ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী ও জয়কে অভিনন্দন

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৫ মে ২০১৮

মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী ও জয়কে অভিনন্দন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পুত্র (প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা) সজীব ওয়াজেদ জয়কে অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই অভিনন্দন জানানো হয়। এছাড়া মন্ত্রিসভা পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের নাম বদল করে নতুন নাম ‘পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়’ করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। পাশাপাশি শর্তসাপেক্ষে ৩২৪৭টি গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং অন্যান্য কর্মকর্তা। তিনি বলেন, একই সঙ্গে অর্থমন্ত্রী একটা অভিনন্দন প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। এই প্রস্তাব হলো- মহাশূন্যে বাংলাদেশের নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-১ সফলভাবে উৎক্ষেপণ এবং বাংলাদেশ বিশ্বে ৫৭তম স্যাটেলাইট ক্ষমতাধর দেশ হিসেবে মর্যাদা পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী ও তার সুযোগ্য পুত্রকে অভিনন্দন জ্ঞাপন। মন্ত্রিসভা অভিনন্দন প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্যাটেলাইটের একটি রেপ্লিকাও তুলে দেয়া হয়। বাংলাদেশের প্রথম যোগাযোগ কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু-১’ উৎক্ষেপণ করা হয় গত শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ২টা ১৪ মিনিটে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে মার্কিন কোম্পানি স্পেসএক্স-এর সর্বাধুনিক রকেট ফ্যালকন-৯ স্যাটেলাইটটি নিয়ে কক্ষপথের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন ॥ বদলে গেল পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের নাম। এই মন্ত্রণালয়ের নতুন নাম ‘পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়’ করা হয়েছে। সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা আগে থেকেই প্রস্তাব হয়ে আসছে। আশপাশের দেশগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের নামের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন যুক্ত করা হয়েছে। এখন এই মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়’ অনুমোদন করা হয়েছে। এর ইংরেজী নাম হবে ‘মিনিস্ট্র অব এনভায়রনমেন্ট, ফরেস্ট এ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ’। তিনি বলেন, জলবায়ু একটি বড় বিষয়, এজন্য পরিবর্তনটাকে সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। কী কারণে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে, এতে কী সুবিধা হবে- জানতে চাইলে শফিউল আলম বলেন, সারাবিশ্বেই এখন ক্লাইমেট চেঞ্জ (জলবায়ু পরিবর্তন) আলোচনায় চলে আসছে। প্রকৃতিতেও চেঞ্জ চলে এসেছে। ঝড়, বৃষ্টি, আগাম বন্যা; কত রকমের প্রাকৃতিক চেঞ্জ আমরা এমনি দেখতে পাচ্ছি। সেটা এখন শুধু বাংলাদেশে না সারা বিশ্বেই প্রাকৃতিক পরিবর্তন অটোমেটিক্যালি চলে এসেছে। এজন্য এই বিষয়টি এখন আর বাংলাদেশের সাবজেক্ট নয়। সারাবিশ্বেই ক্লাইমেট চেঞ্জ বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে। বাংলাদেশ কিন্তু ক্লাইমেট চেঞ্জের ক্ষেত্রে পাইওনিয়ার। কারণ যখন কেউ ক্লাইমেট ফান্ড করার জন্য টাকা দেয়নি তখন আমাদের সরকারের নিজস্ব টাকা দিয়ে ক্লাইমেট ফান্ড তহবিল গঠন করা হয়। আমরা সেটা দিয়ে শুরু করি। দাতাদের বা পার্টনারদের টাকা দিয়ে শুরু করিনি। এটা দিয়ে অনেক দুর্যোগ মোকাবেলা করা হচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মন্ত্রণালয়ের নামে ক্লাইমেট চেঞ্জ শব্দটি থাকলে ক্লাইমেট চেঞ্জ সংক্রান্ত যেসব এ্যাকটিভিটিস আসবে সেগুলো আমরা এ্যাড্রেস করতে পারব। শর্তসাপেক্ষে ৩২৪৭টি গাছ কাটার অনুমতি মন্ত্রিসভার ॥ আমদানি করা তেল খালাসে স্থাপনা (সিঙ্গল পয়েন্ট মুরিং) নির্মাণের জন্য কক্সবাজার ও স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য গাজীপুরে শর্তসাপেক্ষে সংরক্ষিত বনভূমির ৩ হাজার ২৪৭টি গাছ কাটার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, কক্সবাজারের মহেশখালীতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের সিঙ্গল পয়েন্ট মুরিং করা হচ্ছে। ওখানে বনে কিছু গাছ আছে সেগুলো কর্তনের অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। ১৯১ দশমিক ২৫ একর বনভূমি লিজ নিয়েছে ইস্টার্ন রিফাইনারি, সেখানে প্রায় এক হাজার ৭০১টি গাছ আছে। বিভিন্ন রকমের বেত জাতীয় ঝোপঝাড় আছে, এগুলোর