ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষমতার ধারাবাহিকতা ছিল বলেই এই অর্জন ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৩ মে ২০১৮

ক্ষমতার ধারাবাহিকতা ছিল বলেই এই অর্জন ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে উচ্চ মর্যাদার স্থানে পৌঁছেছে মন্তব্য করে বলেছেন, স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে আমরা উচ্চ মর্যাদা পেয়েছি। ক্ষমতার ধারাবাহিকতা ছিল বলেই এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। দেশের অব্যাহত অগ্রগতির পথে এটি একটি নতুন মাইলফলক। বাংলাদেশের জনগণ নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। আবার নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিল বলেই আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে পেরেছে। আর সরকার গঠন করে বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপকভাবে কাজ করেছে। সরকারের ধারাবাহিক কাজের ফলেই আমরা বাংলাদেশকে আজকে মহাকাশ পর্যন্ত নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি। শনিবার রাজধানীর মুগদায় আন্তর্জাতিক নার্সেস দিবস এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এ্যাডভান্সড নার্সিং এডুকেশন এ্যান্ড রিসার্চের (এনআইএএনইআর) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়েছে অত্যন্ত সফলভাবে। বাংলাদেশ এখন মহাকাশে অবস্থান করছে। মহাকাশে উপগ্রহ পাঠানোর তালিকায় ৫৭তম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ নিজের অবস্থান করে নিয়েছে। বাংলাদেশকে আজকে মহাকাশ পর্যন্ত নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি। শুধু তাই নয়, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশ যাতে এগিয়ে যেতে পারে এবং এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে শুধু যে চিত্তবিনোদন হবে তা নয়, এটা আমাদের সার্বিকভাবে কাজে লাগবে। এটাকে বিভিন্ন ক্ষেতে আমরা ব্যবহার করতে পারব। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের বিবিধ ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের শিক্ষা, বিনোদন, চিকিৎসা সেবা, আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রেই আমরা এখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারব। আর ডিজিটাল বাংলাদেশ যে আমরা গড়ে তুলেছি- সারা বাংলাদেশে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে যে ইন্টারনেট সার্ভিস আমরা দিচ্ছি সেটা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আমাদের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে দ্বীপাঞ্চলে আমাদের এই সেবাটা পৌঁছে দিতে পারব। এখন থেকে স্পেস অন্যান্য দেশকে ভাড়া দিয়ে আমরা বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করতে পারব। সেই সুযোগটাও আমাদের রয়েছে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে এখন সারা বাংলাদেশে এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলে, পাহাড়ি অঞ্চলে, চরাঞ্চলে ও দ্বীপাঞ্চল থেকে শুরু করে সমগ্র অঞ্চলেই এই সেবাটা পৌঁছে দিতে পারব। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, কোইকা সহসভাপতি কিয়াংগুন সুল, কোইকার সাউথ এশিয়া এ্যান্ড প্যাসিফিক এ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর মহাপরিচালক ইয়ো ইয়ং কিং, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মোঃ সিরাজুল হক খান বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে মুগদায় নার্সিং ইনস্টিটিউট হওয়ার প্রেক্ষিতে সেখানে একটি মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি স্থাপনের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী দাবি তুললে প্রধানমন্ত্রী সাবের চৌধুরীকেই এখানে ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আহ্বান জানান। বিভাগীয় শহরগুলোতে সরকারী উদ্যোগে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করা হচ্ছে এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এখন বেসরকারী খাতটাকেই উš§ুক্ত করা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এখানে বেসরকারী উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় করা হলে সব রকম সহযোগিতা করবেন বলেও জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে রোগীদের উন্নত চিকিৎসা দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে রোগ নির্ণয়ের আধুনিক যন্ত্রপাতি পরিচালনার জন্য দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দিয়ে বলেন, একটা বিষয় আমরা দেখি রোগ নির্ণয়ের (ডায়াগনসিস) ব্যাপারে কেন যেন কোথায় একটা বিরাট ভুল হয়ে যায়। যদিও যন্ত্রপাতি এখন অনেক উন্নত। তবে, সেগুলো পরিচালনার জন্য দক্ষ লোকের অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, অনেক মডার্ন মেশিন এখন, সেগুলো চালানোর মতো বা রিডিং করার মতো বা দেখার মতো সেই ধরনের স্কিল্ড মানুষ তৈরি করা প্রয়োজন। সেখানে কি করতে হবে, আমার মনে হয় আপনারা সেভাবেই ব্যবস্থা নেবেন। আপনারা উদ্যোগ নিয়ে কি করতে হবে বলেন, আমরা করে দেব। কোন অসুবিধা নেই। শেখ হাসিনা বলেন, এই বিষয়টার সুরাহা হওয়া দরকার নইলে আমাদের একজন কেউ রোগী হলেই দৌড়াতে হবে সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, থাইল্যান্ড, ইন্ডিয়া অমুক জায়গায়, কেন? আর তারা ভালভাবে যদি পারে, আমরা কেন পারব না? এই প্রশ্নটাই বারবার আমার মনে হয়। তাই আমাদেরও পারতে হবে। সমমানের সমমর্যাদার চিকিৎসাসেবা আমরাও দিতে পারব। সেই অভিজ্ঞতা, সেই শক্তিটা আমাদের অর্জন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষকে সেবা দেয়ার মনোভাবটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। কাজেই আমাদের নার্স, ডাক্তার এবং সংশ্লিষ্ট যারা তাদের মনে সব সময় এই কথাটাই থাকতে হবে; মানুষ যখন রোগী হয়ে আসে তখন ওষুধের থেকেও ডাক্তার-নার্সদের ব্যবহার, তাদের কথাবার্তা এবং তাদের সহানুভূতিশীল মনোভাব থেকেই কিন্তু অর্ধেক রোগ ভাল হয়ে যেতে পারে। আর আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধটা এটাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশে রোগীর তুলনায় ডাক্তার ও নার্সদের অপ্রতুলতার বাস্তবতা স্বীকার করে নিয়েই ডাক্তারদের একটু সংযত হবার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আপনাদের একটু সংযত হতে হবে। দিনেরবেলা সরকারী চাকরি করবেন। আর রাতে গিয়ে প্রাইভেট করবেন তারপর তো মেজাজ এমনিতেই খারাপ হবে, সেটা স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে আমার মনে হয় আপনারা একটু হিসেব করে, যতটা ধারণ করতে পারেন ঠিক ততটাই করবেন। চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে সরকারী- বেসরকারী উদ্যোগে সরকার হাসপাতাল করে দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এসব হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষের প্রতি নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাসপাতালগুলোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকা উচিত। এটা কিন্তু এখনও আমাদের উন্নত হয়নি। এদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। নইলে রোগ তো ছড়াতেই থাকবে। এটা সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসা সেবায় নার্সিং একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই সেবা হওয়া উচিত বিশ্বমানের। এ দর্শন থেকেই ২০১০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় রাষ্ট্রীয় সফরের সময় আমি কোরিয়ার প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশের নার্সিং শিক্ষা ও সার্ভিসের উন্নয়নে সহযোগিতার অনুরোধ জানাই। তিনি বলেন, জানুয়ারি ২০১৬ থেকে মাস্টার্স ইন নার্সিং ও নার্সিংয়ের বিভিন্ন বিষয়ে রিসার্চ কোর্স চালু করা হয়। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী কোরিয়া সরকার এবং কোইকা-কে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস, এই ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে বাংলাদেশের নার্সিং শিক্ষা ও সেবার মান আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হবে। শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার জাতির পিতার দর্শনকে ধারণ করে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে গত ৯ বছরে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করেছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা প্রণীত নার্স ও চিকিৎসকের অনুপাত ২:১ অর্জনের লক্ষ্য বাস্তবায়নের উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে এবং ইতোমধ্যে নার্সদের পদ ২য় শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়েছে। বিদ্যমান ৭টি নার্সিং ইনস্টিটিউটকে কলেজে উন্নয়ন এবং নার্সিং পরিদফতরকে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরে উন্নীত করা হয়েছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী। নার্স এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের কল্যাণে সরকারের নানা পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারী চাকরিতে প্রবেশে সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগের বয়সসীমা ৩৬ বছর করা হয়েছে। ৩ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্সসহ ব্লেন্ডেড ওয়েববেজড মাস্টার্স এবং পিএইচডি প্রোগ্রাম অন সেক্সুয়াল, রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ এ্যান্ড রাইটস কোর্স চালু করা হয়েছে এবং ২০ তলা বিশিষ্ট নার্সিং ও মিডওয়াইফারি ভবন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা এ পর্যন্ত মোট ১৫ হাজার ৪৪৫ সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগ প্রদান করেছি। আরও ৫ হাজার সিনিয়র স্টাফ নার্স এবং ১ হাজার ২০০ মিডওয়াইফ নিয়োগের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে। তিনি বলেন, তার সরকার গত ৯ বছরে নতুন ১৩ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছে এবং আরও ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগের লক্ষ্যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্তরে উন্নীত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলায় তাঁর রাজনৈতিক অঙ্গীকারও ভাষণে পুনর্ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী ১২ মে আধুনিক নার্সিংয়ের প্রবর্তক মহীয়সী নারী ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের জš§দিন হওয়ায় তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
×