ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খাজা রহমত উল্যাহ ক্লাব কাপ হকি, আবাহনী ১-০ মেরিনার

মেরিনারকে হারিয়ে আবাহনীর শিরোপা অক্ষুণ্ণ

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৩ এপ্রিল ২০১৮

  মেরিনারকে হারিয়ে আবাহনীর শিরোপা অক্ষুণ্ণ

রুমেল খান ॥ একটি দল ফাইনাল জিতলে কেবল শিরোপা ধরে রাখাই নয়, ক্লাব কাপে ঊষা-মোহামেডানের সর্বাধিক চারবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ডও ছুঁয়ে ফেলবে। আরেকটি দল জিতলে এটি হবে তাদের ইতিহাসে প্রথম ক্লাব কাপ হকির ট্রফি জয়। রবিবার খাজা রহমত উল্যাহ ক্লাব কাপ হকির ফাইনালে মেরিনার ইয়াংস ক্লাবকে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলো ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে জিতে আবাহনী এ নিয়ে ঊষা-মোহামেডানের মতো যুগ্মভাবে সর্বাধিক চারবার শিরোপা জেতার কৃতিত্ব দেখালো। দুর্ভাগ্য মেরিনারের। এ নিয়ে তারা দ্বিতীয়বার ফাইনাল খেলে প্রতিবারই হারলো। এর আগে ২০০৪ সালে তারা ফাইনালে হেরেছিল এই আবাহনীর কাছেই। ফলে তাদের হারিয়ে ১৪ বছর আগের হারার প্রতিশোধটা আর নিতে পারলো না তারা। খেলা শুরু হওয়ার কথা ছিল বিকেল ৬টায়। কিন্তু খেলা শুরুর মিনিট পাঁচেক আগে শুরু হয়ে যায় আরেক খেলা। কালবৈশাখীর ঝড়ের ভয়াবহ খেলা। তীব্র ও ভারি অঝোর বর্ষণ। সেই সঙ্গে ভয়ঙ্কর সব বজ্রপাত ‘ফ্রি’! এই অবস্থায় টার্ফে খেলা সম্ভব। কিন্তু বজ্রপাতে খেললে যে বেঘোরে মারা পড়ার সমূহ সম্ভাবনা। কাজেই প্রাণের ঝুঁকি থাকায় খেলা শুরু করা যায়নি। প্রায় চল্লিশ মিনিট পর বৃষ্টি ও বজ্রপাত থেমে যায়। তবে টার্ফ জলমগ্ন থাকায় সেটা খেলার উপযোগী করতে আরও লেগে যায় মিনিট বিশেক। তারপর সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হয় খেলা। অথচ একসময় মনে হয়েছিল খেলাটি না আবার বাতিল হয়ে যায়। প্রেসবক্সে এক রসিক সাংবাদিক তো বলেই বসলেন, ‘এখানে আজ হকি নয়, হবে ওয়াটার পোলো খেলা।’ তবে খেলা শুরুর পর ঝামেলা আরও হয়েছে। নতুন স্থাপিত যে ফ্লাডলাইটে এবারই হচ্ছে ঘরোয়া হকির আসর, সেই ফ্লাডলাইটই কিনা গড়বড় করেছে মাঝে মধ্যেই। খেলা চলে, হঠাৎই লাইটের ঔজ্জ্বলতা কমে যায়। এ কারণে একবার বন্ধ ছিল মিনিট পাঁচেকের মতো। পুরো ম্যাচে পেনাল্টি কর্নার (পিসি) পায় আবাহনী ৪টি আর মেরিনার ১টি। যদিও প্রথমার্ধে কোন দলই পিসি পায়নি। এই অর্ধে আকাশী-নীলরাই বেশি আধিপত্য বিস্তার করে খেলে। সেই সঙ্গে বিপজ্জনক আক্রমণও তারাই করে বেশি। মেরিনারের রক্ষণভাগ তাদের আক্রমণ ঠেকাতেই ব্যস্ত ছিল বেশি। তাই বলে তারা যে কোন আক্রমণ করেনি তা নয়, কিন্তু তাদের কোন আক্রমণই সেভাবে দানা বাঁধতে পারেনি। এক্ষেত্রে আবাহনীর রক্ষণভাগের কৃতিত্বই ছিল বেশি। ১৬ মিনিটে আক্রমণ করে আবাহনী। মালয়েশিয়ান ফরোয়ার্ড ফিরদাউস বল নিয়ে মেরিনারের ডি-বক্সে ঢুকে সজোরে হিট করলে সেই বল ডাইভ দিয়ে গোলপোস্টে পুশ করেন তার সতীর্থ কৃষ্ণ। কিন্তু গোল বাতিল হয়ে যায়। কারণ দুই আম্পায়ার আলোচনা করে জানান, বল আউটপোস্টে লেগেছে, তাই গোল হবে না। আবাহনীর খেলোয়াড়রা এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করলেও তাতে কান দেননি আম্পায়ার। ২৫ মিনিটেও আরেকবার ভাগ্য বিড়ম্বনার শিকার হয় আবাহনী। মেরিনারের ডি-বক্সের বাইরে থেকে আবাহনীর আশরাফুল ইসলামের হিট মেরিনারের এক খেলোয়াড়ের স্টিকে লেগে পোস্টে ঢোকে। গোলের আনন্দ উদযাপনও শুরু করে দেয় আবাহনীর খেলোয়াড়রা। কিন্তু আম্পায়ার সেলিম লাকী এবারও গোল বাতিল করে দেন। কারণ নিয়ম অনুযায়ী হকিতে আত্মঘাতী গোল হয় না এবং ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেয়া হিটেও গোল হয় না। কাজেই এবারও গোলবঞ্চিত হয় ব্লু ব্রিগেড দল। প্রথমার্ধে ০-০ স্কোরলাইন নিয়েই বিরতিতে যায় উভয় দল। দ্বিতীয়ার্ধে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। অবশেষে ৪১ মিনিটে ভাগ্য সহায় হয় আবাহনীর। ম্যাচের প্রথম পিসি পায় তারা। ইজওয়ানের সূচনা, সারোয়ার হোসেনের স্টপ এবং সোহানুর রহমান সবুজের গোলে এগিয়ে যায় আবাহনী (১-০)। অবশেষে ‘জেনুইন’ গোল করার আনন্দে ফেটে পড়ে মাহবুব হারুনের শিষ্যরা। ৬৮ মিনিটে পিসি পায় মেরিনার। কিন্তু তা থেকে গোল করতে ব্যর্থ হয় তারা। এরপরও বাকি দুই মিনিট আবাহনীর গোলমুখে প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করেও সমতায় ফিরতে পারেনি তারা। জয়ের আশা ধূলিসাৎ হয়ে যায়। হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়ে অলিভার কার্টজের শিষ্যরা।
×