জন্য কয়েকটা শর্ত দিয়ে ব্যবহারের অনুমতি ওনারা (বিপিসি) পেয়েছেন। একটা হচ্ছে, ভূমি ব্যবহারের জন্য ফিক্সড ডিম্যান্ড চুক্তির মাধ্যমে প্রতিবছর একর প্রতি ২ হাজার ৪০০ টাকা রাজস্ব দেবে বিপিসি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আর বনজ সম্পদের ক্ষতিপূরণ বাবদ এক কোটি ৩৬ লাখ ৭৪ হাজার ৯৪৯ টাকা দিতে হবে। এই টাকা বিপিসি অলরেডি পরিশোধ করে ফেলেছে। তিন নম্বর শর্ত তুলে ধরে শফিউল আলম বলেন, যে পরিমাণ গাছের ক্ষতি হলো এর পাঁচগুণ গাছ বন অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে বিপিসি রোপণ করবে। সেটা আগামী ১০ বছরের জন্য মেইনটেইন করবে তারা। এসব শর্তে তাদের (গাছ কাটার) অনুমতি দেয়া হয়েছে। মহেশখালী পাহাড় মৌজায় ১৯১ দশমিক ২৫ একর জমিনে যে গাছ কাটা হবে সেগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ গাছ নয় জানিয়ে তিনি বলেন, যেমন বটগাছ, লালী, বাদাম, বরই, কাউফল, শিমুল, ছাতিয়ান, কদম, সোনালু; এ রকম বিভিন্ন জাতের গাছ। খুব দামী গাছ না। বনের মধ্যে বিপিসির স্থাপনাটির ধরন তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ইস্টার্ন রিফাইনারি আমদানিকৃত অপরিশোধিত জ্বালানি পাইপলাইনের মাধ্যমে এনে তারপরে ওটা রিফাইন করে। চট্টগ্রামে যেভাবে আছে মহেশখালীতেও সে রকম করা হচ্ছে। নদীর ধারে জমি থাকতে হয় যেখানে জাহাজে করে তেলটা আসবে। সেটা পাইপ দিয়ে রিফাইনারিতে আনা হবে, এসব সিস্টেমের জন্য এই জায়গাটা নেয়ার প্রয়োজন হয়েছে, হয়ত বিকল্প পাওয়া যায়নি। এছাড়া গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য সংরক্ষিত বনভূমির গাছপালা কর্তন ও অপসারণের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সেখানে দুই একর ৩৪ শতক জমি। এখানেও সামাজিক বনায়নের বিভিন্ন প্রজাতির এক হাজার ৫৪৬টি গাছ আছে। কাঁঠাল, জাম, আম, তাল, গামারি, বাঁশ জাতীয় গাছ রয়েছে। এটার মেয়াদ পূর্তিতে সম্ভাব্য মূল্য হচ্ছে ২৩ লাখ ৬৬ হাজার ৯৬ টাকা। এখানে আকাশমনি গাছ এক হাজার ৪০০টি, অন্যান্য প্রজাতির ১৪৬টি গাছ কাটার জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, অনুমতিতে বলা হয়েছে- যেহেতু স্টেডিয়ামের জন্য নেয়া হচ্ছে। স্টেডিয়াম ছাড়া ওই জমি অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা যাবে না। মন্ত্রিসভার আলোচ্য বিষয় ছিল গাছ কাটার অনুমতি দেয়া। জমিটা ছিল সংরক্ষিত বনের। আর গাছগুলো ছিল সামাজিক বনায়নের। যারা ক্ষতিগ্রস্ত তারা নীতিমালা অনুযায়ী টাকা পাবেন। সামাজিক বনায়নে যারা গাছ লাগান তারা এর ৭০ শতাংশ এবং অন্যরা ৩০ শতাংশ পেয়ে থাকেন। নূরউল-মাইদুল ইসলামের মৃত্যুতে মন্ত্রিসভার শোক ॥ বিশিষ্ট লেখক ও জাতীয় অধ্যাপক মুস্তাফা নূরউল ইসলাম ও কুড়িগ্রাম-৩ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম মাইদুল ইসলামের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, মন্ত্রিসভা বৈঠকে দুটি শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। বিশিষ্ট লেখক, গবেষক, ভাষা সৈনিক ও জাতীয় অধ্যাপক, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বুদ্ধিজীবী মুস্তাফা নূরউল ইসলামের মৃত্যুতে মন্ত্রিসভা একটি শোক প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, এছাড়া সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির বর্তমান নির্বাচিত এমপি মাইদুল ইসলামের মৃত্যুতেও মন্ত্রিসভা শোক প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। গত ৯ মে মুস্তাফা নূরউল ইসলাম ৯১ বছর বয়সে মারা যান। অন্যদিকে গত ১০ মে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যান মাইদুল ইসলাম। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। সচিবালয়ে নতুন স্থানে মন্ত্রিসভা বৈঠক ॥ সচিবালয়ে ১ নম্বর ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় গত বছরের আগস্ট থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠক হচ্ছে। আগে ১ নম্বর ভবনের চতুর্থ মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে মন্ত্রিসভা বৈঠক হতো। এরপর সচিবালয়ে ৬ নম্বর ভবনের (২০ তলা ভবন) ১৩ তলায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ কক্ষ প্রস্তুত করা হয়। ওই ফ্লোরে থাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অফিস নতুন নির্মাণাধীন ভবনে সরিয়ে নেয়া হয়। আট মাস পর ফের সচিবালয়ে শুরু হয়েছে মন্ত্রিসভা বৈঠক। সোমবার ৬ নম্বর ভবনের ১৩ তলায় মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়। বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের বলেন, আমরা একটি নতুন রিনোভেটেড রুমে আজকের সভাটা করেছি। এজন্য পূর্তমন্ত্রী মহোদয় সবাইকে ফুল দিয়ে বরণ করেন।
×