ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাতাসে কার্বন ও সীসা বৃদ্ধিতে বজ্রপাত বেড়েছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১ মে ২০১৮

বাতাসে কার্বন ও সীসা বৃদ্ধিতে বজ্রপাত  বেড়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাতাসে কার্বন ও সীসার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বজ্রপাতের হার বেড়ে গেছে। কয়েকবছর ধরে বজ্রপাতের ভয়াবহতায় এপ্রিলই এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৪৮ জন। রাজধানীতে বৈদ্যুতিক তারের নেটওয়ার্ক থাকার কারণে বজ্রপাতের ভয়াবহতা টের পাওয়া যায় না। তবে প্রতিনিয়তই গ্রামাঞ্চলে প্রাণহানি ঘটছে। এদিকে বজ্রাঘাতের এই ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে করণীয় সম্পর্কে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানান, গ্রামাঞ্চলে ও শহরাঞ্চলে ভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী উদ্যোগ নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন জরুরী হয়েছে। প্রতিবছর মার্চ থেকে মে মাসের শেষ পর্যন্ত বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। তারা জানান, জীবনযাপনে ধাতব বস্তুর ব্যবহার বেড়ে যাওয়া এবং বজ্রপাত নিরোধক গাছের অভাবের কারণে মৃত্যুর হার বেড়েছে। তারা আরও জানান, আগে কৃষিতে ধাতব যন্ত্রপাতির ব্যবহার ছিল না বললেই চলে। কৃষকের কাছে বড়জোর কাস্তে থাকত। কিন্তু এখন ট্রাক্টরসহ নানা কৃষি যন্ত্রাংশ ও মোবাইল ফোনের মতো ধাতব যন্ত্রপাতির ব্যবহার বেড়ে গেছে। এসব ধাতব বস্তুর ব্যবহার বজ্রপাতে বেশির ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করছে। পরিবেশ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, ঢাকার বাতাসে কার্বনের পরিমাণ ৪ শতাংশের বেশি বেড়েছে। রাজধানীতে এলাকাভেদে প্রতি ঘনমিটারে ৬৬৫ থেকে ২৪৫৬ বা তারও বেশি মাইক্রোগ্রাম পাওয়া গেছে। অন্য যেকোনও সময়ের তুলনায় ঢাকায় বেশি বজ্রপাত হতে দেখা গেলেও বজ্রপাতের ভয়াবহতা টের পাওয়া যাচ্ছে না। বিদ্যুতের লম্বা খুঁটি মানুষের উচ্চতার অনেক ওপরে থাকায় আর খুঁটির সঙ্গে আর্থিংয়ের ব্যবস্থা থাকার কারণে শহরাঞ্চলে বজ্রপাত থেকে প্রানহানি রোধ করা যায়। আবহাওয়াবিদরা জানান, মানুষদের কোন পদ্ধতি রক্ষা করা যায় সেটি বের করা এখন সময়ের দাবি। প্রাকৃতিক দুর্যোগকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তবে সচেতনতাসহ বেশকিছু উদ্যোগ নিয়ে তা কমানো বা সেই দুর্যোগ মোকাবেলার যোগ আছে। প্রতিবছর এ সময় অনেক বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। মানুষ যেন না মারা যায় সে জন্য ধাতব বস্তু সঙ্গে না রাখার কোনও বিকল্প নেই। একইসঙ্গে তাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী সচেতনতা প্রচারাভিযানও চালাতে হবে। গ্রামাঞ্চলে করণীয় উল্লেখ করতে গিয়ে দুর্যোগ ফোরামের সমন্বয়ক গওহার নঈম ওয়ারা জানান, কোনও বিকল্প ছাড়া বড় বড় গাছ ধ্বংস করা বন্ধ করতে হবে। গ্রামে আগে গাছ থাকায় সেগুলো বজ্রপাত ঠেকাত। এছাড়া অরক্ষিত হয়ে পড়া গ্রামাঞ্চলের মসজিদের মিনারে আর্থিং করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যেহেতু বাংলাদেশের হাওর অঞ্চল, দেশের বিল অঞ্চল আর উত্তরের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুরে বজ্রাঘাতে প্রাণহানির ঘটনা বেশি ঘটে সে কারণে এসব অঞ্চলে মোবাইল ফোনের টাওয়ার লাইটেনিং এরস্টোর লাগানোর কাজটিও করা যেতে পারে। তিনি জানান, আগে তাল ও খেজুর গাছ ছিল। তা কেটে ভবন, কলকারখানা, বাড়ি-ঘর ও রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। এখন দীর্ঘমেয়াদের কথা ভাবতে গেলে তাল বা খেজুরগাছ লাগানো যেতে পারে। বাংলাদেশ দুর্যোগ ফোরামের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালে বজ্রাঘাতে ২৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে ২০১৬ ও ২০১৭ সালেও মৃতের সংখ্যা দুই শতাধিক ছিল। এ বছর কেবল এপ্রিলে মারা গেছেন ৪৮ জন। ২০১০ থেকে গত ছয় বছরের হিসাব বলছে, একেবারেই নজর না দেয়া এই দুর্যোগে নিহতের সংখ্যা প্রায় এক হাজার। গত পাঁচ বছরের মৃত্যু ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ফাঁকা মাঠে কৃষিকাজ, মাছ ধরা, হাওরাঞ্চলে নৌকায় যাতায়াতের সময় বজ্রঘাতের শিকার হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা বেশি।
×