ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাণের উৎসব বৈশাখ বরণ কাল ॥ দোকানে দোকানে বাহারি পোশাক

গ্রাম থেকে শহরÑ সর্বত্র ছেয়ে গেছে বৈশাখী সামগ্রী ও পোশাকে

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১৩ এপ্রিল ২০১৮

গ্রাম থেকে শহরÑ সর্বত্র ছেয়ে গেছে বৈশাখী সামগ্রী ও পোশাকে

রহিম শেখ ॥ কাল পহেলা বৈশাখ। বাঙালী সংস্কৃতির অনন্য এক উৎসব। শুধু সংস্কৃতি নয়, এই প্রথম উৎসব ঘিরে এখন পুরো দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি বাড়ছে। গ্রাম থেকে শহর; সর্বত্রই বৈশাখ উদযাপনে জমজমাট প্রস্তুতি চলছে। রাজধানীসহ সারাদেশের বিপণিবিতান, মার্কেট, শপিংমল, ফ্যাশন হাউস থেকে শুরু করে ফুটপাথে ছেয়ে গেছে বৈশাখী সামগ্রী ও রকমারি পোশাক। পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, জুতা, স্বর্ণ, হীরা, ফার্নিচার, ইলেক্ট্রনিক্স ও ইলেক্ট্রিক পণ্যের দোকানগুলোতে চলছে বাহারি সব ‘অফার’। উৎসবের চাহিদায় ইলিশের দাম খানিকটা বেড়েছে। তবে বাজার ও আকার ভেদে দামে রয়েছে বিস্তর ফারাক। এ বছর নববর্ষের ‘বোনাস’ রঙ্গিন করছে উৎসবকে। ফলে ব্যাংক থেকে নগদ টাকা উঠানোর পরিমাণও বেড়েছে। এসব কর্মকা-ে গোটা অর্থনীতির লেনদেন বাড়ছে কয়েকগুণ। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাজধানীর মার্কেট-বিপণিবিতানে চলছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা। রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমল ঘুরে দেখা গেছে, বৈশাখের বর্ণিল সাজে সেজেছে দেশীয় ব্র্যান্ডের দোকানগুলো। বিশেষ অফার ঘোষণা দিয়ে ফ্যাশন হাউসগুলো ছেলেদের লাল, সাদা, হলুদসহ বাহারি রঙের পাঞ্জাবি, শর্ট পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট বাজারে এনেছে। মেয়েদের জন্য রয়েছে, সালোয়ার-কামিজ, টপস, থ্রি-পিস। শুধু কি তাই, বাচ্চাদের জন্যও রয়েছে বিভিন্ন ডিজাইনের জামাকাপড়। সব আয়োজনই বৈশাখ বরণের জন্য। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ পর্যন্ত পোশাক বিক্রি গত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টদের ধারণা, বৈশাখ উপলক্ষে এবার শাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাকই বিক্রি হবে এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকার। এর সঙ্গে চুড়ি, মালা, দুল, মাটির তৈরি পণ্য, কুটিরশিল্পসহ নানা পণ্য বিক্রির টার্গেটও ছাড়িয়ে যাবে। নববর্ষ উপলক্ষে পোশাক কিংবা খাবারের পাশাপাশি ছাড় চলছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ইলেক্ট্রনিক পণ্যে। এ ছাড়া সোনা এবং ডায়মন্ডের ওপর দেয়া হয়েছে বিশেষ মূল্য ছাড়। একাধিক ফ্যাশন হাউসের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সারাবছর তাদের যে ব্যবসা হয় তার অর্ধেকই হয় রোজার ঈদে। বৈশাখে বিক্রি ২৫ শতাংশ। আর বাকিটা সারাবছর। জানা গেছে, এ বছরও বৈশাখী অর্থনীতির শক্তির সঞ্চার করছে নববর্ষের বোনাস। এ বোনাসের নগদ অর্থ চাঙ্গা করছে গোটা অর্থনীতিকে। এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে পুরো জাতি উৎসবে মেতে ওঠে। অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক দিক রয়েছে। কারণ এতে দেশে বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। বিশেষ করে নববর্ষের বোনাস বাড়তি চাহিদা তৈরি করছে। তার মতে, চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ ঠিক রাখতে পারলে এ উৎসব পুরোটাই ইতিবাচক। তবে এ সময় সরবরাহ পরিস্থিতি ঠিক রাখা যায় না। এতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থার (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষক নাজনীন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, বর্ষবরণের এই উৎসবটি একসময় ছিল শুধুই গ্রামাঞ্চলের উৎসব। এই উৎসবে এখন নগরের সম্পৃক্ততা বেড়েছে। বৈশাখ উপলক্ষে তৈরি হওয়া শাড়ি, কুটির শিল্প কিংবা খেলনায় থাকছে গ্রামীণ ছোঁয়া। এসব পণ্যের বাজারজাতকরণে বড় ভূমিকা রাখছে বৈশাখ। এসব পণ্যের নগরকেন্দ্রিক বাজার গড়ে উঠেছে। এর সঙ্গে চুড়ি, মাটির তৈরি পণ্য, কুটির শিল্পসহ নানা পণ্য তো রয়েছেই। বড় বিষয় হলোÑ এসব কাজে অনেকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। আবার উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে গ্রামের মানুষের কাছে ভাল অর্থ যাচ্ছে। পহেলা বৈশাখকে ঘিরে সবচেয়ে বেশি চাহিদা হচ্ছে ইলিশের। এক কেজি ইলিশের মূল্য এখন কত তা জানার আগ্রহের যেন শেষ নেই। গত ১৫ দিন ধরে রাজধানীর বাজারে এই মাছের দাম বাড়ছেই। তবে বাজার ও আকার ভেদে দামে রয়েছে বিস্তর ফারাক। বাড়তি চাহিদাকে সামনে রেখে আগোরা, স্বপ্ন, মীনা বাজারসহ বিভিন্ন সুপার শপিংমল দিচ্ছে নানা ধরনের খাদ্যপণ্যের আকর্ষণীয় অফার। নির্দিষ্ট পরিমাণের কেনাকাটায় দেয়া হচ্ছে ফ্রি ‘ইলিশ’ মাছ। অফার দিতে পিছিয়ে নেই পার্লারগুলোও।
×