ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

স্যার ফার্গুসনের পাশে ফুটবল বিশ্ব, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের জন্য অস্ত্রোপচার, সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় সর্বকালের অন্যতম সেরা এ ফুটবল ব্যক্তিত্ব, বেকহ্যাম, রুনি, রোনাল্ডোসহ অনেক খেলোয়াড় ও কোচের রোগমুক্তি কামনা

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কোচ এ্যালেক্স ফার্গুসন

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ৭ মে ২০১৮

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কোচ এ্যালেক্স ফার্গুসন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বিপদ এখনও কাটেনি। শনিবার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের জন্য জটিল অস্ত্রোপচারের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। বিশ্ব ফুটবলের যে কোন পর্যায়ের কোচ, খেলোয়াড়দের কাছে সম্মান ও মর্যাদার আসনে থাকা স্যার এ্যালেক্স ফার্গুসন জীবন বাঁচাতে লড়ছেন। ব্রিটিশ ফুটবলের ইতিহাসে সফলতম এ কোচকে বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসেই সর্বকালের সেরাদের অন্যতম বিবেচনা করা হয়। ৭৬ বছর বয়সী স্যার ফার্গুসনের এমন সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় পুরো ফুটবল বিশ্বই হতবিহ্বল। সবাই তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। তার এই মারাত্মক অসুস্থতার খবর জানিয়েছে ফার্গুসনের দীর্ঘদিনের ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। আর এরপর বিশ্ব ফুটবলের কোচ ও খেলোয়াড়রা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে শুভকামনা জানিয়েছেন। সেই তালিকায় আছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, ডেভিড বেকহ্যাম ও ওয়েন রুনিরা। ২০১৩ সালে কোচ হিসেবে অবসর নেন ফার্গুসন। সর্বশেষ মৌসুমেও তিনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে শিরোপা জিতিয়েছেন। তারপর থেকে ফুটবল থেকে দূরেই ছিলেন। হঠাৎ করেই তার মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ার খবরটি পাওয়া গেল। সেটি দিল তার দীর্ঘদিনের কাজের জায়গা ম্যান ইউ ক্লাব থেকেই। এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘স্যার এ্যালেক্স ফার্গুসনকে জরুরী অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে আজ মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের জন্য। পুরো প্রক্রিয়াটি বেশ ভালভাবেই শেষ হয়েছে। কিন্তু তাকে বেশ কিছুদিন নিবিড় পরিচর্যায় থাকতে হবে পূর্ণাঙ্গভাবে সেরে ওঠার জন্য। এ কারণে তার পরিবার এ বিষয়ে পুরোপুরিই গোপনীয়তা রেখে চলেছেন। আমরা স্যার এ্যালেক্স, তার পরিবার ও তার ভালবাসার মানুষদের পুরো সময়ই যোগাযোগের মধ্যে রেখেছি। আমরা সবাই এ বিষয়ে একতাবদ্ধভাবে তার আরামদায়ক ও দ্রুতগতির আরোগ্য কামনা করছি।’ ম্যানচেস্টারের কাছাকাছি এ স্কটিশ কোচের বাড়ি চিয়াডলে। উত্তর-পূর্ব ইংল্যান্ডের এ বাড়িতে শনিবার সকাল ৯টার সময় জরুরীভাবে এ্যাম্বুলেন্স ডাকা হয়। তার বিষয়ে এভারটন কোচ স্যাম এ্যালারডাইস বলেন, ‘এটা খুবই হৃদয় বিদারক বিষয়। আমি যত দ্রুত সম্ভব জানার চেষ্টা করছি তিনি কেমন আছেন। আশা করছি তার দ্রুতই পূর্ণাঙ্গ আরোগ্য হবে।’ ওল্ডট্র্যাফোর্ডে ফুটবল ক্যারিয়ারের শুরুতে তার অধীনে ছিলেন সাউদাম্পটন কোচ মার্ক হিউজেস। তিনি বলেন, ‘আমি আগেভাগেই তার অসুস্থতা নিয়ে একটু শুনতে পেয়েছিলাম। আশা করছিলাম যেন সেটা সত্য না হয়। আমি তারজন্য সর্বোচ্চ ভাল কিছুই প্রত্যাশা করছি।’ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতেও স্যার ফার্গুসনের এই অসুস্থতা নিয়ে বিষাদের ছায়া। এমনকি ক্যারিয়ারে বেশ ঝামেলার মুখে থাকা ইংলিশ ফুটবলার ডেভিড বেকহ্যামও ইনস্টাগ্রামে ফার্গুসনের সঙ্গে তোলা একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘লড়াই চালিয়ে যান বস! প্রার্থনা ও ভালবাসা জানাচ্ছি ক্যাথি ও পুরো পরিবারকে।’ রিয়াল মাদ্রিদের সুপারস্টার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো মাত্র ১৮ বছর বয়সে ফার্গুসনের নজরে পড়েছিলেন এবং ২০০৩ সালে ম্যানইউতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। তিনিও টুইটারে স্যার ফার্গুসনের সঙ্গে ছবি পোস্ট করে লিখেছেন,‘হে আমার বন্ধু, আমার সকল চিন্তা ও প্রার্থনা আপনার জন্য। শক্ত থাকুন বস।’ সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক ও ম্যানইউ খেলোয়াড় ওয়েন রুনি টুইটারে বলেছেন, ‘দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন বস। এই দুঃখের সময় আমার সকল প্রার্থনা রয়েছে পুরো পরিবারের জন্য।’ খেলোয়াড়ী জীবনে আহামরি কিছুই করতে পারেননি। তবে ১৯৭৪ সালে কোচ হিসেবে কাজ শুরুর পর থেকেই ক্রমাগতভাবে ফার্গুসন সাফল্য পেয়েছেন। ১৯৮৬ সালে তিনি স্বল্পকালীন সময়ের জন্য কোচ হিসেবে কাজ করে স্কটল্যান্ডকে বিশ্বকাপের টিকেট পাইয়ে দিয়েছিলেন। ওই বছরই তিনি স্কটিশ লীগ চ্যাম্পিয়নশিপে এবারডিনকে শিরোপা জেতান। এরপরই ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের ঐতিহ্যবাহী দল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ হিসেবে কাজ শুরু করেন। দীর্ঘ ২৭ বছর দলটিকে তত্ত্বাবধান করে তিনি ৩৮টি শিরোপা। এর মধ্যে ১৩টি প্রিমিয়ার লীগ, ৫টি এফএ কাপ এবং দুটি উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শিরোপা জিতেছেন। ফুটবল ইতিহাসের প্রথম কোচ হিসেবে তিনি কোচিং ডিপ্লোমা পান ২০০৩ সালে এফএ থেকে। এর জন্য অন্তত ১০ বছর পেশাদার কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হয়। ১৯৯৯ সালে তিনি কুইন্স বার্থডে অনার্স তালিকায় থেকে নাইট উপাধি পান। এরপর থেকেই তার নামের পাশে স্যার উপাধি যোগ হয়। ইংলিশ ফুটবলে তিনিই একমাত্র কোচ যার অধীনে ম্যানইউ টানা ২০ মৌসুম সেরা তিনে ছিল (সবমিলিয়ে ২২ মৌসুম)। সবগুলো ইউরোপিয়ান ফুটবল প্রতিযোগিতায় সর্বাধিক ৭ বার শিরোপা জেতার রেকর্ডে তিনি জিওভান্নি ট্রাপাত্তোনি ও কার্লো আনচেলত্তিকে ছুঁয়েছেন। ১৩ প্রিমিয়ার লীগ জিতে তিনি সর্বকালের সেরা কোচ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা কোচের সাফল্য এর অর্ধেক। টানা তিনবার শিরোপা জয়ের রেকর্ড গড়েছেন দুইবার যা এর আগে কোন কোচ করে দেখাতে পারেননি প্রিমিয়ার লীগে। বর্ষসেরা কোচ হয়েছেন ১০ বার, ২৭ বার হয়েছেন মাসের সেরা কোচ এবং উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগে সর্বাধিক ১৯০ ম্যাচে তিনি দলের কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। এ কারণেই ২০১১ সালে ওল্ডট্র্যাফোর্ড স্টেডিয়ামে তার নামে একটি প্রান্ত দেয়া হয় এবং পরবর্তী বছর একটি মূর্তিও স্থাপন করা হয় সেখানে। এখন পুরো বিশ্বের খেলোয়াড়, কোচ ও কর্মকর্তারাই এই মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করা কোচের দ্রুত আরোগ্য লাভের প্রার্থনা ও শুভকামনা জানিয়ে চলেছেন।
×