ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বড়ালের তিন শাখা নদী এখন মৃত

প্রকাশিত: ০৭:০২, ১১ এপ্রিল ২০১৮

বড়ালের তিন শাখা নদী এখন মৃত

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহীতে পদ্মার করুণদশায় খরস্রোতা বড়ালের তিনটি শাখা নদীও পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। এসব শাখা নদী অস্তিত্ব হারিয়ে শুকনো খালে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে বড়ালের শাখা মুশা খা, চন্দনা ও ত্রিমোহিনী নদী মরে যাওয়ায় পাল্টে গেছে মানচিত্র। ফলে এসব নদীকেন্দ্রিক মৎস্যজীবীরা এখন পেশা বদলে ফেলেছে। নদী পানিশূন্য হওয়ায় মৎস্যজীবীরা অনেকে পথে বসেছে। জীবিকার সন্ধানে অনেকে গ্রামগঞ্জে ছিটকাপড় ও হাঁড়ি পাতিল বিক্রি করছে। অথচ এসব নদীই ছিল তাদের জীবিকার উৎস। এক সময় পানি প্রবাহের গতি প্রবল ছিল। তখন মাছে ছিল তাদের জীবিকা। এখন পানি না থাকায় দেশীয় মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় এলাকাবাসী নদীগুলো পুনর্খননের দাবি করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সময় নদীগুলোর পার্শ্ববর্তী জমি ৬ মাস পানির নিচে থাকত। নদীতে নৌকা চলাচল করত। নদীর ওপর নির্ভরশীল মৎস্যজীবীরা স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করতেন। তবে বর্তমানে বড়ালের তিনটি শাখা নদী মরে যাওয়ায় পাল্টে গেছে এলাকার জীবনযাত্রাও। অনুসন্ধানে জানা যায়, বড়ালের শাখা নদী মুশা খা, চন্দনা ও ত্রিমোহিনী এখন নদী মৃত। মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে এসব নদী। পদ্মানদীর শাখা বড়ালের ৩টি শাখা নদী রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী এলাকা থেকে শাখা বের হয়েছে। এরমধ্যে আড়ানীর হালদার পাড়ার কড়ই তলা থেকে চন্দনা নদী প্রায় ২০ কিলোমিটার পূর্ব দিকে দিঘা বিলে মিশে গেছে। বর্তমানে এ নদীর কোন অস্তিত্ব নেই। মুশা খা নদী জামনগরের ত্রিমোহিনী এলাকা থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার উত্তর দিকে ঝলমলিয়া এলাকায় মিলিত হয়েছে। এ নদীও প্রায় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। পাশে আরেকটি ত্রিমোহিনী নদী প্রায় ১৫ কিলোমিটার পশ্চিম দিকে নিমপাড়া বিলে মিলিত হয়েছে। এই নদীর অস্তিত্বত্ত আজ আর নেই। নদীগুলো মরে যাওয়ায় আধুনিক সেচ সুবিধা থেকে হাজার হাজার মানুষের জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়েছে। নদীর ওপর নির্ভরশীল এলাকার মানুষের জীবনে নেমে এসেছে হাহাকার। জেলার বাঘা উপজেলার আড়ানী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আশরাফ আলী জানান, বড়ালের ওপর অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ নির্মাণের ফলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বড়ালের শাখা নদীগুলোকে বাঁচিয়ে তুলতে পুনর্খননের মাধ্যমে পর্যাপ্ত পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি নদীগুলো পুনরুদ্ধারের জন্য বাঁধ অপসারণ, তলদেশ খনন, ড্রেজিং মাধ্যমে উৎসমুখ খোলাসা করতে হবে। দ্রুত সমাধান করতে না পারলে আর অস্তিত্বই থাকবে না এসব শাখা নদীর। বড়ালের অপর শাখা চন্দনা নদীর ধারে বসবাসকারীরা জানান, এই নদীতে এক সময় মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসার পরিচালনা করতেন তারা। নদীগুলো শুকিয়ে যাওয়ার কারণে মাছ ধরা পেশা পরিবর্তন করে এখন তারা হলুদের ব্যবসা করছেন। আড়ানী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি রঞ্জিত কুমার হালদার ও সাধারণ সম্পাদক সুজিত কুমার হালদার বলেন, আমরা পেশাদার মৎস্য শিকারি। এই এলাকায় চার শতাধিক পরিবার মৎস্য শিকারি ছিল। তারা মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাতেন। বর্তমানে অধিকাংশ পরিবার পেশা পরিবর্তন করে কেউ বাদাম বিক্রি, কেউবা ছিট কাপড়ের ব্যবসা, আবার কেউ গ্রামে গ্রামে হাঁড়িপাতিল বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছে। আড়ানী পৌর মেয়র মুক্তার আলী বলেন, এই নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে দেশী জাতীয় মাছ প্রায় এলাকা থেকে হারিয়ে গেছে। তবে নদীগুলো পুনর্খননের জন্য স্থানীয় প্রতিমন্ত্রীকে অবহিত করবেন বলেও জানান। উপজেলা ভারপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, এই তিনটি নদী বর্তমানে অস্তিত্ব নেই। অনেক আগেই মরে গেছে। তবে চন্দনা নদী গত অর্থবছরে কিছু অংশ দিঘা এলাকায় পুনর্খনন করা হয়েছে। এতে ওই এলাকায় মানুষ দেশী জাতীয় মাছ কিছুটা ভোগ করতে পারছে। পুনরায় অন্যান্য এলাকায় পর্যায়ক্রমে পুনর্খননের জন্য ঊর্র্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
×