ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বজ্রপাতে নয় জেলায় ১৮ জনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ৩০ এপ্রিল ২০১৮

 বজ্রপাতে নয় জেলায় ১৮ জনের মৃত্যু

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ১৬ । রবিবার সিরাজগঞ্জ, মাগুরা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নওগাঁ, নোয়াখালী, সুনামগঞ্জ, রাঙ্গামাটি, গাজীপুর ও গোপালগঞ্জে বজ্রপাতে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে ১৬ । খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। সিরাজগঞ্জ ॥ সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, কামারখন্দ এবং শাহজাদপুরে বজ্রপাতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা জানায়, কাজীপুর উপজেলার তেকানী চরে রবিবার সকালে সামছুল হক ও তার ছেলে আরফান (১৪) বাদাম ক্ষেতে কাজ করতে যায়। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হঠাৎ প্রচ- ঝড়ের সময় বজ্রপাতে কাজীপুরের ডিগ্রী তেকানী গ্রামের শামছুল মন্ডল (৫৫) ও তার ছেলে আরমানের (১৪) ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। এদিকে কামারখন্দে সকাল সাড়ে দশটার দিকে ধানকাটার সময় বজ্রপাতে আব্দুল কাদের (৩৭) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়। অপরদিকে দুপুর ১টার সময় শাহজাদপুর উপজেলার ছয়আনি গ্রামের নাবিল (১৭) ও পলিন (১৫) আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যায়। আহত হয় আরও চারজন। তাদের শাহজাদপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ রাজিবুল ইসলাম সিদ্দিকি নিশ্চিত করেছেন। মাগুরা ॥ মাগুরা সদর উপজেলার অক্কুর পাড়া, রায়গ্রাম ও শালিখা উপজেলার বুনাগাতী গ্রামে রবিবার দুপুরে বজ্রপাতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। সদর থানার এসআই আশরাফ হোসেন জানান, সদর উপজেলার অক্কুর পাড়ায় বজ্রপাতে মৃত ব্যক্তির নাম শামীম হোসেন (৪০)। তিনি পেশায় ভ্যানচালক। বজ্রপাতের সময় তিনি ভ্যান চালিয়ে মাগুরা থেকে শ্রীপুরের দিকে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে কামারবাড়ি এলাকায় তিনি বজ্রপাতের শিকার হন। সদরের রায়প্রামে বজ্রপাতে মারা যাওয়া অপর ব্যক্তির নাম আলম মিয়া (৩৫)। তিনি সদর উপজেলার বুলু গ্রামের বাসিন্দা। মাগুরা শহর থেকে বাড়ি ফেরার সময় তিনি বজ্রপাতের শিকার হন। অন্যদিকে শালিখা উপজেলার বুনাগাতী এলাকায় একটি মোবাইল টাওয়ারে কাজ করার সময় মেহেদী হোসেন (২৫) নামে এক যুবক বজ্রপাতের শিকার হন। তিনি জয়পুরহাট জেলার মনপুরা এলাকার বাসিন্দা। পরে তাকে মাগুরা সদর হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের দরুইন গ্রামের বাগানবাড়ি এলাকায় বজ্রপাতে আব্দুর রহিম (৫০) নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার সকাল ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আরও দুই শ্রমিক আহত হয়েছেন। তার মধ্যে একজনের নাম মোঃ বেলাল হোসেন। অপরজনের পরিচয় জানা যায়নি। হতাহতদের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার জামরুল এলাকায় বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন জানান, আহত দুজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। মৃতদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। নওগাঁ ॥ নওগাঁর সাপাহার উপজেলায় বজ্রপাতে সোনাভান (২২) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার রামাশ্রম গ্রামের রুবেল হোসেনের স্ত্রী। রবিবার দুপুর ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। সাপাহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি সামছুল আলম শাহ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘দুপুরে সোনাভান বাড়ির অঙ্গিনায় রান্না করছিল। এ সময় বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয় । এছাড়া ওই সময় বাড়িতে থাকা তার স্বামীসহ আরও ৩ জন আহত হয়। