ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

মহিলা সমিতি মঞ্চে পক্ষকালব্যাপী বৈশাখী নাট্যোৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৭ এপ্রিল ২০১৮

মহিলা সমিতি মঞ্চে পক্ষকালব্যাপী বৈশাখী নাট্যোৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নতুনের বারতা নিয়ে বিপুল বৈভবে এসেছে বাংলা নববর্ষ। শনিবার পহেলা বৈশাখে ১৪২৫ বঙ্গাব্দ বরণের আনুষ্ঠানিকতা রাজধানী ছিল দারুণ রঙিন। এখনও ফুরোয়নি সেই বর্ণিলতা। সেই রেশ ধরে বৈশাখ মাসের তৃতীয় দিন সোমবার শহর ঢাকায় শুরু হলো নববর্ষ আবাহনের নতুন আরেকটি আয়োজন। ঢাকার বিভিন্ন নাট্যদলের পনেরোটি নাটক নিয়ে শুরু হলো বৈশাখী নাট্যোৎসব। বিকেল গড়ানো সন্ধ্যায় এ উৎসবের সূচনা হয়। নাট্যকর্মী ও নাট্যপ্রেমীদের সরব আগমনে মুখরিত হয়ে ওঠে উৎসব আঙিনা বেইলি রোডের মহিলা সমিতি প্রাঙ্গণ। আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হবে দর্শকনন্দিত ১৫টি নাটক। নববর্ষ উপলক্ষে পক্ষকালব্যাপী এ উৎসবের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্টপোষকতায় উৎসবের সহযোগী বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। বৈশাখী সন্ধ্যায় অতিথিদের প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে উৎসবের সূচনা হয়। উৎসব উদ্বোধনের পাশাপাশি প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। স্বাগত বক্তব্য দেন নাট্যোৎসব কমিটির আহ্বায়ক রামেন্দু মজুমদার। শুভেচ্ছা বক্তব্য শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ও ফেডারেশনের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী লাকী। প্রদীপ প্রজ্বলনে অংশ নেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ ও মহিলা সমিতির নির্বাহী সদস্য নীপা সারোয়ার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল আকতারুজ্জামান। উদ্বোধনী বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, এই মহিলা সমিতির মঞ্চেই বাংলাদেশের গ্রুপ থিয়েটারের চর্চা শুরু হয়েছিল। যখন আমরা শুরু করি, তখন এটিই ছিল একমাত্র মঞ্চ। সংস্কারের কারণে দীর্ঘদিন এই মঞ্চটি বন্ধ ছিল। তাই এর দর্শক হারিয়েছে। এ ধরনের আয়োজন দর্শক ফিরিয়ে আনতে কাজ করবে। সে সঙ্গে এ মঞ্চের ভাড়া রেহাতি হারে দিতে পুনরায় সরকার ভর্তুকি দিবে বলে আশ্বাস দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী। লিয়াকত আলী লাকী বলেন, মহিলা সমিতি মানেই আমাদের শিহরণ। গ্রুপ থিয়েটারের চর্চা এবং বিকাশে এ মঞ্চের ভূমিকা অপরিসীম। