ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিডনির মেলব্যাগ

শেখ হাসিনার প্রশান্তপাড়ে আগমন ও সংবর্ধনা ॥ জয় হোক ঐক্যের -অজয় দাশগুপ্ত

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ৩০ এপ্রিল ২০১৮

শেখ হাসিনার প্রশান্তপাড়ে আগমন ও সংবর্ধনা ॥ জয় হোক ঐক্যের -অজয় দাশগুপ্ত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসেছিলেন সিডনিতে। মাত্র তিন দিনের সফর। কিন্তু তাঁর উজ্জ্বলতা আর নেতৃত্বের গুণে এই তিনদিন ছিল দীর্ঘ। আমার মতো সাধারণ মানুষদের কোন সুযোগ ছিল না নিরাপত্তার বেড়ি ভেঙ্গে তাঁর কাছে যাবার। সঙ্গে ছিল লোকাল আওয়ামী লীগারদের নানা দলের বেষ্টনী। সে যাই হোক, প্রধানমন্ত্রীর নাগরিক সংবর্ধনা সভায় উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়েছিল। সভাপতি শেখ শামীমুল হকের বদান্যতায় সামনের সারিতে বসার কারণে খুব কাছ থেকে দেখলাম বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে। সে সভায় তিনি যা বলেছেন তাতে নতুন একটা প্রণোদনা ছিল। সাধারণত টিভিতে আমরা যা দেখি সে রকম মনে হয়নি তাঁকে। সময়মতো রসিকতা সময় বুঝে কঠিন হওয়া আর চমৎকার তথ্য উপাত্ত দিয়ে তিনি তাঁর সরকারের কর্মকান্ড ও উদ্যোগগুলো তুলে ধরেন। এর আগে তিনি যে কারণে এসেছিলেন সেই পদক গ্রহণ করেন সিডনির অভিজাত কনভেশন সেন্টারে। গ্লোবাল উইমেন লিডারশিপ এ্যাওয়ার্ড গ্রহণকালে আমার মতো অনেক বাঙালীর বুক গর্বে ফুলে উঠলেও আমরা আবার দেখেছি হিংসা ও পরাজয়ের বিকৃত চেহারা। কিছুদিন আগে লন্ডনে বিএনপির লোকজনেরা যা করেছিল এ ছিল তার পুনরাবৃত্তি। সে এক কায়দায় এক হিংস্রতায় তাদের কর্মী-সমর্থকরা নেমে এসেছিল গণতান্ত্রিক এই দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গায়। ভিডিওতে দেখলাম পথচারী অজিরা বিস্ময়ের সঙ্গে তাদের কান্ড-কারখানা দেখছিল আর হাসাহাসি করছিল। তারা ভেবেছে এ আবার কোন কৌতুক। কিন্তু মুশকিল হলো সেই প্রচারণা বা অপপ্রচারে ছিল কুৎসা আর মিথ্যাচার। তাদের পোস্টারের ভাষা ছিল অশালীন। হিটলারের ছবির সঙ্গে গুলিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার ছবিকে লিটল হিটলার বলার মতো দুঃসাহস দেখিয়েছে তারা। তাদের ওজর আপত্তি বা প্রতিবাদ গণতান্ত্রিক হলে কোন কথা ছিল না। সেটা হয়নি। সেই ধারাবাহিকতা নেই বলেই আজ দলটির এই হাল। যখন তারা দেশে ব্যর্থ বারবার চেষ্টা করেও মানুষকে নিজেদের মতো করে রাগিয়ে তুলতে পারছে না তখন তাদের আশ্রয় বিদেশের মাটি। এসব দেশে বহুকষ্টে আমরা সবাই মিলে গড়ে তুলেছি জাতিগত পরিচয়। আজকের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশের ইমেজ আগের মতো না। এখন বাংলাদেশ একরকম সম্মান ও গৌরব জাগানিয়া নাম। এদেশের প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল তাঁর বাসভবনে নিয়ে গিয়ে দেখা করেছেন শেখ হাসিনার সঙ্গে। যাতে প্রমাণিত এই সম্পর্ক এখন মর্যাদার। সেই জায়গাটা দেশের জন্য কল্যাণের। আমাদের দেশের ওপর চাপিয়ে দেয়া রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে অস্ট্রেলিয়ার সাহায্য বা সমর্থন ফেলনা নয়। সে প্রতিশ্রুতিও আদায় করেছেন শেখ হাসিনা। তাদের আলাপের ভেতর ছিল উভয় দেশের সম্পর্ক ও আর্থিক বিষয়ে সহযোগিতা। এদেশে আমাদের মেধা ও শ্রমের অভিবাসন বা চাকরি নিশ্চিত যত বেশি হবে তত হবে মঙ্গল। বলাবাহুল্য, আজকের