ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়ার জামিনের বিরুদ্ধে আপীলের শুনানি ফের আজ

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৯ মে ২০১৮

খালেদা জিয়ার জামিনের বিরুদ্ধে আপীলের শুনানি ফের আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাদ-প্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আপীল শুনানি আজ বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপীল বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। এক পর্যায়ে শুনানি চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এদিকে শুনানিকে ঘিরে সকাল থেকে সুপ্রীমকোর্ট অঙ্গনে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। আদালতে তল্লাশি করে সবাইকে প্রবেশ করানো হয়। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে আপীলের শুনানি শুরু হয়। প্রথমেই দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান পেপারবুক থেকে যুক্তি তুলে ধরে খালেদা জিয়ার জামিনের বিরোধিতা করে বক্তব্য রাখেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতে উপস্থিত ছিলেন। খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জয়নুল আবেদীন ও মাহবুবউদ্দিন খোকন। এদিকে আদেশের পর এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার শুনানিতে বিচারিক আদালত থেকে যত ধরনের সুযোগ-সুবিধা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেয়া হয়েছে- তা আর কোথাও হতে দেখিনি। এত স্বচ্ছভাবে কোন আসামিকে সুযোগ দিয়ে মামলা চালাতে এই দেশে কেন- এই উপমহাদেশে কোথাও দেখিনি। উনার (খালেদা জিয়া) যদি এমআরআই বা সিটি স্ক্যান দরকার হয়, উনি যেই হাসপাতাল পছন্দ করবেন সেই হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু উনাকে বাইরে (কারাগারের) কোন হাসপাতালে রাখা যাবে না, উনার নিজের নিরাপত্তার জন্যই। সর্বশেষ আমি বলেছি, রাষ্ট্র একটি মেডিক্যাল বোর্ডও করেছেন। মেডিক্যাল বোর্ড সে রকম কোন পরামর্শ দেয় নাই যে উনাকে বাইরের কোন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে। অন্যদিকে শুনানিতে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, খালেদা জিয়াকে বিচারিক আদালত পাঁচ বছরের কারাদ-াদেশ দিয়েছেন। এই লঘুদ- জামিনের কোন কারণ হতে পারে না। তেমনি বয়স্ক নারী বলেও জামিন দেয়ার কোন কারণ হতে পারে না। দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আপীলের শুনানি শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে শুনানি আজকের মতো শেষ হয়েছে। আজ বুধবার আবারও হবে। শুনানির শুরুতে পেপারবুক থেকে মামলা-সংক্রান্ত বিষয় আদালতের কাছে পড়ে শোনান দুদকের আইনজীবী। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে বিচারিক আদালত পাঁচ বছরের কারাদ-াদেশ দিয়েছেন। এই লঘুদ- জামিনের কোন কারণ হতে পারে না। দুদক বিচারিক আদালতের এই লঘুদ-ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন করেছে। এর বাইরে খুরশিদ আলম আদালতে বিচারিক আদালতের কয়েকটি আদেশ পড়ে শোনান। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া আদালতের অনুমতি না নিয়ে লন্ডনে গিয়েছিলেন। চিকিৎসার কোন সনদপত্র তিনি আদালতে জমা দেননি। এমনকি হাইকোর্টেও খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে কোন সনদপত্র জমা দেয়া হয়নি। এ সময় আদালত খুরশিদ আলমের কাছে প্রশ্ন রাখেন, বয়স ও অসুস্থতা জামিনের কোন কারণ হতে পারে কি-না? এরপর শুনানিতে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘হাইকোর্টে বিএনপির চেয়ারপারসনের মামলার শুনানির জন্য পেপারবুক তৈরি হয়ে গেছে। সেখানে দ্রুত শুনানি হোক। আপীলে তিনি খালাস পেলে পাক। খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড প্রতিবেদন দিয়েছেন। সেখানে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে এমন তথ্য নেই। আদালতে এ্যাটর্নি জেনারেল খালেদা জিয়ার জামিন প্রশ্নে আপীলের শুনানিতে বলেন, ‘মাই লর্ড, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল রিপোর্টে বলা হয়েছে, তার হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তাই তিনি চলাফেরা করতে পারেন না। তাহলে উনার বাইরে হাঁটার দরকার কী? উনার রেস্ট প্রয়োজন। উনি কারাগারে তো রেস্টেই আছেন! বরং আমরা আপীল শুনানি শেষ করি।’ এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলে ওঠেন, ‘উনার এসব কথা বলার দরকার কী? উনি রাষ্ট্রের একজন প্রধান আইন কর্মকর্তা। উনি কি এসব বলতে পারেন?’ এ সময় আদালতে হইচই শুরু হয়ে যায়। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘উনাকে বলতে দিন। পুনরায় এ্যাটর্নি জেনারেল বলা শুরু করেন। তিনি বলেন, কারাগারের ডাক্তার উনাকে চেকআপ করলেন। পরে নাপা ওষুধ সেবনের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু উনার ব্যক্তিগত ডাক্তাররা দেখা করলেন, আবার বাইরে এসে সংবাদ সম্মেলন করেন। এটা কীভাবে সম্ভব। তারা তো ডাক্তার, ট্রিটমেন্ট করবে। সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন না। উনারা পরামর্শ দিলেন ইউনাইটেড হাসাপাতালে ভর্তির জন্য। