ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জয়পুরহাটে ইটভাঁটির গ্যাসে পুড়ল ৬০ বিঘা জমির ধান

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ২৯ এপ্রিল ২০১৮

জয়পুরহাটে ইটভাঁটির গ্যাসে পুড়ল ৬০ বিঘা জমির ধান

নিজস্ব সংবাদদাতা, জয়পুরহাট, ২৮ এপ্রিল ॥ ইটভাঁটির চিমনি থেকে নির্গত গ্যাস ও তাপে কৃষকের কষ্টে উৎপাদিত বোরো ধান পুড়ে গেছে। এছাড়া ইটভাঁটির কাছের আম ও নারকেল গাছের ফল পুড়ে গেছে। জমির ধান পুড়ে যাওয়ায় কৃষকেরা এখন মাথায় হাত দিয়ে বসেছে। সদর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে মেসার্স হারুন এ্যান্ড ব্রাদার্স ব্রিকস ফিল্ড থেকে এ ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় প্রায় ১ শত বিঘা জমির বোরো ধানা পুড়ে গেছে ব্যবসায়ী হারুনুর রশিদের ইটভাঁটির চিমনি থেকে নির্গত গ্যাস, ধোঁয়া ও তাপে। মাঠ পর্যায় ঘুরে অন্তত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের আহাজারিতে ঘটনার গভীরতা বোঝা যায়। ইতোপূর্বে গত ২ বছরে একইভাবে চিমনি থেকে নির্গত গ্যাসে কৃষকের ধান পুড়লেও লোক দেখানো ক্ষতিপূরণ দিয়ে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে কৃষকের মুখ বন্ধ করা হয়। সে সময় কৃষকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেয়ার পর তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়ার পর কৃষককে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হলেও তারা তেমন ক্ষতিপূরণ পায়নি। এবারেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় কৃষকের মাঝে ক্ষোভ এবং হতাশা দেখা দিয়েছে। বালিয়াতর গ্রামের আয়মা বেগম জানান, ঋণ নিয়ে আমি এক বিঘা জমি নিয়ে ছেলের সহায়তায় ধান লাগিয়েছিলাম। ধান পুড়ে যাওয়ায় আমাদের কপালও পুড়েছে। এখন খাওয়া তো দূরে থাক ঋণ কিভাবে শোধ করব তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছি। একই গ্রামের রিয়াজুল ইসলাম, আবির হোসেন, জহুরুল ইসলাম, মামুনুর রশিদ, জরিনা বিবি, আরিফুল ইসলাম, আবেদ হোসেন, নেসার হোসেন, রঘুনাথপুর গ্রামের আব্দুর রহমান, মুকুল হোসেন, শরিফুল ইসলাম, ফারাজ উদ্দিন ও তার ভাই সাহেব আলী, থিপুর গ্রামের আবুল কাশেমসহ বহু কৃষকের ফসল পুড়ে গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা অধিকাংশই হতদরিদ্র এবং প্রান্তিক চাষী। যারা বিভিন্ন ব্যাংক এবং এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে জমির পেছনে ব্যয় করেছে। এছাড়া ভাটার পাশে আম গাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমগাছ ইজারাদার মতিউর রহমান জানান, আমরা টাকা খরচ করে ইজারা নিয়েছি। এখন আমাদের গাছের আম পুড়ে গেছে। ফলে আমাদের মাথায় হাত পড়েছে। এছাড়া নারকেল গাছের ডাব নারকেল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এলাকার মানুষ তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। বারবার একই ভাঁটা থেকে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও দেখার কেউ নেই। এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, বিষয়টির ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। জানা গেছে ইটভাঁটির চিমনি অন্তত ৮০ ফুট লম্বা হওয়ার কথা থাকলেও এ ভাটার চিমনি মাত্র ৫৫ ফুট রয়েছে। এমএইচবি মার্কার ইট প্রস্তুতকারী মেসার্স হারুন এ্যান্ড ব্রাদার্স ব্রিকস ফিল্ডের লাইসেন্স নবায়ন করেনি পরিবেশ অধিদপ্তর। পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের বগুড়া অফিসের সিনিয়র কেমিস্ট আসাদুল ইসলাম জানান, ২০১৩ সালে প্রণীত আইনের বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ভাঁটা মালিকরা হাইকোর্টে রিট করে এসব ভাঁটা চালু রেখেছে। তিনি জানান, গত শনিবার আমরা বগুড়ায় রাজশাহী বিভাগের সকর ইটভাঁটির মালিকদের নিয়ে ওয়ার্কশপ করে চিমনি থেকে ধোঁয়া, গ্যাস ও তাপ বের করা নিয়ে সতর্কতা মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছিলাম। তিনি জানান, কৃষকের ধান পুড়ে যাওয়ার বিষয়টি খোঁজ নেব। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেরাজুল ইসলাম জানান অভিযোগ পেয়ে মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করে ৬০ বিঘা জমির ফসল পুড়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। তবে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে তিনি জানান। জেলা পরিষদ সদস্য জাহাঙ্গীর আলম জানান, বারবার ঐ ভাঁটার গ্যাস থেকে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তাদের পাশে কেউ নেই। বারবার কেন এই ঘটনা ঘটছে জানতে চাইলে তিনি সে জবাব না দিয়ে বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।
×