ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উঠতি ক্রিকেটারদের সামর্থ্যে নজর দেয়া প্রয়োজন

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ১ মে ২০১৮

উঠতি ক্রিকেটারদের সামর্থ্যে নজর দেয়া প্রয়োজন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ মাত্র একদিনের জন্য এসেছিলেন। মূলত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সঙ্গে সব হিসেব-নিকেশ চুকানো এবং আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নেয়ার জন্যই এসেছিলেন রিচার্ড হ্যালসল। গত মার্চে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় নিদাহাস ট্রফি টি২০ আসরের আগে তাকে ফিল্ডিং কোচ থেকে সহকারী কোচের দায়িত্বে উন্নীত করেছিল বিসিবি। কিন্তু ওই সিরিজে অংশ নেয়ার জন্য জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রস্তুতির সময়ই হুট করে দেশে চলে গিয়েছিলেন। পরে জানা যায় ব্যক্তিগত কারণেই চাকরি ছেড়েছেন তিনি। দীর্ঘ দুই মাস পর বিসিবিতে এসে তিনি বোর্ড কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। এ সময় তিনি জানান দেশের সিনিয়র কোন ক্রিকেটারের সঙ্গে কারও সমস্যা ছিল না। তিনি মনে করেন বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় সুবিধা সরাসরি কিছু প্রতিভাবান ক্রিকেটার জাতীয় দলে উঠে আসেন। তিনি জাতীয় দলের ধারাবাহিক সাফল্যের জন্য এই উঠতি ক্রিকেটারদের আরও দেখভাল করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তাহলেই নতুনদের সামর্থ্য বেরিয়ে আসবে। আর সিনিয়রদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ কিছু পেতে হলে পর্যাপ্ত সুযোগও দিতে হবে বলে দাবি করেন হ্যালসল। চান্দিকা হাতুরাসিংহের কোচিং স্টাফে চার বছর দায়িত্ব পালন করেছেন হ্যালসল। ফিল্ডিং কোচ হিসেবে বেশ ভালই কাজ করছিলেন। তবে গত বছর নবেম্বরে হাতুরাসিংহে পদত্যাগের পর যেন তার আর মন টেকেনি। যদিও চলতি বছরের শুরুতে দেশের মাটিতে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজ, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি২০ ও টেস্ট সিরিজে তাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান কোচের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু জাতীয় দলের চরম ব্যর্থতার পর নিদাহাস ট্রফির জন্য পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশকে প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। হ্যালসলকে করা হয় সহকারী। সেজন্যই হয়ত হুট করে ইংল্যান্ডে ফিরে যান তিনি। একটি গুরুত্বপূর্ণ সিরিজের আগে তার এই হঠাৎ চলে যাওয়া ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত বিসিবি থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিসিবি প্রধান নির্বাহীর বক্তব্য জুড়ে দিয়ে বলা হয়,‘রিচার্ড অফিসিয়ালি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। আমরা বুঝতে পেরেছি, তার সিদ্ধান্তটা পুরোপুরি পারিবারিক কারণে। কারণ তিনি তার অসুস্থ বাবার কাছাকাছি থাকতে চান।’ চার বছর কাজ করে হ্যালসল চলে যাওয়ার পর আর এই পদে বিসিবি কাউকে নিয়োগ দেয়নি। এমনকি খোঁজখবর করার বিষয়েও কোনকিছু জানা যায়নি। এখনও শূন্যই আছে পদটি। সোমবার হঠাৎ করেই আবার হ্যালসলকে বিসিবিতে দেখা গেল। তিনি আসার পর পদত্যাগ নিয়ে বলেন,‘কারণ পুরোপুরিই পারিবারিক। আমার নতুন পরিবার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অনেকটাই সময় কেড়ে নেয়। পরিবার থেকে দূরে থাকতে হয়। এটিই কারণ। এসেছি ধন্যবাদ জানাতে। প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে কথা হয়েছে, বোর্ডের অন্যদেরও ধন্যবাদ জানালাম এখানকার সময়টুকুর জন্য। আমি যে কাজটি করতে ভালবাসি, সেই কাজ করতে তারা আমাকে সাহায্য করেছে।’ হাতুরাসিংহের পদত্যাগের অনেক পর গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে ঝামেলার কারণেই তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন। একই প্রশ্নে হ্যালসল বলেন, ‘সিনিয়র ক্রিকেটারদের অবশ্যই নিজস্ব মতামত আছে। আমি সবসময় চেষ্টা করেছি বাংলাদেশ দলকে সেরাটা দিতে। সিনিয়র ক্রিকেটারদের কারও সঙ্গে আমি কোন সমস্যা দেখিনি। এসব নিয়ে কিছু জানা নেই আমার।’ হ্যালসল পরবর্তী যুগে ক্রিকেটারদের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি কিভাবে তত্ত্বাবধান করতে হবে সে বিষয়েও নিজের কিছু পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। হ্যালসল বলেন,‘ক্রিকেটাররা যতক্ষণ পর্যন্ত নিজেদের নিরাপদ না ভাবছে, নিরাপদ বলতে শারীরিক দিকটা বোঝাচ্ছি না, তাদেরকে পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়া ও দেখভাল করা, সমর্থন করা, তাহলে তাদের কাছ থেকে সর্বোচ্চটা পাওয়া যাবে। যে ক্রিকেটাররা দলে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে লড়ছে, তারা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’ বাংলাদেশ দলে এই মুহূর্তে বেশ কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটার আছেন। তাদের পর্যাপ্ত সুযোগ যেমন দিতে হবে, তেমনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিয়মিত ভাল করার জন্য উঠতি ক্রিকেটারদের কাছ থেকেও সামর্থ্য বের করে আনা জরুরি। এ বিষয়ে হ্যালসলের পরামর্শ, ‘এই দলে ভালো এক ঝাঁক সিনিয়র ক্রিকেটার আছে। কিন্তু শুধু তাদের দিয়েই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ধারাবাহিকভাবে ম্যাচ জেতা যাবে না। আরও ক্রিকেটার তুলে আনতে হবে। সিনিয়রদের পাশাপাশি উঠতিদের সামর্থ্যটা বের করে আনতে হবে। আরও অনেক বড় দলের খুব ভাল ‘এ’ দল ও ইমার্জিং প্লেয়ার্স প্রোগ্রাম থাকে। তারপরও অনেক সময় খেলোয়াড় উঠে আসে না সেভাবে। একদিক থেকে ভাবলে বাংলাদেশের জন্য এটি সুবিধাও যে দ্রুত সরাসরি প্রতিভাবানরা জাতীয় দলে উঠে আসছে। কিন্তু তারপর তাদেরকে উপযুক্ত সমর্থন দিতে হবে।’
×