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ উনাকে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা করিয়েছেন। তাই করাগারে উনার সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কেননা, উনার সঙ্গে একজন সেবিকাও দেয়া হয়েছে।’ এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এটি দেশের সর্বোচ্চ আদালত। তিনি এগুলো বলতে পারেন না। এমন একটি মামলায় তিনি দাঁড়াতে পারেন না। তখন আইনজীবীরা চিৎকার করে বলতে থাকেন ইয়েস! ইয়েস!’ এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘তাকে সাবমিট রাখতে দিন।’ এরপর এ্যাটর্নি জেনারেল আবার মামলার নথি পড়া শুরু করেন। এ সময় খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘এখন তো জামিনের শুনানি চলছে। আপীলের না। এ সময় আইনজীবীরা হইচই শুরু করলে বিচারকক্ষের পরিবেশ কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের পর খালেদা জিয়ার পক্ষে এ জে মোহাম্মদ আলী শুনানি শুরু করেন। তিনি প্রথমেই এ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তার এই মামলায় শুনানির এখতিয়ার নেই। আইন অনুযায়ী দুদকের মামলা শুনানির জন্য নিজস্ব আইনজীবী টিম থাকবে। এই টিম নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত অস্থায়ী ভিত্তিতে আইনজীবী নিয়োগ দিতে হবে। কিন্তু এ্যাটর্নি জেনারেল আইনের তোয়াক্কা না করে রাজনৈতিক উদ্দেশে শুনানি করছেন। এ্যাটর্নি জেনারেল এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, অবশ্যই আছে। এ সময় হৈচৈ শুরু হয়ে যায়। খালেদাকে বাইরে কোন হাসপাতালে রাখা যাবে না ॥ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিনের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আপীলের শুনানিতে তার চিকিৎসার বিষয়ে কথা বলেছেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, ‘উনার (খালেদা জিয়া) যদি এমআরআই বা সিটি স্ক্যান দরকার হয়, উনি যেই হাসপাতাল পছন্দ করবেন সেই হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু উনাকে বাইরে (কারাগারের) কোন হাসপাতালে রাখা যাবে না, উনার নিজের নিরাপত্তার জন্যই।’ আপীলের শুনানি শেষে এ্যাটর্নি জেনারেল তার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। এ সময় তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে শুনানি আজকের মতো শেষ হয়েছে। বুধবার আবারও শুনানি হবে। তিনি বলেছেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার শুনানিতে বিচারিক আদালত থেকে যত ধরনের সুযোগ-সুবিধা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেয়া হয়েছে- তা আর কোথাও হতে দেখিনি। এত স্বচ্ছভাবে কোন আসামিকে সুযোগ দিয়ে মামলা চালাতে এই দেশে কেন- এই উপমহাদেশে কোথাও দেখিনি। খালেদা জিয়ার মামলায় পাঁচজন সিনিয়র আইনজীবী তাদের বক্তব্য রেখেছেন। আর আদালত তাদের বক্তব্য অনুধাবন করেছেন। সেই বক্তব্যগুলো বিশ্লেষণ করে তার বক্তব্য দিয়েছেন। একজন আসামির পক্ষে সচরাচর একজন আইনজীবীই বক্তব্য রাখেন। এখানে পাঁচজন আইনজীবীকে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেয়া হয়েছে। “এই মামলায় উনি (খালেদা জিয়া) নানাভাবে সময়ক্ষেপণ করেছেন। নিম্ন আদালতে মামলাটি নিষ্পত্তি হতে সময় লেগেছে নয় বছর। ২০ থেকে ২২ বার নিম্ন আদালতের বিভিন্ন আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে এসেছেন। সর্বশেষ তার নিজের বক্তব্য দেবেন বলে আদালতে প্রায় এক বছর সময় নিয়েছেন।” যে চারটি গ্রাাউন্ডে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছেন, সেটি তুলে আমি সুনির্দিষ্টভাবে আদালতে আমার বক্তব্য রেখেছি। আমি বলেছি, সেই সমস্ত আসামির অল্প সাজার পরেও জামিন দেয়া যেতে পারে- যখন দেখা যায়, তার সাজা খাটা শেষ হয়ে গেছে আপীল শুনানি হচ্ছে না। কিন্তু এখানে তা নয়। পাঁচ বছরের সাজা, তিনি এখন পর্যন্ত সাজা খেটেছেন চার মাসের মতো। রাষ্ট্রের প্রধান এই আইন কর্মকর্তা বলেন, উনার চিকিৎসার ব্যাপারে যে কথাটা বলা হয়েছে। এ ব্যপারে আমি শুনানিতে দেখিয়েছি, উনাদের নিয়োজিত চিকিৎসকই উনাকে শুধু একটি নাপা খেতে বলেছেন। ব্যথার ওষুধ দিয়েছেন। আর উনার যে সমস্ত শারীরিক সমস্যা আছে, এগুলো ৩০ বছর যাবত, ২০ বছর ও ১০ বছর যাবত। এটা নতুন কিছু না। আমি বলেছি, উনার ইচ্ছামতো উনাকে একজন সেবিকা দেয়া হয়েছে। যেটা জেলকোডের বিধানে নেই। আর উনার ইচ্ছামতো উনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক উনাকে দেখেছেন। ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা আবার বাইরে এসে প্রেস কনফারেন্স করেছেন। যেটা উদ্দেশ্যমূলক করেছেন। জামিন পাওয়ার জন্য এটা করেছেন। মাহবুবে আলম বলেন, সর্বশেষ আমি বলেছি, রাষ্ট্র একটি মেডিক্যাল বোর্ডও করেছেন। মেডিক্যাল বোর্ড সে রকম কোন পরামর্শ দেয় নাই যে উনাকে বাইরের কোন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে। উল্লেখ্য, গত ৮ ফেরুয়ারি সরকার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদ- দেন বিচারিক আদালত। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ মামলার অপর পাঁচ আসামিকে ১০ বছর করে কারাদ- এবং দুই কোটি ১০ লাখ অর্থদ-ও করা হয়।
×