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে সাপাহার উপজেল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন। নওগাঁর পোরশা উপজেলায় মুক্তার হোসেন (১৪) নামে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার বিকেল ৩টার দিকে ঘটনাটি ঘটে। মুক্তার হোসেন উপজেলার বালিয়াচান্দা গ্রামের ফাইজ উদ্দিনের ছেলে। পোরশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম জানান, মুক্তার হোসেন বালিয়াচান্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। দুপুরে বাড়ির পাশের মাঠে গরু আনতে গেলে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। নোয়াখালী ॥ নোয়াখালী পৌরসভার লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামে বজ্রপাতে নোয়াখালী জিলা স্কুলের দিবা-ক শাখার ৭ম শ্রেণীর ছাত্র ইকবাল হাসনাত পিয়ালের (১৩) মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা ও মা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নোয়াখালী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বশিরার দোকানের পাশের একটি খেলার মাঠে এই দুর্ঘটনা ঘটে। পিয়াল নোয়াখালী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের সোহেল রানা জগলুর ও পারভীন আক্তারের বড় ছেলে। সুধারাম থানার এসআই লিটন দাস জানান, মৃতদেহ উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। সেনবাগ উপজেলায় বজ্রপাতে শাহীন (২৬) নামে এক ধানকাটা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় অপর দুই জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। দুপুর ১২টার সময় উপজেলার নবীপুর ইউপির গোপালপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মৃত শাহীন ভোলা জেলার তজুমুদ্দিন উপজেলার সোনাপুর গ্রামের মোঃ রজন মিয়ার ছেলে। আহত আব্বাস (২৫) ও মনির হোসেন (৫৫) একই এলাকার বলে জানা গেছে। স্থানীয় নবীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিন উল্লাহ বিএসসি জানান, স্থানীয় ইউপি সদস্য ইকবালসহ স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় নগদ কিছু টাকা সংগ্রহের পর এ্যাম্বুলেন্সযোগে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে মৃতদেহ গ্রামের বাড়ি ভোলায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সুনামগঞ্জ ॥ সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামে বজ্রপাতে লিটন মিয়া (৩০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। কৃষক লিটন সৈয়দপুর গ্রামের শাহজাহান মিয়ার ছেলে। স্থানীয়রা জানান, লিটন সকালে বাড়ির পাশে হাওড়ে ধান কাটতে যান। এ সময় বজ্রপাতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। রাঙ্গামাটি ॥ বাঘাইছড়ি উপজেলায় বজ্রপাতে মনছুরা বেগম (৩৫) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। মনছুরা বেগম বাঘাইছড়ি উপজেলার মুসলিম ব্লক এলাকার বাসিন্দা বলে পুলিশ জানায়। বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নুএন খিসা বলেন, ‘তাকে হাসপাতালে আনা হয়। কিন্তু, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়।’বাঘাইছড়ি থানার ওসি আমির হোসেন বলেন, ‘রবিবার দুপুর একটার দিকে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার মুসলিম ব্লক এলাকার বাসিন্দা মনছুরা বেগম বজ্রপাতে মারা গেছেন। মৃত মনছুরার মরদেহ পরিবারের কাছে।’ মরদেহ দাফনের জন্য ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা। গাজীপুর ॥ কালিয়াকৈর উপজেলার মাটিকাটা এলাকায় বজ্রপাতে জাফরুল ইসলাম (২০) নামে পোশাক কারখানার এক চেকম্যানের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া শ্রীপুর উপজেলায় আমেনা বেগম নামের আরও একজন মারা গেছেন। গোপালগঞ্জ ॥ কোটালীপাড়ায় বজ্রপাতে অশোক পা-ে (২২) নামে এক কৃষক মারা গেছেন। রবিবার বিকেলে কোটালীপাড়া উপজেলার পীড়ার বাড়ি গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। তিনি জ্ঞানেন্দ্রনাথ পা-ের ছেলে। কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার সুশান্ত বিশ্বাস জানান, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, বৃষ্টির সময় তিনি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বজ্রপাতে আহত হওয়ার পর লোকজন তাকে উদ্ধার করে কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
×