ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারের বিদ্যুত উৎপাদনের মহাপরিকল্পনায় গোঁজামিলের অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ২০ মে ২০১৮

সরকারের বিদ্যুত উৎপাদনের মহাপরিকল্পনায় গোঁজামিলের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারের বিদ্যুত উৎপাদনের মহাপরিকল্পনায় রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ বিদ্যুত বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। সরকারের বিদ্যুত উৎপাদনের মহাপরিকল্পনার বিপরীতে একটি পরিকল্পনা এর আগে উপস্থাপন করে জাতীয় কমিটি। এবার সেই উপস্থাপনার বিশ্লেষণ করতে গিয়ে শনিবার রাজধানীতে আয়োজিত এক সেমিনারে সরকারের পরিকল্পনাকে গোঁজামিলের বলে উল্লেখ করছে তারা। সেমিনারে জাতীয় কমিটির ভাষায় একজন প্রকৌশলী এবং গবেষক দাবি করা মওদুদ রহমান বলেন, বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য সরকার পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান (পিএসএমপি) করেছে। এটি গোজামিল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। মওদুদ রহমান জ্বালানি প্রযুক্তি নিয়ে দেশে ফ্রিল্যান্সার গবেষক হিসেবে কাজ করছেন বলে দাবি করেন। সম্প্রতি তিনি জাতীয় কমিটির বিশেষজ্ঞ হিসেবে কথা বলতে শুরু করেছেন। মওদুদ রহমান বলছেন, তিনি দেশের মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি) ছাড়াও ভারতের মুম্বাই এর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে পড়া লেখা করেছেন। বিশে^র বড় বড় প্রকৌশলীদের প্রণয়ন করা এ ধরনের মাস্টার প্ল্যান নিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে তার কাজের পরিধি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফ্রিল্যান্সার গবেষক। দেশের কোন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই। কত সালে এসএসসি পাস করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন নয়। অন্যদিকে বিদ্যুত বিভাগের করা মহাপরিকল্পনাটি প্রণয়ন করেছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। মওদুদ রহমান বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে দেশে বিদ্যুতের যে চাহিদা হবে তার মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে ১৯ হাজার মেগাওয়াট ও পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে ৭ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করতে হবে। জাতীয় কমিটি যাচাই করে দেখেছে যে, এ ক্ষেত্রে কয়লা দিয়ে ১১ হাজার এবং পারমাণবিক থেকে মাত্র তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। তিনি বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে তাতে আমদানি করা বিদ্যুতের কথাই বলেছে বিদ্যুত বিভাগ। কিন্তু জাতীয় কমিটি মনে করে দেশের ভেতরেই এই বিদ্যুত উৎপাদন করা সম্ভব। পিএসএমপি অনুযায়ী, দেশের বায়ু, জল ও সৌর বিদ্যুতের কোন দরকারই নেই এই সরকারের। অন্যদিকে সরকারের মহাপরিকল্পনায় জাইকা যে উৎপাদন কৌশল নির্ধারণ করে দিয়েছে তাতে বলা হচ্ছে মিশ্র জ্বালানিতে বিদ্যুত উৎপাদন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে গ্যাস, কয়লা হবে প্রধান জ্বালানির পাশাপাশি পরমাণু, তরল জ্বালানি এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুত উৎপাদন করতে হবে। এখানে বিদ্যুত উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন জ্বালানির প্রাপ্যতা এবং মূল্যের বিষয়টি প্রাধান্যের পাশাপাশি সঞ্চালন ব্যবস্থাপনার সমন্বয় করা হয়েছে। মওদুদ বলেন, জ্বালানি ঘাটতি পূরণে সরকার এলএনজি আনার পরিকল্পনা করেছে। অথচ দেশের ভেতরের গ্যাস অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে সরকারের বিপুল অনীহা দেখা যাচ্ছে। বাপেক্সকে বসিয়ে রেখে একের পর এক কোম্পানিকে কাজ দিয়ে যাচ্ছে তারা। জাতীয় কমিটি মনে করে, গ্যাস ঘাটতি পূরণ করতে হলে আমদানি নির্ভর না হলে দেশীয় গ্যাস উত্তোলন দ্রুত করা দরকার। পাশাপাশি বাপেক্সকে শক্তিশালী করাও জরুরী। এদিকে রামপালে ও রূপপুরে যে সব বিদ্যুত কেন্দ্র করা হচ্ছে তাতে বিদ্যুত উৎপাদনের চেয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষতি হবে বেশি। মহেশখালীতে বিদ্যুত কেন্দ্র করতে গিয়ে বিদ্যুত পাওয়া যাবে ঠিকই। কিন্তু হারিয়ে যাবে ওই এলাকায় ইলিশের নিরাপদ বিচরণ ক্ষেত্রে, শুঁটকি শিল্প, লবণ চাষসহ অন্য কৃষি ফসলে জমি। ভিটে ছাড়া হচ্ছেন হাজারো মানুষ। জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ বলেন, দেশে গ্যাস নেই এমন অজুহাতে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে অথচ আমাদের দেশের সাগরভাগের গ্যাস উত্তোলনের চেষ্টা করা হচ্ছে না। গ্যাসের কৃত্রিম সংকট করে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় নেতা নজরুল ইসলাম, বাসদের বজলুর রশীদ ফিরোজ, জাতীয় কমিটির মহানগর শাখার জুলফিকার আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা প্রমুখ।
×