ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ছাত্রলীগকে নতুন করে সাজানোর কথা জানালেন কাদের

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২১ এপ্রিল ২০১৮

ছাত্রলীগকে নতুন করে সাজানোর  কথা জানালেন কাদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ছাত্রলীগকে নিয়ে নতুন করে ভাবছে আওয়ামী লীগ। সামনে ছাত্রলীগের সম্মেলন আছে। সেই সম্মেলনে ছাত্রলীগকে নেতৃত্ব গঠনের দিক দিয়ে এবং কাজের দিক থেকে নতুন মডেলে করার নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আছে। আমরা সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি। একটু ধৈর্য ধরুন। নেতৃত্বের গঠন এবং কাজের ধরনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নতুনভাবে সাজানোর পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন আওয়ামী লেিগর সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শুক্রবার দুপুরে রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের প্রচার উপকমিটির এক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ সময় লন্ডনের অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উদ্দেশে বলেন, রাজনীতি যখন করেন, তখন বিদেশে বসে দেশের রাজনীতির অঙ্গনে শব্দবোমা ফাটাচ্ছেন কেন? আসুন, রাজপথ মোকাবেলা করুন। কত সাহস আছে। রাজনীতি যখন করেন জেলে যাওয়ার সাহস নেই, সেই রাজনীতি কোন দিন সফলকাম হবে না। রাজনীতি করলে জেল জুলুম সহ্য করতে হবে উল্লেখ করেন। তারেককে ফেরানোর চেষ্টা ও আগামী নির্বাচনের মধ্যে কোন সম্পর্ক আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনের আগে তারেক রহমানকে কে ফিরিয়ে আনবে? আমরা? বিদেশে পালিয়ে থাকা দ-িত আসামিকে আইনগতভাবে ফিরিয়ে আনতে আদালতের নির্দেশ আছে। সেক্ষেত্রে কোন সমীকরণের বিষয় নেই।’ সম্প্রতি কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগ দিতে লন্ডন সফরে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে দেশে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, তারেক রহমানকে অবশ্যই দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের মুখোমুখি করতে হবে। চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নে জবাবে এ বিষয়ে অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। ছাত্রলীগ হোক, আওয়ামী লীগ হোক, অপকর্ম করে কেউ পার পেয়ে যেতে পারেনি। এখানে শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থানে। কোন অপরাধের শাস্তি হয়নি বলুন? অপরাধ করে পার পেয়ে যায়, এই কালচার আওয়ামী লীগে নেই, বিএনপিতে থাকতে পারে উল্লেখ করেন। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার নিয়ে বিএনপির দাবির বিষয়ে বলেন, বিএনপি নিজেরাই তো ঠিক নেই। কখনও বলে সহায়ক সরকার, কখনও বলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। কোনটা গ্রহণ করব?’ পরিষ্কার বলে দিচ্ছি, আর পাঁচ-ছয় মাস পরে নির্বাচনের তফসিল। নির্বাচনের আগে এখন আর সংবিধানের বাইরে যাওয়া কোন সুযোগ নেই। তারা বাইরে যেতে চাইলে চিৎকার করতে পারেন, আন্দোলন করে আদায় করবেন। এই কথা তো শুনেছি নয় বছর আগে থেকে। নয় বছরে নয় মিনিটও দাঁড়াতে পারেননি।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বারবার সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়ে সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বিরোধ সৃষ্টির উস্কানি দিচ্ছে। যেখানে প্রয়োজন আমরা কিংবা সরকার কখনও বলে না সেনাবাহিনী মোতায়েন হবে না। প্রয়োজন হলে পরিস্থিতি বলে দেবে। কিন্তু আপনি এখন সেনাবাহিনী, সেনাবাহিনী বলে চিৎকার করছেন, তার মানে একটা উস্কানিমূলক প্রবণতা সৃষ্টি করতে চাইছেন। সেনা বাহিনীর সঙ্গে সরকারের একটা বিরোধ বাধানোর উস্কানি দিচ্ছেন। এটা কিন্তু দেশের জন্য ভাল নয়। বিএনপির উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা নিজে যা করেননি, সেটা দাবি করেন কেন? এটা অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কি সেই রকম পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে? তাহলে অযৌক্তিক দাবি, এই দাবিটা