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে মঞ্চস্থ হয় আরণ্যকের দর্শকসমাদৃত প্রযোজনা রাঢ়াঙ রচনার পাশাপাশি নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন মামনুর রশিদ। সাঁওতাল বিদ্রোহের কাহিনীকে উপজীব্য করে নির্মিত হয়েছে নাটকটি। অধিকার আদায় করতে গিয়ে শোষণ আর অত্যাচারের শিকারের হতে হয় তাদের। বসতভিটা দখল করে নেয় সমাজের প্রভাবশালীরা। সাঁওতালদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা চালানো হয়। লেলিয়ে দেয়া হয় পুলিশকে। যখন তাদের ঘামে ফলানো ফসল কেটে নিয়ে যায় তখন তারা ফেটে পড়ে বিদ্রোহে। সাঁওতাল যুবক আলফ্রেড সরেনের নেতৃত্বে হাতেম ও গদাইয়ের সাঙ্গপাঙ্গদের সঙ্গে লড়াই বাধে। সামান্য তীর-ধনুক দিয়ে ভাড়া করা গু-াবাহিনীর সঙ্গে পেরে ওঠে না সাঁওতালরা। লড়াইয়ে করুণ পরাজয় ঘটে সাঁওতালদের। নিহত হয় তাদের নেতা আলফ্রেড সরেন। এভাবেই এগিয়ে যায় নাটকটির কাহিনী। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মামুনুর রশীদ, তমালিকা কর্মকার, শামীম জামান, জয়রাজ, শামীমা শওকত লাভলী, আমানুল হক হেলাল, হাসিম মাসুদ, আরিফ হোসেন আপেল, সাজ্জাদ সাজু প্রমুখ। আজ মঙ্গলবার উৎসবের দ্বিতীয় দিনে মঞ্চস্থ হবে নাট্যদল দেশ নাটকের প্রযোজনা নিত্যপুরাণ। কাল বুধবার তৃতীয় মঞ্চস্থ হবে ঢাকা থিয়েটার মঞ্চের নাটক ‘ঘর জামাই’। বৃহস্পতিবার চতুর্থ দিনে থিয়েটার মঞ্চস্থ করবে ‘মেরাজ ফকিরের মা’। এছাড়া উৎসবের বাকি দিনগুলোয় ধারাবাহিকভাবে মঞ্চস্থ হবে ঢাকা থিয়েটারের ‘ধাবমান’, লোক নাট্যদলের (সিদ্ধেশ্বরী) ‘কঞ্জুস’, পদাতিক নাট্য সংসদের (টিএসসি) ‘গুণজান বিবির পালা’, বটতলার নাটক ‘ক্রাচের কর্নেল’, আগন্তুক মঞ্চস্থ করবে ‘ধলেশ্বরী অপেরা’, থিয়েটার আর্ট ইউনিট মঞ্চস্থ করবে ‘গোলাপজান’, ঢাকা পদাতিক মঞ্চস্থ করবে ‘পাইচো চোরের কিচ্ছা’, প্রাচ্যনাট পরিবেশন করবে ‘সার্কাস সার্কাস’, প্রাঙ্গণেমোর মঞ্চস্থ করবে ‘কনডেমড সেল’, নাটগরিক নাট্যাঙ্গন উপস্থাপন করবে ‘ক্রীতদাসের হাসি’ এবং ৩০ এপ্রিল সমাপনী দিনে মঞ্চস্থ হবে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের নতুন নাটক ‘ওপেন কাপল’। শিল্পাঙ্গণে আজমির হোসেনের চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ॥ বুড়িগঙ্গার তীরে জন্ম চিত্রশিল্পী আজমির হোসেনের। আর শিল্পীর তরুণ্য কেটেছে নিউইয়র্কের হাডসন নদীর তীরে। এ দুই নদীর স্মৃতিকাতরতা উঠে এসেছে চিত্রকরের চিত্রপটে। সৃষ্টি হয়েছে নদীবাহিত ভিন্ন এক মনোভূমি। সেসব ছবির দেখা মিলছে রাজধানীর ধানম-ির শিল্পাঙ্গন গ্যালারিতে। সোমবার থেকে এই প্রদর্শনালয়ে শুরু হলো আজমির হোসেনের একক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। শিরোনাম ‘ফ্রম দ্য পেজেস অব মেমোরি’ বা ‘স্মৃতির ভাষ্য’। সন্ধ্যায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন চিত্রশিল্পী মনিরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প-পৃষ্ঠপোষক নাহিদ মাহতাব। আজমির হোসেনের কাজ সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন চিত্র সমালোচক মঈনুদ্দীন খালেদ। আজমির হোসেনের এ প্রদর্শনীতে সর্বমোট ৫০টি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে। প্রদর্শনী আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
×