ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মেয়র সাঈদ খোকনের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বৈঠকে নির্ধারণ

রমজানে গরু-মহিষের মাংসের দাম ৪২০ ও খাসি ৭২০ টাকা

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১৫ মে ২০১৮

রমজানে গরু-মহিষের মাংসের দাম ৪২০ ও খাসি ৭২০ টাকা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রমজানে ঢাকাবাসীর জন্য দেশী গরুর প্রতি কেজি মাংসের সর্বোচ্চ মূল্য ৪৫০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। গরুর মাংসের দাম গতবছর রমজানের সময় বেঁধে দেয়া দামের মূল্যের চেয়ে ২৫ টাকা কম। একই সঙ্গে ভারতীয় গরুর মাংস প্রতি কেজি ৪২০ টাকা, মহিষের মাংস ৪২০ টাকা, খাসির মাংস ৭২০ টাকা এবং ভেড়া ও ছাগলের মাংস ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই মূল্য সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন বাজারগুলো ছাড়াও সুপার শপগুলোর জন্য প্রযোজ্য হবে। সোমবার নগর ভবনে মেয়র সাঈদ খোকনের সভাপতিত্বে দক্ষিণ সিটির মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এই দর নির্ধারণ করা হয়। এই দাম না মানলে মাংস বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন মেয়র। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ শেখ সালাহউদ্দিন। কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদার, গোলাম মর্তুজা মন্টু, শেখ আবদুল বারেকসহ মহানগর এলাকার মাংস ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিরা এ সভায় অংশ নেন। মেয়র জানান, উত্তর সিটি কর্পোরেশন এই দর মেনে চলবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, সাধারণত আমরা যে দর নির্ধারণ করি তারাও সেটাই করে। গত বছরও দুই সিটি কর্পোরেশনের মাংসের দাম একই ছিল। তিনি বলেন, এবার মাংসের দাম গতবারের চেয়ে একটু কম। আজকে এই নির্ধারিত দরই সর্বোচ্চ দর হিসেবে বিবেচিত হবে। কিন্তু বিভিন্ন সময় অভিযোগ আসে যে নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে মাংস বিক্রি করেন অনেকে। সিটি কর্পোরেশনের মূল্য তালিকা মানেন না। এবার কেউ বেশি রাখলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। মেয়র রমজানে জবাইখানায় সিটি কর্পোরেশনের বিধি অনুযায়ী স্বাস্থ্যসম্মত এবং হালাল উপায়ে পশু জবাই নিশ্চিত করা এবং পচা বাসি মাংস বিক্রি না করতে ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দেন। মেয়র বলেন, ডিজিটাল মেশিনে ওজন করা, মাংসের বর্জ্য অপসারণসহ দোকানের আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখা এবং মাংসের মূল্য তালিকা প্রদর্শন করার নিয়মও মানতে হবে। মেয়র আশা প্রকাশ করেন যে, প্রতি বছর রোজায় খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠলেও এবার বাজার সহনীয় থাকবে। আমরা বলতে পারি পণ্যমূল্য ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। অধিকাংশ পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। আশা করি এমনটা পুরো রোজাজুড়ে থাকবে। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে মেয়র বলেন, একটি মাস আমরা মুনাফা কম করলাম। এটা করলে হয়ত আল্লাহ আরও উন্নতি দিতে পারেন আমাদের ব্যবসায়। একটি মাস মাংসের মূল্য এবং গুণগত মান নিশ্চিত করি। ওজন যেন ঠিক দেই। সাধারণ ক্রেতা যেন না ঠকেন। এ বিষয়ে আমাদের ধর্মেও কঠোর অনুশাসন আছে। এ তিনটি জিনিস আমরা নিশ্চিত করি। গত বছর প্রতি কেজি দেশী গরুর মাংসের দাম ঠিক হয়েছিল ৪শ’ ৭৫ টাকা। এ ছাড়া ভারতীয় গরুর মাংস প্রতি কেজি ৪শ’ ৪০ টাকা, মহিষের মাংস ৪শ’৪০ টাকা, খাসির মাংস ৭শ’২৫ টাকা এবং ভেড়া ও ছাগলের মাংস ৬শ’ ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তার আগের বছর, অর্থাৎ ২০১৬ সালের রোজায় গরুর মাংস ৪শ’২০, মহিষ ৪ শত, খাসি ৫শ’৭০, ভেড়া ও ছাগলের মাংস ৪শ’ ৭০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রবিউল আলম দাবি করেন, ব্যবসায়ীরা ওজনে মাংস কখনও কম দেন না। সিটি কর্পোরেশন যে মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে তা মেনে চলার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, রমজানে রাজধানীর মাংসের বাজার স্থিতিশীল থাকবে। আমরা যে কোন মূল্যে এটা মেনে চলার ব্যবস্থা করব। তবে কোন আধুনিক জবাইখানা নাই বলে মাংসের মান নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতায় গাবতলী পশুরহাটে মাংস ব্যবসায়ীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, এর পেছনে ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা জড়িত। একটি গরুর হাটের জন্য আমরা বেইজ্জতি হচ্ছি। ইজারাদারের সন্ত্রাসীরা মাংস ব্যবসায়ীদের বেঁধে রাখে। রাতের আঁধারে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে। আর ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা লুটের টাকার অংশ নিচ্ছেন, কোটি কোটি টাকার মালিক হচ্ছেন। মেয়রের উদ্দেশে রবিউল আলম বলেন, গাবতলীর সন্ত্রাসীদের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করুন। আপনি উত্তরের মেয়রকে একটা ফোন করুন। আমাদের অন্য কোন দাবি নাই। সরকার যে রেট নির্ধারণ করে দিয়েছে আমরা সেই রেটে টাকা জমা দিতে চাই। এটা করলে তিন শ’ টাকা কেজি মাংস বিক্রি করা সম্ভব। মাংস ব্যবসায়ীরা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় একটি স্থায়ী গরুর হাট করার দাবি জানালে মেয়র সাঈদ খোকন তা করে দেয়ার আশ্বাস দেন। কামরাঙ্গীরচরে একটি পশুর হাট করার জন্য প্রস্তাব দেয়া আছে। এটা আমার কাছে গেলে আমি অনুমোদন দিয়ে দেব।
×