করে সেনাবাহিনীকে কেন বিতর্কিত করতে চাইছেন? সে রকম পরিস্থিতি হলে সেনা বাহিনী নিয়োগ করবে কী না- সেটা ইলেকশন কমিশন সরকারের সঙ্গে আলাপ করবে। ইলেকশন কমিশন ডিমান্ড দেবে। কারণ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা নির্বাচনের সময় ইসির অধিনে গেলেও সেনাবাহিনী কিন্তু যাবে না। সেনাবাহিনী প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে। সেনাবাহিনী নিয়োগ করতে হলে সরকারকে ইসি অনুরোধ করতে হবে। এই সেমিনারে বক্তৃতায় ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন আমি এ ধরনের সেমিনারের পক্ষপাতি নই। কারণ আগামী নির্বাচন খুবই নিকটে। এখন আমাদের এ্যাকশন প্রোগ্রাম নিতে হবে। বসে বসে ঘণ্টা পর ঘণ্টা আমরা সেমিনার করব, প্রচার সেল তা করেও আসছে। কিন্তু এ মুহূর্তে এটার আর প্রয়োজন নেই। এখন অনেক কাজ রয়েছে। এখন কৌশল নির্ধারণ করতে হবে, কোন সময়ে কোন কাজ করব, তা আমাদের ঠিক করতে হবে। এয়ার কন্ডিশনড রুমে সেমিনার না করে তাপদগ্ধ মাঠে বেরিয়ে পড়তে হবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আর ছয় মাস পরে নির্বাচনের শিডিউল। এখন পর্যন্ত আমাদের থিম স্লোগান ঠিক হয়নি। গতবার যেমন ছিল, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ, ভিশন ২০২১’। কিন্তু এবারের স্লোগান এখনও ঠিক হয়নি। আমরা ফ্রি স্টাইলে একজন এক একটা বলে যাচ্ছি।’ কিছু স্লোগানের প্রস্তাব রেখে ওবায়দুল কাদের বলেন, সেটা হতে পারে, ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’, ‘বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ অথবা ‘সবার জন্য সোনার বাংলা’। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারে আওয়ামী লীগের অবস্থানের দুর্বল বলেও মনে করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘এটা খুবই স্ট্রং (শক্তিশালী) নেটওয়ার্ক, এটাকে ইগনোর (অগ্রাহ্য) করার কোন সুযোগ নেই। এটাকে প্রচার সেল গুরুত্ব দেবে বলে আমি মনে করি। এক প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আচরণবিধি পৃথিবীর সব গণতান্ত্রিক দেশে, বিশেষ করে পার্লামেন্টারি ডেমোক্রেসি যেসব দেশে আছে, যে কোন নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী ক্যাম্পেন করতে পারেন। কিছুদিন আগে ত্রিপুরা রাজ্যের নির্বাচনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রচার চালিয়েছেন। আমাদের দেশে মন্ত্রীও পারবে না, এমপিও পারবে না। সব দেশে যেটা হচ্ছে, আমাদের দেশে সেই সুযোগ কেন থাকবে না? আমরা কিন্তু মন্ত্রীর জন্য চাই না। আমরা নির্বাচন কমিশনকে একটা প্রোপোজাল দিয়েছি। নির্বাচন কমিশন গ্রহণ করতেও পারে, নাও করতে পারে। মন্ত্রী হওয়াটা কি আমার অপরাধ? ফখরুল সাহেব রংপুর সিটি নির্বাচনে ক্যাম্পেন করলেন। আমি সেখানে যেতে পারলাম না। তিনি মহাসচিব, আমিও মহাসচিব। এটা কি লেভেল প্লেইং ফিল্ড? বেগম জিয়া করতে পারবেন, শেখ হাসিনা পারবেন না। এটা কি লেভেল প্লেইন ফিল্ড? আমি যুক্তির ভাষায় কথা বলছি, এখানে জোড়াজুড়ির করে তো কিছু হবে না।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ফরাসউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজস্ব ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ঢেলে সাজাতে হবে। এটা কোন কঠিন কাজ নয়। ট্যাক্স সিস্টেমকে সম্পূর্ণভাবে ঢেলে সাজাতে হবে, এটাও কোন কঠিন কাজ নয়। সুদের হারের ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ঢেলে সাজানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি। ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘এই তিনটা কাজ যদি আমরা করতে পারি তাহলে ২০২৫ সালে যেখানে আমাদের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও আছে ১০, তখন হবে ২০। আমার ইনভেস্টমেন্ট জিডিপি রেশিও এখন আছে ৩১, তখন হবে ৩৭, মাসিক প্রবৃদ্ধি এখন আছে ৭.৫৬ তখন হবে ১০।’ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-পরিষদের চেয়ারম্যান এইচটি ইমামের সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান প্রমুখ। সেমিনার সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান শফিক উজ জামান।
×