ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ১২ মে ২০১৮

বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট

আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাকাশ জয় তো বটেই, বিশ্ব জয় করতে চলেছে বাংলাদেশ। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত জাতির পিতার স্বপ্নের বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে আজ রাতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশ ছুচ্ছে এবং পরিভ্রমণ করতে শুরু করবে ৩৬০০ কিলোমিটার ওপর দিয়ে মহাকাশে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মূলত যোগাযোগের ক্ষেত্রে কাজ করবে। বিশেষ করে টেলিভিশন সম্প্রচার, ইন্টারনেট কার্যক্রম, ভি- সেট ও বেতার, ই- সেবা প্রতিরক্ষাসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা পাওয়া যাবে। এতে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে যার মধ্যে ২০টি বাংলাদেশ নিজস্ব প্রয়োজনে রেখে বাকি ২০টি ভাড়া দেয়ার পরিকল্পনা করেছে। যে কোন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে টেরিস্টোরিয়াল অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট দিয়ে তা সচল রাখা হবে। দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। ভিডিও কনফারেন্সিং, ই-শিক্ষা, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, অপরাধী শনাক্ত, পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট সার্ভিস, ইত্যাদি নানা কাজে এ স্যাটেলাইট কাজে লাগবে। স্যাটেলাইটের সেবা চালু হলে তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি খাতে দ্রুত এগিয়ে যাবে এবং বাণিজ্যিকভাবেও লাভবান হবে বাংলাদেশ। এই স্যাটেলাইট নির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। বরং অন্যান্য বিষয়ের মতো জিয়া, এরশাদ, খালেদার জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে থাকে। আর কাজ এগোয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটা একটা করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে চলেছেন। সর্বশেষ কাজ হলো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর উৎক্ষেপণ। স্যাটেলাইটটি নির্মাণ করা হয় ফ্রান্সে এবং নির্মাণের পর বিশেষ কার্গো বিমানে করে আমেরিকার ফ্লোরিডায় পাঠানো হয়। এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আজ বাংলাদেশ সময় রাতে লঞ্চিং প্যাড থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে একটি জায়গা থেকে উৎক্ষেপণের দৃশ্য সরাসরি উপভোগ করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পুত্র ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা (অবৈতনিক) প্রখ্যাত তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সজীব ওয়াজেদ জয় ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। তাদের মধ্যে থাকছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জোনায়েদ আহমেদ পলক, বিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ প্রমুখ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মন্ত্রী পরিষদের সদস্যরা ঢাকায় এ দৃশ্য প্রদক্ষিণ করবেন। বিটিভি সরাসরি দেশব্যাপী প্রচার করবে। এতদিন অন্যের স্যাটেলাইট ভাড়া করে আমাদের প্রয়োজন মেটাতে হতো। এ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর