ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যালয় বন্ধ নয়

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৩ মে ২০১৮

বিদ্যালয় বন্ধ নয়

আনন্দ স্কুলের কয়েক লাখ শিশুর লেখাপড়া বন্ধ হতে চলেছেÑ এমন একটি দুঃসংবাদ ছাপা হয়েছে শুক্রবার। সাম্প্রতিককালে প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধন হয়েছে। এমন একটি প্রেক্ষাপটে কোন স্কুলের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং লাখ লাখ শিশুর কলকাকলি স্তব্ধ হয়ে যাওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক সংবাদ। আনন্দ স্কুলের প্রকল্পে ছিন্নমূল ও প্রান্তিক শিশুরাই শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। আমাদের প্রতিবেদকের লেখায় উঠে এসেছে সার্বিক চিত্র। তাতে দেখা যাচ্ছে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার সঙ্কট ও বিদেশী অনুদান প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তার কারণে অচলাবস্থার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে : আনন্দ নেই প্রাথমিক স্তরের শিশুদের ‘আনন্দ স্কুল’ শিক্ষা কার্যক্রমে! একদিকে নানা অনিয়মের কারণে শত শত স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়া, অন্যদিকে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার সময় সামনে আসায় সঙ্কটের মুখে পড়তে যাচ্ছে ঝরে পড়া, নদীভাঙ্গন ও চরাঞ্চলের বিদ্যালয়ের হাজার হাজার গরিব শিশু। আগামী ডিসেম্বরে শেষ হয়ে যাচ্ছে প্রকল্পের মেয়াদ। অথচ প্রায় দেড় লাখ শিশু এখন পড়ালেখা করছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীতে। ডিসেম্বরে মেয়াদ শেষ হলে পঞ্চম শ্রেণীও শেষ হবে না প্রায় এক লাখ শিশুর। এ অবস্থায় অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধসহ শিশুদের কথা চিন্তা করে অন্তত এক বছর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর দাবি তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। আনন্দ স্কুলের প্রকল্প পরিচালক সূত্রে জানা গেছে, আগামী ডিসেম্বরে শেষ হবে প্রকল্পের মেয়াদ। কিন্তু যে অবস্থা তাতে শিশুদের শিক্ষাচক্র বা সাইকেল (প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে পঞ্চম শ্রেণী শেষ করা) শেষ করতে অন্তত এক বছর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো জরুরী। দেশে কোন ধরনের বিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাক এটা প্রত্যাশিত নয়। তবে আনন্দ স্কুলের ক্ষেত্রে এমন সব অভিযোগ উঠেছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রকল্পের কর্মকর্তারা দেশ-বিদেশে ভ্রমণ, কর্মশালা, সভা-সমাবেশের নামে ভুয়া ভাউচার বানিয়ে অর্থ লোপাট করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। উল্লেখ্য, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া, নদীভাঙ্গন ও চরাঞ্চলের বিদ্যালয়বহির্ভূত শিশুদের শিক্ষার আওতায় আনতে প্রাথমিক এবং গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৩ সালে পাঁচ বছর মেয়াদে রিচিং অডিট অব স্কুল চিলড্রেন বা পর্যায় প্রকল্পটি চালু করা হয়, যা ‘আনন্দ স্কুল’ নামে পরিচিত। যেসব শিশু বিদ্যালয়ে যেতে পারেনি তাদের দ্বিতীয়বারের মতো লেখাপড়ার সুযোগ তৈরি করতে রস্ক প্রকল্পে দাতা সংস্থা হিসেবে বিশ্বব্যাংকের ১০ হাজার ৮৫২ কোটি ৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং সরকারী তহবিল থেকে ৫৮০ কোটি ৮৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। যার বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরকে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিছু লোভী মানুষের অপচয় ও অর্থ আত্মসাতের কারণে আনন্দ স্কুলের মতো একটি সুন্দর উদ্যোগ কিছুতেই মুখ থুবড়ে পড়তে পারে না। দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী। সেই সঙ্গে সমাজে আনন্দ স্কুলের মতো কার্যক্রম চালু থাকা অত্যাবশ্যক। আমরা আশা করব স্কুল বন্ধ নয়, বরং এই কার্যক্রম কিভাবে সচল থাকতে পারে সে ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণে সংশ্লিষ্টরা আন্তরিকভাবে উদ্যোগী হবেন। দুর্গম এলাকার দুস্থ পরিবারের শিশুদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতেই হবে।
×