ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তামণির হাতের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে, পরিবার হতাশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৯ মে ২০১৮

মুক্তামণির হাতের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে, পরিবার হতাশ

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ ধীরে ধীরে মুক্তামণির হাতের অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। ভাল নেই সাতক্ষীরার ১২ বছরের শিশু মুক্তামণি। ব্যথার যন্ত্রণায় প্রতিনিয়ত তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। তার কান্নার শব্দে এলাকাবাসীও বুঝতে পারে হয়ত হাতের যন্ত্রণা বেড়েছে মুক্তার। আগের চেয়ে তার হাতটি এখন আরও ফুলে গেছে। ১০ দিন আগে হাতের নিচের অংশ দিয়ে জমাটবাঁধা রক্ত বের হওয়া শুরু করে মুক্তার। সেই অংশটি ড্রেসিং করার সময় আঙুল দিয়ে ৩৮টি বড় পোকা বের হয়ে আসে। এসব দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে তার পরিবার। মুক্তার বাবা ইব্রাহিম হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, ‘আমার মেয়েটার অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। আমরা তার ভাল হওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছি। এখন শুধু আল্লাহ ভরসা।’ এদিকে মুক্তার হাতের অবস্থা খারাপ দেখে ১৫ দিন আগে ডাঃ সামন্ত লাল সেনের ফোনে কল করেন ইব্রাহিম। এ সময় ডাক্তার মুক্তার দুটি ছবি পাঠাতে বলেন। পরে ডাক্তার শারমিন সুমির ইমোতে দুটি ছবি পাঠান ইব্রাহিম হোসেন। ছবি দেখে হাতের অবস্থা খারাপ বলে জানান ডাক্তাররা। তবে পুনরায় ঢাকা আসার ব্যাপারে কিছু বলেননি তারা। ইব্রাহিম হোসেন বলেন, হাসপাতাল থেকে যে ব্যান্ডেজ করে দেয়া হয়েছে সেটি খোলা যায়। রিলিজ দেয়ার সময় আমাকে বলে দেয়া হয়েছিল মাঝে মধ্যে যেন সেটি খুলে পরিষ্কার করে দেই। যখনই খুলে দেই কিছুক্ষণ পর দেখি হাতটি ফুলে গিয়ে মোটা হয়ে যায়। ওটা না খুলে দিলে হাতটি পচে যাবে। তিনি আরও বলেন, দুই দফায় অপারেশনে হাতটি থেকে যা কিছু অপসারণ করা হয়েছে তা ইতোমধ্যে পূরণ হয়ে গেছে। এখন আরও গন্ধ বেড়েছে। প্রতিনিয়ত রক্ত পড়ছে। পোকা বের হওয়ার পর এলাকার ছেলেমেয়েরা তার কাছে আর ভয়ে যেতে চায় না। গত বছরের ২২ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পর আর তাকে নিয়ে আসা হয়নি ঢাকায়। এর মধ্যে কয়েকবার বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রকল্প পরিচালক ডাঃ সামন্ত লাল সেন ও ডাক্তার শারমিন সুমির সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন মুক্তার বাবা ইব্রাহিম হোসেন। ‘সম্ভবত মুক্তার এ হাত আর ভাল হবে না। মুক্তার সংবাদ প্রচার করার পর ডাক্তাররা অনেক গুরুত্ব দিয়েছেন মুক্তাকে। তারা তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন। তাদের যে আন্তরিকতার কমতি ছিল না, তা আমি নিজেও দেখেছি। প্রধানমন্ত্রীও মুক্তার ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছেন। মুক্তা ভাল হলে নিয়ে যেতাম প্রধানমন্ত্রীকে দেখাতে। কিন্তু সে তো আর ভাল হবে না, সেটা তার হাত দেখেই বোঝা যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ১৫ মে সন্ধ্যায় ব্যান্ডেজ খুলে দেখি তার পুরো হাতটি পচে গেছে। গন্ধ বের হচ্ছে। বাড়িতে থাকা যাচ্ছে না। কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিরুপায় এই বাবা বলেন, ‘আমরা তার (মুক্তার) আশা ছেড়ে দিয়েছি।’ হাতের ব্যথায় অস্থিরও মুক্তামণি এখন আর আগের মতো পরিবারের কারও সঙ্গে কথাও বলে না। সবসময় মনমরা হয়ে শুয়েই সময় পার করছে সে। তার হাতের পচা গন্ধের তীব্রতার কারণে তার ভাই-বোনসহ এলাকাবাসী কেউই তার আশপাশে ভিড়ছে না। এসব দেখে মুক্তামণি নিজেও ঘাবড়ে যাচ্ছে বলে জানালেন তার মা। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ‘আমি আর মুক্তার বাবা মিলেই ওর হাত ড্রেসিং করি। এখন তো প্রায় প্রতিদিনই ড্রেসিং করতে হচ্ছে। ব্যান্ডেজ করা থাকলে আরও পচে গন্ধ বের হচ্ছে। মেয়েটা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ঠিকমতো খেতেও চায় না।’ দুই বছর বয়সে মুক্তার এ রোগের সূত্রপাত এবং সাড়ে নয় বছর বয়সে দেহের চেয়ে হাত মোটা হয়ে যায়। মুক্তামণিকে গত ১১ জুলাই ঢামেকের বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ায় এটি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। গত ২৫ জুলাই ঢামেকের বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডাঃ সামন্ত লালকে খবর দিয়ে ডেকে নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মুক্তামণির সার্বিক পরিস্থিতি জানতে চান। সব শুনে প্রধানমন্ত্রী মুক্তামণিকে প্রয়োজনে বিদেশ নেয়ার নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়ে ওই দিনই ঢামেকের পক্ষ থেকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ই-মেইল করে মুক্তার বিষয়টি জানানো হয়। ২৭ জুলাই প্রায় এক ঘণ্টার ভিডিও কনফারেন্সে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকেরা মুক্তামণিকে দেখেন। তার পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টগুলোও দেখানো হয়। সব কিছু দেখে তারা পরে আলোচনা করে জানানোর কথা বলেন। এরপর তারা ই-মেইল করে জানিয়েছেন, মুক্তামণির রোগ আরোগ্যযোগ্য বা দেহে অস্ত্রোপচার করার মতো নয়। ৩ আগস্ট ঢামেক পরিচালকের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, ঝুঁঁকি হলেও সকল প্রকার সতর্কতা অবলম্বন করে মুক্তামণিকে সুস্থ করার জন্য ঢামেকের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। ৫ আগস্ট বায়োপসি করা হয়। ৮ আগস্ট বায়োপসির রিপোর্ট আসে। রিপোর্ট পেয়ে চিকিৎসকরা জানান, মুক্তামণির শরীরে ক্যান্সার ছড়ায়নি। সে বিরল রোগেও আক্রান্ত নয়। মুক্তামণির রক্তনালী টিউমারে আক্রান্ত। এরপর ১২ আগস্ট তার দেহে প্রথম দফায় অস্ত্রোপচার করা হয়। ঢামেকে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন তার দেহে সাত থেকে আট দফায় অস্ত্রোপচার করা।
×