থেকে আমাদের প্রয়োজন মিটিবে, খরচও বাঁচবে, পরন্তু অন্য দেশের কাছে ভাড়া দিয়ে অনেক টাকা আয় করতে পারব। বিএনপি নেতারা এখন কি বলবেন? কী বলে ভোট চাইবেন? তাদের বলার কিই বা আছে? কোনদিন ছিলও না। বিএনপির মিথ্যের ঢোল মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এতদিন পিটিয়েছেন, নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় অফিসের পাহারাদার কোলাব্যাঙ একচেটিয়া ব্যাটি করছেন। এখন মাঠে নেমেছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য শ্রমিক আন্দোলনের নেতা নজরুল ইসলাম খান। এদের বাইরে সিকি-আধুলি বকবক করেই চলেছে : ক. বিএনপির পক্ষে ভোটের জোয়ার বইছে খ. খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠিয়ে সরকার বিএনপির ভোট বাড়িয়ে দিয়েছে গ. এই মূহূর্তে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের জামানত থাকবে না। ঘ. এমনি আরও কত কি? ঙ. টক শোতে বসে কতিপয় নারী নেত্রী বলছেন কয়েক বছরে সরকারের লোকেরা নাকি সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে? প্রথমেই আমি শেষের অভিযোগটি ব্যাপারে প্রশ্ন তুলতে চাই? যিনি এই অভিযোগটি করলেন (সম্ভবত বিএনপি নেত্রী রুমিন) তিনি কি দয়া করে ব্যাংক, ব্যক্তি ও কে কত পাচার করেছে তার তথ্য দেবেন? আমি বলতে পারি দেবেন না। এমনই দল ও নেতা নেত্রী যে কোন মিথ্যে অবলীলায় বলে যেতে পারেন। কারণ তারা জানেন কোন জবাবদিহি করতে হবে না। যেমন দুর্নীতির দায়ে ৭+১০=১৭ বছর সাজাপ্রাপ্ত এবং লন্ডনে পলাতক খালেদা পুত্র তারেককে সাজাপ্রাপ্ত হবার পরই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়েছে। তাও দলের গঠনতন্ত্রে ৭ ধারা বিলীন করে দিয়ে। ৭ ধারায় ছিল কোন দুর্নীতিবাজ ও অন্যান্য ফৌজদারি অপরাধে অপরাধী ব্যক্তি বিএনপির সদস্য হবেন না, নমিনেশন পাবেন না। তারেকের দুর্নীতি তো আইনের আদালতেই প্রমাণিত। তারপরও তাকে নেতা বানানো হলো। বেগম খালেদা জিয়া এখন ৫ বছরের দ- নিয়ে কারাগারে। বিএনপির কোন নেতা-কর্মীকে জিজ্ঞেস করলে বলবেন খালেদা জিয়া তো ফিরিশতা মতো, দেখছেন না চেহারা কত সুন্দর। অথচ এই মহিলাই প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে লাখ লাখ টাকা জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করেছেন। এমনকি তার অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানও। বিএনপির মিথ্যের বেশাতি কারও কাছে অজানা নয়। বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছেও না। তবু তারা ডিফেন্ড করবেই। তবে একবার হাতেনাতে ভাল ধরা খেয়েছিল। ২০১৩ সালে হেফাজতের তা-বের রাতে পুলিশের এ্যাকশনে নাকি- আড়াই হাজার লোক মারা গেছে বলে কেউ বলেছিলেন। কেউ বলেছেন ৬২ জন। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু চ্যালেঞ্জ দেন এই আড়াই হাজার বা ৬২ জনের নাম ঠিকানা দিতে। দিতে তো পারেননি, উল্টো চেপে গেছেন। যে ক’জনের নাম দিয়েছেন তাদের কারও কারও ঠিকানায় গিয়ে দেখা গেছে তারা জীবিত। এই তো বিএনপি এবং এর নেতানেত্রী। দ্বিতীয়ত : তাদের পক্ষে গণজোয়ার বইছে। খালেদাকে জেলে নেয়ায় আরও বেড়েছে এই মূহূর্তে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের জামানত থাকবে না। এর কি জবাব দেবে? এক নম্বর কথা হলো খালেদা জিয়া কারাগারে আদালতের রায়ে- কোন সরকারী নির্দেশে নয়। কেউ সাজাপ্রাপ্ত হলে সে তো কারাগারেই থাকবে এটাই