ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

মামুনের সাদা-কালো ছবিতে বরেণ্য ব্যক্তিত্বদের মুখচ্ছবি

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১১ এপ্রিল ২০১৮

মামুনের সাদা-কালো ছবিতে বরেণ্য ব্যক্তিত্বদের মুখচ্ছবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ছবিজুড়ে আলো-ছায়ার মায়াবি খেলা। সেই ফ্রেমে ভিন্ন ভঙ্গিমায় ধরা দিয়েছেন এসএম সুলতান। একটি ঘরের ভেতর আহার করছেন ঝাকড়া চুলের পথিকৃৎ এই চিত্রশিল্পী। ঘরের পেছনের জানালা দিয়ে প্রবেশ করেছে সূর্যালোক। সেই আলো-আঁধারির মাঝে তরকারিসহ ভাতের থালা নিয়ে বসেছেন শিল্পী। থালাটির ঠিক সামনেই ভিড় করেছে চারটি সাদা বিড়াল। তারাও যেন সঙ্গী হয়েছেন শিল্পীর ভোজনপর্বে। পাশে ছবিতেই দুই আঙ্গুলের মাঝে সিগারেট নিয়ে চিন্তামগ্ন হয়ে ক্যামেরাবন্দী হয়েছেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। অন্যদিকে নিজের আঁকা ছবির সামনে প্রসারিত দৃষ্টি মেলে দিয়েছেন পটুয়া কামরুল হাসান। বিশাল গ্যালারির দেয়ালে চোখ ঘোরাতেই বিশাল ফ্রেমে হাজির হন জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান। ডায়াসে চিরচেনা চশমাটি রেখে তর্জনী উঁচিয়ে ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণ দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু। সংস্কৃতিসাধক সনজ্্ীদা খাতুনের পাশ ফেরানো ছবিটি মেলে ধরেছে তার দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্বকে। এভাবেই সাদা-কালো মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন ভঙ্গিমায় ফ্রেমবন্দী হয়েছেন দেশ-বিদেশের বরেণ্য ব্যক্তিত্বরা। নাসির আলী মামুনের তোলা সেসব ছবি নিয়ে জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনালয়ে চলছে প্রদর্শনী। জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাককে উৎসর্গীকৃত পোর্ট্রেট আলোকচিত্র প্রদর্শনীটির শিরোনাম ‘ফটোজিয়াম’। জাতীয় জাদুঘর আয়োজিত প্রদর্শনীতে সহযোগিতা করেছে আর্টকম। মঙ্গলবার বিকেলে নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনালয়ে চব্বিশ দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীর সূচনা হয়। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর । বিশেষে অতিথির বক্তব্য দেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেজয়ার আবুল খায়ের ও প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। সভাপতিত্ব করেন জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। প্রদর্শনী প্রসঙ্গে নাসির আলী মামুন জানান, এটি তার ৫৭তম একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। প্রদর্শনীতে এমন অনেক ছবি রয়েছে, যেগুলো আগে কোথাও প্রকাশিত হয়নি। মামুনের সাদা-কালো ছবিগুলোয় হাজির হয়েছেন রাজনৈতিক নেতা থেকে থেকে অভিনেতা-অভিনেত্রী, চিত্রশিল্পী, কবি-লেখক, সঙ্গীতশিল্পী, সমাজসেবকসহ বিশ্ববিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী। ১৯৭৯ সালে ধারণকৃত ছবিতে হাস্যোজ্জ্বল মুখাবয়বে মা ফেরদৌসী মজুমদারের পাশে দেখা যায় শৈশবের ত্রপা মজুমদারকে। পাশের ছবিতেই মুখের নিচে হাত নিয়ে ভাবুক ভঙ্গিতে ক্যামেরাবন্দী হয়েছেন এই অভিনয়শিল্পী পরিবারের আরেক সদস্য রামেন্দু মজুমদার। আলো-আঁধারিতে যেন মায়ার জাল বিছিয়ে দেয় বাউলসাধক শাহ আবদুল করিমের মুখটি। পাশাপাশি ভিন্ন ভিন্ন ভঙ্গিমায় উপস্থাপিত হয়েছেন দুই প্রখ্যাত লেখক হুমায়ুন আজাদ ও আহমদ ছফা। লেখকদের ভিন্নতর অভিব্যক্তিময় সেসব ছবির সূত্র ধরে হাজির হয়েছেন নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ, ওপার বাংলার জনপ্রিয় লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কয়েকটি আলোকচিত্র ঠাঁই পেয়েছে। ১৯৭১ সালের শুরুর দিকে পাকিস্তানি সামরিক জাস্তার হামলায় নিহতদের স্মরণে ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে এক শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মোনাজাত পরিচালনা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর সেই ছবিটি প্রদর্শনীতে মেলে ধরেছেন মামুন। রয়েছে জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর হাস্যোজ্জ্বল একটি ছবি, রয়েছে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা কমরেড মনি সিংহ, মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এম এ জি ওসমানীর ছবি। আছে ভাষা আন্দোলনের দুই সংগ্রামী আবদুল মতিন ও গাজীউল হকের ছবির। ঠাঁই পেয়েছে ১৯৭৩ সালে ধারণকৃত কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি প্রতিকৃতি। আলোকচিত্রে উঠে এসেছেন কবি সুফিয়া কামাল, কবি জসীমউদ্দীন, কবি আহসান হাবীব, শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের নানা অভিব্যক্তি ছবি। বিজ্ঞানী কাজী মোতাহার হোসেন ও এমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের ছবিও রয়েছে প্রদর্শনীর এক কোণে। ঠাঁই পেয়েছে মাদার তেরেসার ধ্যানস্থ মুখের পাশে রয়েছে ঢাকা সফরে আসা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন, নোবেলজয়ী কবি-সাহিত্যিক গুন্টার গ্রাসের ছবি। ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে হোয়াইট হাউসে তুলেছেন স্টিফেন হকিংয়ের ছবি। সেটিও আছে প্রদর্শনীতে। সঙ্গীত জগতের কিংবদন্তিদের মধ্যে সানাইবাদক ওস্তাদ বিসমিল্লাহ্ খান, প-িত রবিশঙ্কর, হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া, ওস্তাদ আমজাদ আলী খান, ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ খান, তবলা মায়েস্ত্রো জাকির হোসেন ও আল্লারাখার নানা মুহূর্ত ও পারফরম্যান্সের ছবিও ঠাঁই পেয়েছে। রয়েছে চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেন, আলমগীর কবীর, অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদি, আসাদুজ্জামান নূরের নানা ভঙ্গিমার ছবি। ১২৪টি ছবিতে সজ্জিত এ প্রদর্শনী শেষ হবে আগামী ৩ মে। শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে। শুক্রবার খোলা থাকবে দুপুর আড়াইটা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত।
×