দুনিয়া বিশেষত এসব দেশের কাছে মৌলবাদ ফ্যাসিজম কিংবা অগণতান্ত্রিকতাই মূল দুশমন। বিএনপির চতুর নেতারা সেটা জেনে আর কোন অস্ত্র না পেয়ে তা ব্যবহার করার অপচেষ্টা চালিয়েছিলেন। কাজ হোক বা না হোক এতে দেশের সুনাম ও ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়েছে। যে আসুক আর যেই থাক গদিতে আমাদের এই অসভ্য আচরণ বন্ধ করতেই হবে। না হলে আমরা কোন দিনও বিদেশে আমাদের ইজ্জত বা সম্মান উঁচু করে চলতে পারব না। পরের সন্ধ্যায় সংবর্ধনা সভায় তাদের ফুলের তোড়া দিতে দেখে কেউ কেউ কথা বলার সুযোগ পেয়েছে দেখে যারপরনাই খুশি হয়েছিল। সংবর্ধনা সভাটি আওয়ামী লীগের ব্যানারে হলেও এর নামছিল নাগরিক সংবর্ধনা। কিন্তু এদেশের পেশাজীবী কিংবা যে কোন মেধার কোন মানুষকেই তাঁরা কিছু করতে দেননি। দুই লাইন কথা বলারও সুযোগ দেননি দেখে মনে হলো নাগরিক সংবর্ধনার বিশিষ্ট বা বক্তা মানে আওয়ামী লীগের কিছু নেতা। আরও একটা বিষয় চোখে পড়ল, যারা সেদিন মঞ্চ আলো করে ভাষণ দিলেন এবং ঐক্যের কথা বললেন সভার সভাপতিকে বাদ দিলে সবাই তারা একে অপরের সর্বনাশ আর নেতৃত্ব বিনষ্টে তৎপর। এই সেদিনও যিনি আমাদের ডেকে নিয়ে আরেক দলের প্রবীণ আওয়ামী নেতা এবং দীর্ঘকালের সভাপতির ব্যাপারে গালিগালাজ করেলন মুখোশ খুলে দেবেন বলে হুমকি দিলেন বা লিখলেন, তাকেও দেখলাম গদগদ হয়ে ঐক্যের ভিডিও ছেড়েছেন। এই ভন্ডামি বা এই অসততাই আওয়ামী লীগের বিপদ। শেখ হাসিনা জানলেনই না কোথায় আসল গলদ। তারা দেখা করে বা কথা বলে নিজেদের সাফাই ছাড়া আর কিছুই গাইবেন না। ফলে যারা এটুকু বুঝে নিয়েছি জননেত্রীর প্রজ্ঞা আর মেধাই হবে পথনির্দেশিকা। তিনি অবশ্য সব জানেন। আর জানেন বলেই তাঁর ভাষণের কোথাও অতিরঞ্জনকারী তোষামোদিদের নাম বা কথা উল্লেখ করেননি। আমার মনে হয়েছে প্রধানমন্ত্রী এখন অনেক প্রাজ্ঞ আর ধীশক্তির অধিকারিণী। আমরা কাছ থেকে দেখে বুঝেছি তাঁর হাতেই নিরাপদ বাংলাদেশ। মঞ্চ থেকে গণফোরামের নেতা একুশে পদকপ্রাপ্ত রণেশ মৈত্রকে কুশল জানিয়ে মাথানাড়া আমার মতো সাধারণ একজন মানুষের সালামের জবাব দেন বলেই আমরা তাঁকে ভালবাসার আসনে রাখি। রাখতে বাধ্য হই। এদেশে মানে সিডনিতে এবার তাঁর আগমনের একটা মর্মস্পর্শী দিক ছিল ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত জাতির জনকের মূর্তিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ। আমার মনে হয়েছে বিষয়টা সিম্বলিক। বঙ্গবন্ধু, যিনি আমাদের ইতিহাস, যিনি দেশ, পতাকা ও মাটির জনক তিনি সময়াভাবে অল্প সময়ে এদেশে আসতে পারেননি। না এলেও আপন মহিমায় স্থাপিত তাঁর এই ভাস্কর্য তো তিনিই। আর তাতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা হলো তাঁর কন্যার আগমনে। শেখ হাসিনার সেই পুষ্পস্তবক দেয়ার ছবিটি এযাবত কালের সেরা ছবি। যা দেখে মনে হয়েছে যেন প্রশান্তপাড়ে পিতা-পুত্রীর মিলন। আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি যে সমর্থন দেখলাম তাতে এটা নিশ্চিত এতদিনের অপপ্রচার দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রে মুষড়ে পড়া প্রবাসী বাংলাদেশী জনগোষ্ঠীতে এসেছে নতুন প্রাণের স্পন্দন। এখন এখানকার লোকাল লিডার নামের নেতারা অনৈক্য মিটিয়ে দলকে চাঙ্গা রাখলে সামনের নির্বাচনে শুভ প্রভাব পড়বে। আরও একবার প্রধানমন্ত্রীর শুভাগমনের প্রত্যাশায় থাকল এই দেশ ও এদেশের বাংলাদেশীরা।
×