বিধান। বরং এই বিধান ফাতেমার ক্ষেত্রে লঙ্ঘিত হয়েছে- বোচারা কোন অপরাধ না করেও কারাগারে সাজাভোগ করছেন। ওর জন্য সত্যি সবার মায়া হয়। তৃতীয়ত : বিএনপির পক্ষে ভোটের জোয়ার নাকি কলকল করে নয়াপল্টন, গুলশান, লন্ডন, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের দিকে ছুটছে। কিন্তু এই জোয়ার কী- এক. বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ কী ছুতে পারবে? এ তো বিএনপির মেধা, ক্ষমতা, যোগ্যতার বাইরে- পারলে একটা ছোটখাট প্লেন উড়িয়ে দেখান না? দেখি মুরুদটা? দুই. জিয়া, খালেদা, সাত্তার ১৭ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন। কি করেছেন? জগণের কাছে কি বলে ভোট চাইবেন? তবে একটা কথা অবশ্যই বলতে পারবেন যে, তাদের দলে প্রচুর জামায়াত-শিবির রাজাকার রয়েছে। বড় বড় যুদ্ধাপরাধীগুলো নেই, এখনও ছোটখাটো। তবে ছোটখাটো হলেও হিংস্র যুদ্ধাপরাধী রয়েছে। রয়েছে জঙ্গীগোষ্ঠী। এদের নাম বলে ভোট চাইতে পারেন। পাকিস্তানের নামে ভোট পাবেন। ইহা করিব, উহা করিব, যত উন্নয়ন হইয়াছে সব করিয়াছে বিএনপি। এই সব বলে ভোট চাইলে জোয়ার তো দূরে থাক এমন ভাটা লাগবে যে একটানে কোথায় গিয়ে যে ডুববে আল্লাহই জানে। তিন. কয়েকটি তথ্য দিতে চাই ক. এ মুহূর্তে খাদ্য উৎপাদন ৪ কোটি টন এবং দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, খ. মৎস্য উৎপাদনে বিশ্বে ৩য়। এখন আর মানুষ ডাল-ভাতের দাওয়াত দেয় না-দেয় মাছ ভাতের, গ. সবজি উৎপাদনে ৪র্থ, ঘ. গড় আয়ু ৭২ বছর, ঙ. শিক্ষার হার ৭১%, চ. মাথা পিছু আয় ১৭৫২ মার্কিন ডলার, ছ. বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, জ. জিডিপি ৭Ñ+ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন হতে যাচ্ছে; পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুত গতিতে; কাঁচপুর- মেঘনা-দাউদকান্দি, দ্বিতীয় সেতুর কাজ অনেক এগিয়েছে; কর্ণফুলী ট্যানেলের কাজ চলছে, ইত্যাদি ইত্যাদি। এ সব কাজ হলে জিডিপি দুই ডিজিট হয়ে যাবে। মাথাপিছু আয় বাড়বে একই হারে। সেই সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতি আরও কমবে, ঝ. এখন আর বিদ্যুত যায় না, লোডশেডিং নেই- মোট উৎপাদন সক্ষমতা ১৭০০০ মেঘাওয়াট, ঞ. বছরের প্রথমদিন ৩৫ কোটি পাঠ্যবই বিনামূল্য বিতরণ, ত. ছাত্রদের মায়ের কাছে উপ-বৃত্তির টাকা মোবাইল-টু- মোবাইল, থ. ঢাকা সিটিতে ফ্লাইওভারের পর ফ্লাইওয়ারে হাত-পা, তার ওপর মেট্রোরেল, কি-না?, দ. মঙ্গা, দুর্ভিক্ষ জীবন থেকে তাড়িয়ে ডিকশেনারীতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে, ধ. রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্ব জনমত বাংলাদেশের পক্ষে, ন. শেখ হাসিনা বিশ্বের প্রভাবশালী অন্যতম প্রধানমন্ত্রী, সঙ্গে সঙ্গে মাদার অব হিউম্যানিটি, স্টার অব দ্য ইস্ট, চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ- এমনি বিশ্বনন্দিত সম্মান দেশের জন্য অর্জন করেছেন এবং প. পার্বত্য শান্তি চুক্তি, ভারতের সঙ্গে সীমানা চুক্তি, সমুদ্র সীমা নির্ধারণ, কি করেননি বঙ্গবন্ধুকন্যা। উপসংহার এগুলোর জবাবে কি বলে ভোট চাইবে বিএনপি। পরন্তু মিলিটারির দল, গণভিত্তি কোথায়? তাছাড়া কোথায় শেখ হাসিনা, কোথায় খালেদা, কোথায় জয়-পুতুল কোথায় তারেক? তুলনা করাও বালখিল্যতা। ঢাকা ॥ ১১ মে ২০১৮ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি জাতীয় প্রেসক্লাব
×