ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যশোর- বেনাপোল- খুলনা সড়কে দুর্ভোগ

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ২৮ এপ্রিল ২০১৮

যশোর- বেনাপোল- খুলনা সড়কে দুর্ভোগ

সাজেদ রহমান, যশোর অফিস ॥ চলতি অর্থবছরে যশোর-বেনাপোল ও যশোর-খুলনা মহাসড়কের মূল সংস্কার কাজ শুরু হচ্ছে না। আগামী অর্থবছরে সড়ক দুটির নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। তবে আসছে রোজার ঈদের আগে যশোরের সব রাস্তা চলাচলের উপযোগী করা হবে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ যশোর অফিস সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। গত বছরের কোরবানির ঈদের ১০ দিন আগে সড়কগুলো চলাচলের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় জোড়াতালি দিয়ে সড়কগুলো মেরামত করা হয়। কিন্তু মাত্র ৩ মাস পর সেই আগের অবস্থাতেই ফিরে গেছে সড়কগুলো। এতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন মানুষ। বিষয়টি স্বীকারও করেছেন যশোর সদর আসনের এমপি কাজী নাবিল আহমেদ। তিনি বলেন, যশোরের সব জাতীয় সড়কের অবস্থা খারাপ। আমি সড়ক ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আলাপ করেছি। তিনি বলেছেন আসছে ঈদের আগেই এসব সড়কের কাজ শুরু করবেন। তবে সওজ বলছে, ৫টি জাতীয় সড়ক আসছে রোজার ঈদের আগেই চলাচলের উপযোগী করা হবে। তবে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মূল কাজ আগামী অর্থবছরের আগে শুরু করা যাবে না। জাতীয় সড়কগুলো হলোÑ যশোর-খুলনা, যশোর-বেনাপোল, যশোর-ঝিনাইদহ, যশোর-মাগুরা এবং যশোর-নড়াইল। এছাড়া রাজারহাট, মনিরামপুর, কেশবপুর, চুকনগর কেশবপুর-সরষকাঠি-কলারোয়া সড়ক এবং পালবাড়ী-দড়াটানা-মনিহার হয়ে মুড়লী পর্যন্ত সড়কগুলো ভেঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ যশোর অফিস থেকে মনন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, যশোর-খুলনা মহাসড়ক ৩৮ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে চাঁচড়া মোড়, মুড়লী, রাজঘাট, বসুন্দিয়া, প্রেমবাগ, চেঙ্গুটিয়া ও ভাঙ্গাগেট পর্যন্ত বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যশোর-বেনাপোল সড়কের ৩৮ কিলোমিটারের মধ্যে পুলেরহাট থেকে নাভারন মোড় পর্যন্ত সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী। সড়কটির এমন অবস্থা যে গাড়ি চলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। যশোর থেকে বেনাপোল যেতে ৪০ মিনিট সময় লাগলেও রাস্তা খারাপের কারণে সময় লাগছে দেড় ঘণ্টা। সর্বশেষ সড়কটির গাছ রেখেই সংস্কার কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে ১২ কিলোমিটার সড়ক বিধ্বস্ত। যশোর-মাগুরা সড়কের ২২ দশমিক ৫ কিলোমিটার সড়কের কদমতলী, পুলেরহাট থেকে লেবুতলা বাজার ও রজনীগন্ধা পাম্প পর্যন্ত সড়ক বেহাল। সরেজমিন দেখা গেছে, যশোরÑখুলনা সড়কের মনিহার থেকে বকচর মুড়লী পর্যন্ত সড়কে বড় ধরনের গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি। ইতঃপূর্বে সংস্কারে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও সড়কটিতে কাটছে না দুর্ভোগ। ইতিমধ্যে সড়ক ও জনপদ রাস্তার মাটি পরীক্ষা করেও কোন সুফল পাননি। প্রতিদিনই এ রাস্তা দিয়ে খুলনা, ঢাকা, কুষ্টিয়াসহ আঞ্চলিক রুটের বাস-ট্রাক চলাচল করে। কিন্তু মণিহার-মুড়লী পর্যন্ত সড়ক চলাচলে চরম অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। কারণ রাস্তার মাঝের অংশ ফুলে-ফেঁপে উঁচু ঢিবিতে পরিণত হয়েছে। যাতে গাড়ির নিচের অংশ বেঁধে যাচ্ছে। আর ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। যশোর-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়কের ভাঙ্গা অংশে গত ৬ মাস আগে বিটুমিনের ওপর ইট বিছিয়ে যোগাযোগ ঠিক রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই আগের অবস্থাতে ফিরে গেছে। মহাসড়কের যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া, পুলেরহাট ও ঝিকরগাছা উপজেলার সেতুর দুইপাশে আমদানি ও রপ্তানি পণ্যবোঝাই ট্রাক ও যাত্রীবাহী যানবহনের তীব্র যানজটে মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। বর্তমানে সড়কটি আবারও জোড়াতালি দিয়ে উপযোগী করার কাজ শুরু হয়েছে। সওজ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৭ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৩ সালে যশোর শহরের দড়াটানা মোড় থেকে নাভারণ মোড় পর্যন্ত ওই মহাসড়কের ২৩ কিলোমিটারে ওভারলে (বিটুমিনের আস্তারণ) সংস্কার কাজ করা হয়। নিম্নমানের পাথরকুচি ও বিটুমিনের কারণে সংস্কারের এক বছর না যেতেই মহাসড়কের ওই অংশের কয়েকটি জায়গার বিটুমিন ওঠে বেহাল হয়ে যায়। যশোর শহরের চাঁচড়া ডালমিল এলাকা থেকে ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি পর্যন্ত অন্তত ২০ কিলোমিটারের মধ্যে গোটা সড়কে বিটুমিনের আস্তরণ উঠে বেহাল হয়ে গেছে। ঝিকরগাছা উপজেলা সদরে কপোতাক্ষ নদের ওপর নির্মিত সেতুর দুইপাশের অন্তত আধা কিলোমিটার জুড়ে অত্যন্ত বেহাল অবস্থা। দুইপাশেই বিটুমিনের ওপর ইট বিছিয়ে রাখা হয়েছে। সেতুর পাটাতন ফেটে গেছে। যে কোন সময়ে পাটাতন ভেঙ্গে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে। যে কারণে যানবাহনের চালকেরা ধীরে ধীরে সেতু পারাপার হচ্ছেন। এতে দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ ব্যাপারে যশোর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রহিম বলেছেন, যশোর-খুলনা এবং যশোর বেনাপোল জাতীয় সড়কের মূল অংশের কাজ চলতি অর্থবছরে শুরু করা সম্ভব হবে না। আগামী অর্থবছরে সংস্কার কাজ শুরু হবে। তবে আসছে রোজার ঈদের আগেই সব সড়ক চলাচলের উপযোগী করা হবে। কেননা ইতিমধ্যে যশোর-নড়াইল সড়কের ২২ কিলোমিটারের মধ্যে ১৩ কিলোমিটার সংস্কার করা হয়েছে। একইভাবে যশোর-মাগুরা সড়কের ২২ কিলোমিটারের মধ্যে ৭ কিলোমিটার, যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের ২৩ কিলোমিটার সংস্কার করা হয়েছে।
×