ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সড়ক-মহাসড়কের কাছে ৯০ শতাংশ বিলবোর্ড অবৈধ

প্রকাশিত: ০৬:২১, ১২ এপ্রিল ২০১৮

সড়ক-মহাসড়কের কাছে ৯০ শতাংশ বিলবোর্ড অবৈধ

সমুদ্র হক ॥ সড়ক ও মহাসড়কের ধারে বিলবোর্ড স্থাপনে কোন নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। জাতীয় মহাসড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক ও সড়ক ধারের শতকরা ৯০ ভাগ বিলবোর্ড অবৈধ। মহাসড়কে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার অনেক কারণের মধ্যে একটি হলো, এলোমেলোভাবে এসব বিলবোর্ড স্থাপন। বিশাল এই বিলবোর্ড অনেক সময় গাড়ির চালকের দৃষ্টিভ্রম করে। অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা ঘটে। এদিকে সড়ক ও মহাসড়কের ধারের সরকারী ভূমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। সড়ক ও মহাসড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের আওতাধীন রাস্তার ধারের জমির বেদখল রোধে জমি ব্যবহার ও বিলবোর্ড স্থাপন এবং ভূমি ব্যবহারকে ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালার আওতায় আনা হয়েছে। সরকারীভাবে বলা হয়েছে, এখন থেকে যে কেউ যে কোনভাবে জাতীয়, আঞ্চলিক মহাসড়কের ধারে এবং আন্তঃজেলা সংযোগের সড়কের ধারে স্থাপনা নির্মাণ ও বিলবোর্ড স্থাপন করতে পারবে না। সওজ অধিদফতর নতুন নীতিমালা অনুযায়ী ইজারা দিতে পারবে। বিলবোর্ড স্থাপনে নতুন নিয়ম মেনে চলার নির্দেশ দেয়া হয়। ২০১৫ সালের নবেম্বর মাসে প্রণীত ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালার আওতায় এইসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সওজ অধিদফতর বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান বলেন, জাতীয় মহাসড়কের ধারে যানবাহনের যাত্রীদের দৃষ্টিতে সারসরি পড়ে এমন স্থানে বিশাল বিলবোর্ড স্থাপন করা হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সড়কের বাঁকের নিকটে এমন আড়াআড়িভাবে স্থাপিত হয় যা গাড়ি চালনায় চালকের দৃষ্টিকে ভ্রমের মধ্যে ফেলে দেয়। কখনও বিপরীত দিকে থেকে আসা গাড়িকে সহসা চোখে পড়ে না। আবার পেছনের দ্রুতগামী গাড়ি বাঁক ঘোরাতে একটু বেখেয়াল হলে ধাক্কা দেয়। এভাবেও বেড়ে যায় দুর্ঘটনার হার। আরেকদিকে সড়ক ও মহাসড়কের ধারে সওজ অধিদফতরের ভূমি দখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে। বর্তমানের নীতিমালায় মহাসড়কের বাঁকের ভিতরের দিকে, কি পয়েন্ট ইন্সটলেশন (কেপিআই) এলাকার ভেতরে, ফুট ওভারব্রিজ, ফ্লাইওভার, বহুতল ভবন ও চলাচলে দৃষ্টি ভ্রম হয় এমন কোন ভবনের উপরে, সড়কের দু’ধার জুড়ে, আড়াআড়িভাবে কোন বিলবোর্ড স্থাপনের অনুমতি দেয়া যাবে না। নগরী ও শহরের ভিতরেও জায়েন্ট স্ক্রিনের মনিটরে (টেলিভিশনের মতো প্রচার), এলইডি স্ক্রিনের স্ক্রল প্রচারে নীতিমালা মেনে চলতে হবে। তবে জাতীয় মহাসড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক ও জেলার সড়কগুলোতে সড়ক নিরাপত্তায় ঝুঁকি সৃষ্টি করে না, পথচারী ও গাড়ি চালকের মনোযোগ বিঘিœত ও বিভ্রাট ঘটায় না এমন স্থানে বিলবোর্ড স্থাপন করা যাবে। সওজ অধিদফতরের জমিতে সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে বেসরকারী বিলবোর্ড স্থাপনে ইজারা মিলবে সর্বোচ্চ তিন বছর মেয়াদে। ইজারা নেয়া ভূমির ওপর স্থাপিত বিলবোর্ডে সরকারী নীতির পরিপন্থী, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এবং অশালীন কোন বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা যাবে না। প্রতিটি বিলবোর্ডের ওপর সরকারী যে স্মারক মূলে ইজারা বা ভাড়া নেয়া হয়েছে তার নম্বর ও মেয়াদকাল এমনভাবে উল্লেখ থাকতে হবে যা দৃষ্টিতে আসে। বিলবোর্ড ইজারা হবে বর্গফুটের নির্দিষ্ট হারে ভাড়া অনুযায়ী। জাতীয় মহাসড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক ও জেলা সড়কের জন্য এই হার নীতিমালা অনুযায়ী ধার্য হবে। ডিজিটালে জায়েন্ট এলইডি স্ক্রীনে স্ক্রল ভিশন, ভিডিও চিত্র, ট্রাইভিশন ইত্যাদির জন্য হার আলাদা। বিলবোর্ড ইজারার এককালীন ফি ও বার্ষিক ইজারা ফি উভয়ই প্রদান করতে হবে। প্রতি ক্ষেত্রেই ফি হবে বর্গফুটভিত্তিক। যা সড়ক ও মহাসড়কের শ্রেণী অনুযায়ী নির্ধারিত। সড়ক মহাসড়কের শ্রেণী বর্গফুটের মান অনুযায়ী এই হার নি¤েœ ৫শ’ টাকা থেকে উর্ধে ৩০ হাজার টাকা। এককালীন ফির হার আলাদা। এলইডি স্ক্রিনে বিজ্ঞাপন প্রচারের ফি আলাদা। ইজারা গ্রহীতাকে যাবতীয় কর ভ্যাট এসডি কর এবং বিদ্যুত খরচ বহন করতে হবে। বেসরকারী বিজ্ঞাপন, কোন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন বিলবোর্ড একই নীতিমালার আওতায় থাকবে। সরকারী প্রয়োজনে বিনা ভাড়ায় বিলবোর্ড রাখা যাবে বছরে সর্বোচ্চ ৩০ দিনের জন্য।
×