ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

একটি মানসিক ব্যাধি

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ১০ মে ২০১৮

একটি মানসিক ব্যাধি

কারও ভাল দেখতে না পারার অভ্যাসই হল পরশ্রীকাতরতা। আজ বাংলাদেশে এটি একটি সামাজিক পীড়ায় পরিণত হয়েছে এবং বলা যায় গোটা দেশই এই পীড়ায় মারাত্মকভাবে আক্রান্ত। বোধহয় বহুকাল আগে থেকেই বাঙালী সমাজ এই পীড়ায় পীড়িত। বাঙালীর মধ্যে আছে পরশ্রীকাতরতা ভাই ভাইয়ের উন্নতি দেখলে খুশি হয় না এই জন্যই বাঙালির সকল রকম গুণ থাকা সত্ত্বেও জীবনভর অন্যের অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। বাঙালী মনোজগতে পরশ্রীকাতরতার মানচিত্র কি জীবন্ত হয়ে চিত্রিত হয়েছে। আসলেই তো পরশ্রীকাতরতার কারণেই আমাদের পরাধীনতা আমাদের সামাজিক অনগ্রসরতা। আমরা কারও উন্নতি দেখলে আমাদের মন খারাপ হয়ে যায় আর তার ক্ষতি করার জন্য আমরা উন্মাদ হয়ে যাই। অপরের অনিষ্ট অপকার অকল্যাণ অমঙ্গল সাধন না করা পর্যন্ত আমাদের মনের অশান্তি ঘুচে না। মানুষকে কষ্ট দেয়া বিনা কারণে বিপদে ফেলানো এই হল আমাদের একান্ত কামনা। এটা করতে গিয়ে আমাদের নিজের জীবনেও যদি কোন বিপর্যয় নেমে আসে তাতেও যেন আমাদের পরম সুখ। পরশ্রীকাতর জ্বালাতনকারী প্রতিবেশীর সংখ্যা যদি কেবল বাড়তেই থাকে তাহলে সামগ্রিক সমাজের সর্বজনীন সুখ-শান্তির একেবারে সমাধি ঘটবে। আজ পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে প্রতিহিংসার দাবানল দাউ দাউ করে জ্বলছে। ব্যক্তি মানুষের বিদ্বেষবহ্নিতে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে সামাজিক শান্তি, কোথায় পড়ে রইল সৃষ্টিসেরা মানুষের সভ্যতা, কোথায় মানুষের মানবিকতা আর মনুষ্যত্ববোধ, মায়া-মমতা সবকিছুর মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটিয়েছে এই পরশ্রীকাতরতার পাপ। পলাশীর প্রান্তরে মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় সিরাজের পতনের মধ্য দিয়ে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। বন্ধু বেতন বেশি পায়, ভাল বাসাতে বসবাস করে, তার বউ দেখতে সুশ্রী, দামী গয়না পরে, তার ছেলেমেয়েরা শহরের নামী-দামী স্কুলে পড়াশোনা করে, পরীক্ষায় এ প্লাস পায়, এই তো শুরু হয়ে গেল আরেক বন্ধুর বৈরীবিষের বুক জ্বালাপোড়া; আহারে ওর সবকিছু হয়ে যাচ্ছে আমার তো কিছুই হচ্ছেনা। এই বিভেদ বৈষম্য ভাবনা একসময় একজন আরেকজনকে ঘোর শত্রুতে পরিণত করে। আজ যে মানুষে মানুষে এত হানাহানি সংঘাত সহিংসতা রাগ দ্বেষ ঈর্ষা রেষারেষি রক্তপাত, লোভের লালসায় লাশ পড়ছে, কত সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছে, কত মানুষের জীবন হুমকির সম্মুখীন। তা সবই পরশ্রীকাতরতা নামক পাপের ফসল। এই পাপ পরিবার সমাজ রাষ্ট্র তথা গোটা পৃথিবীর পবিত্রতা ধ্বংস করছে। এই মানবসভ্যতা বিধ্বংসী পরশ্রীকাতরতার বোমার হাত থেকে বাঙালীর বাঁচার উপায় কি? পরশ্রীকাতরতার প্রতিষেধক কি? পরশ্রীকাতরতার অশুভ প্রতিযোগিতা কিভাবে প্রতিহত করা যায় সকল বৈরিতার বিলোপ সাধন করে? সমাজের অগণিত মানুষের অভাব অভিযোগ অতৃপ্তির অন্তর্জ্বালার অবসান ঘটানো যায়? ঈর্ষা তো ঈশ্বর কোনদিন ভালবাসেন না। ¯্রষ্টা তো তাঁর সৃষ্টিকে ভালবাসলেই সন্তুষ্ট হন। আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আর্ত-মানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মাঝেই তো রয়েছে মানবজীবনের অনন্ত মহিমা। চন্দ্রনাথ ডিগ্রী কলেজ, নেত্রকোনা থেকে
×