আগে অবশ্য স্কুল টিমে নিজের জাত চেনাতে পেরেছিলেন লুকা। ক্লাব ফুটবল খেলার সময় সকলের নজরে চলে আসেন তিনি। ধীরে ধীরে পরিচিতি পান গোটা ফুটবল দুনিয়াতে। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর আগুন জ্বলেছে গোটা দেশে। সেই সময়ে অনুশীলন করারও জায়গা খুঁজে পাওয়া যায়নি। লুকার বন্ধু মারিজান বুলজাত বলেন, ‘অনেকবার খেলতে খেলতে পালাতে হয়েছে নিরাপদ আশ্রয়ের খুঁজে। কারণ সমানে আক্রমণ শুরু হয়েছে। গুলি-বন্দুকের আওয়াজ কানে আসছে। লুকা ভীষণ বিরক্ত হতো। খেলা ছেড়ে যেতে চাইত না। তাই ওকে নিয়ে আগেই পালাতে হতো।’ লুকা মডরিচের সেই বন্ধু বিশ্বকাপের ঠিক পূর্বমুহূর্তে স্বীকার করে নিচ্ছেন, ‘ছোটবেলার নানা ঘটনার জন্য ও মানসিকভাবে ভীষণ শক্তিশালী। কোনদিন ভেঙ্গে পড়তে দেখিনি। বহু ফুটবলার বিশ্বকাপে খেলেছে। কিন্তু লুকা অবশ্যই তাদের সবার চেয়ে ব্যতিক্রম।’ ফিফার বর্ষসেরা একাদশের তালিকায় তিনবার স্থান পেয়েছেন লুকা। ক্রোয়েশিয়ার কোন ফুটবলার এই সম্মান পাননি। কিন্তু দুঃখজনক হলো এই যে, তার ছোটবেলার সেই ক্লাব এনকে জ্যাডার তৃতীয় ডিভিশনে নেমে গিয়েছে। কিছুদিন আগে লুকা সেই ক্লাবে গিয়েছিলেন। ক্লাব কর্তাদের সঙ্গে নিজের সুঃখ-দুখের কথা বলতে। পুরনো ক্লাব ছেড়ে ২০০০ সালে ডায়নামো জাগরেবে যোগ দেন মডরিচ। ২০০৮ সালে নতুন করে ঠিকানা গড়েন ইংলিশ ক্লাব টটেনহ্যাম হটস্পারে। তার আগেই জাতীয় দলের নায়কের ভূমিকায় দেখা যায় তাকে। তবে গত বছরে তার বিরুদ্ধে ডায়নামো জাগরেবে মারাত্মক অভিযোগ নিয়ে আসে। জাগরেবে থেকে টটেনহ্যামে যাওয়ার সময় তিনি কিছু ভুল তথ্য জমা দিয়েছিলেন ক্লাবে। সে জন্য পুরনো ক্লাবকে বহু অর্থ দিতে হয়েছিল। ক্লাবের মালিকানা বদল হওয়ার পরে তা নজরে আসে। সে সময় দেখা যায় লুকা এমন কিছু কাগজপত্র জমা দিয়েছিলেন যেগুলো সত্য নয়। তা নিয়ে মামলা পর্যন্ত হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে পাঁচ বছরের জেলও হতে পারে বর্তমান রিয়াল মাদ্রিদের এই ক্রোয়েশিয়ান তারকার। বিশ্বকাপ শেষ হলেই আবার সেই মামলার শুনানি শুরু হবে। ফলে অনেকের ধারণা, রাশিয়া বিশ্বকাপে এ বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট চিন্তার মধ্যে থাকতে হবে মডরিচকে। যদিও মডরিচের বন্ধুরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন সমঝোতার রাস্তা খুঁজে বের করার। বিশ্বকাপে সফল হলে অভিযোগ থেকে সরে আসতে পারে তার পুরনো ক্লাব। ব্যর্থ হলে হয়তো তা নিয়ে আরও সরব হবে জাগরেবে কর্তারা। আগামী ১৪ জুন শুরু হবে বিশ্বকাপ। রাশিয়া বিশ্বকাপে তাই রিয়াল মাদ্রিদের ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ডার বেশ চাপের মধ্যেই থাকবেন।
×