ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রিন্স হ্যারি ও মেগানের রূপকথার বিয়ে

প্রকাশিত: ০৬:১০, ২০ মে ২০১৮

প্রিন্স হ্যারি ও মেগানের রূপকথার বিয়ে

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ব্রিটিশ রাজপরিবারের ইতিহাসে অনন্য এক জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে পরস্পরের জীবনসঙ্গী হলেন প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেল। সেন্ট জর্জ চ্যাপেল গির্জায় রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও অভিজাত ৬০০ অতিথির উপস্থিতিতে শনিবার পরস্পরকে বিয়ের বন্ধনে জড়ালেন তারা। রাজপরিবারের এই নতুন দম্পতি এখন থেকে পরিচিত হবেন ডিউক ও ডাচেস অব সাসেক্স হিসেবে। খবর বিবিসি ও এএফপির। ব্রিটিশ ডিজাইনার ক্লেয়ার ওয়েইট কেলারের তৈরি সাদা ধবধবে পোশাকে বিয়ের জন্য গির্জায় হাজির হন মেগান মার্কেল। আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন বর প্রিন্স হ্যারি এবং তার ভাই ও বেস্ট ম্যান প্রিন্স উইলিয়াম। মেগানের বিয়ের পোশাক ধরে ছিলেন প্রিন্স উইলিয়ামের ছেলে প্রিন্স জর্জ। হবু শ্বশুর প্রিন্স চার্লসের হাত ধরে বিয়ের মঞ্চে আসেন মেগান। এরপর মঞ্চে উপস্থিত হয়ে সেন্টারবুরির যাজক জাস্টিন উইলবি তাদের বিয়ে পড়ান। ছোট নাতির বিয়েতে ছিলেন ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। একটি ছাদখোলা গাড়িতে স্বামী প্রিন্স ফিলিপের সঙ্গে করে গির্জায় হাজির হন রানি। আর শুরুতেই হেঁটে গির্জার উদ্দেশ্যে রওনা হন প্রিন্স হ্যারি ও উইলিয়াম। সে সময় তারা রাস্তার দু’পাশে থাকা ভিড়ের উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। এর আগে মায়ের সঙ্গে গাড়িতে চড়ে চার্চের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন পাত্রী মার্কিন অভিনেত্রী মেগান মার্কেল। বিয়ের অনুষ্ঠান শুরুর বেশ আগেই দলে দলে অতিথিরা অনুষ্ঠানে আসতে শুরু করেন। আমন্ত্রিত অতিথি এবং সাধারণ দর্শকও উইন্ডসর ক্যাসেলের মাঠে জড়ো হন। সারা বিশ্বে কোটি কোটি মানুষ টেলিভিশনে এই বিয়ের অনুষ্ঠান সরাসরি উপভোগ করেন। আমন্ত্রিতদের মধ্যে ছিলেন প্রখ্যাত টকশো হোস্ট অপরাহ উইনফ্রে, জর্জ ও আমাল ক্লুনি, ডেভিড ও ভিক্টোরিয়া বেকহ্যাম ও স্যার এলটন জন। বিয়ে শেষে উইন্ডসর শহরে ঘোড়ার গাড়িতে ঘুরে বেড়ানোর কথা নবদম্পতির। সেখানে অতিথিরা তাদের অভ্যর্থনা জানাবেন। সন্ধ্যায় ফ্রগমোর হাউসে হ্যারি-মেগানের সম্মানে দুই শতাধিক ঘনিষ্ঠ অতিথির উপস্থিতিতে প্রিন্স চার্লসের উদ্যোগে বিশেষ পার্টি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই বিয়েতে মোট তিন কোটি পাউন্ড খরচ হতে পারে বলে ব্রিটিশ গণমাধ্যমের খবরে আভাস পাওয়া গেছে। বিয়ে অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাকারী প্রতিষ্ঠান ব্রাইডবুক বলেছে, এই অনুষ্ঠানের মোট ব্যয় তিন কোটি ২০ লাখ পাউন্ড ছাড়াতে পারে। সবচে বেশি খরচ ধরা হয়েছে নিরাপত্তা বাবদ। এ খাতে খরচ দুই কোটি ২০ লাখ পাউন্ড। ২০১১ সালে অপর ব্রিটিশ যুবরাজ প্রিন্স উইলিয়াম ও কেট মিডলটনের বিয়েতে নিরাপত্তা বাবদ ৬৩ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড খরচ হয়েছিল। এই অর্থের মধ্যে ২৮ লাখ পাউন্ড পুলিশের ওভারটাইম বাবদ এবং ওই দিন দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত প্রায় পাঁচ হাজার পুলিশের জন্য খরচ হয়েছিল। এর আগে তথ্যের স্বাধীনতা আইনের অধীনে করা অনুরোধে জানা গিয়েছিল, লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের নেয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় মোট খরচ ছিল ৭২ লাখ পাউন্ডের কাছাকাছি। যাহোক ওই বিয়ের সব ধরনের নিরাপত্তা বাবদ ব্যয় এক কোটি থেকে দুই কোটি পাউন্ডের মধ্যে ছিল বলে হিসাব করা হয়। ওই বিয়ের সময়কালে সন্ত্রাসবাদবিরোধী তৎপরতা উচ্চপর্যায়ে ছিল। এখনকার বিয়েটি যদিও রাজধানী লন্ডনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে না, তারপরও হিসাবকৃত খরচ অনেক বেশি এই কারণে যে, গত ১৮ মাসে বিভিন্ন হামলার ঘটনায় যুক্তরাজ্যজুড়ে উচ্চ সতর্কতা জারি আছে, পাশাপাশি প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর সম্পর্কের কারণে ঝুঁকি আরও বেড়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিয়ের দিন উইন্ডসর ক্যাসলে উৎসবে যোগ দিতে আসা দুই হাজারেরও বেশি সাধারণ মানুষের জন্য করা নিরাপত্তা পরিকল্পনা। নিরাপত্তার এসব খরচ ব্রিটিশ করদাতাদেরই বহন করতে হবে। ট্যাক্সপেয়ার্স এ্যালায়েন্সের নীতি বিশ্লেষক ডানকান সিম্পসন বলেছেন, রাজকীয় বিয়েটি যুক্তরাজ্যের একটি উত্তেজনাকর সময়। এই দিনটিতে নবদম্পতি এবং অন্যান্য যারা উইন্ডসরে আসবেন তারা যেন গণউৎসবের এই আবহে নিরাপদ বোধ করেন তার জন্য সবচেয়ে কম খরচে সব ধরনের নিরাপত্তা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিয়ের বাকি খরচ রাজপরিবার তাদের নিজেদের তহবিল থেকে দেবে। তবে বিয়ের দিন তারা যেহেতু জনগণের কাছ থেকে তহবিল গ্রহণ করবে তাই করদাতারা এই বিয়ের জন্য মোট কত টাকা ব্যয় করবেন তা নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে গেছে। এই বিয়েতে মার্কেলের সৎভাই থমাস মার্কেল জুনিয়র ও তার সাবেক স্ত্রী ট্র্যাসি ডুলেই ও ছেলে টেইলারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তারা ব্রিটেনের বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ ব্যাপারে সাক্ষাতকার দিয়ে বেড়াচ্ছেন। ২০১৬ সালে হ্যারি ও মার্কেলের পরিচয় হয়। তখন মার্কেলের বয়স ছিল ৩৪ বছর। ২০১৩ সালে প্রথম স্বামীর সঙ্গে মার্কেলের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে।
×