ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলন স্থগিতকারীরা ;###;ওরা আন্দোলনে অনুপ্রবেশকারী ;###;যারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে তাদের সমর্থন দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী

ওরা স্বাধীনতাবিরোধী ॥ এখন যারা আন্দোলন করছে

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১১ এপ্রিল ২০১৮

ওরা স্বাধীনতাবিরোধী ॥ এখন যারা আন্দোলন করছে

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ সরকারের আশ্বাসে চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে মঙ্গলবার প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ দেখিয়েছে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ। তৃতীয় দিনে আন্দোলন ছড়িয়েছে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়েও। তাদের আন্দোলনে রাজধানীতে সৃষ্ট যানজটে চরম দুর্ভোগের মুখে পড়ে সাধারণ মানুষ। তবে আন্দোলন স্থগিত করা মূল শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ তুলেছেন, এখনও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীরা ‘অনুপ্রবেশকারী ও স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী। কোটা সংস্কারের দাবি যৌক্তিক বলে মত দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নাশকতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে সমর্থন জানিয়েছে ছাত্রলীগ। আগের দিন সোমবার সন্ধ্যায় সরকারের আশ্বাসে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলা আন্দোলন এক মাসের জন্য ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। এরপর অধিকাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ছেড়ে হলে চলে যান। তবে শিক্ষার্থীদের ক্ষুদ্র একটি গ্রুপ এখনই দাবি পূরণ ও আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশী হামলার অভিযোগ এনে অবস্থানে অটল থাকে। প্রথমে টানা অবস্থানের ঘোষণা দিলেও রাতে তারা মঙ্গলবার বেলা ১১টা পর্যন্ত কর্মসূচী স্থগিত করে হলে ফিরে যান। মঙ্গলবার সকালে উপাচার্যের বাসভবন পরিদর্শনে যান যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় তিনি নাশকতা চিত্র দেখে বলেন, উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আক্তারুজ্জামানের বাসভবনে ভাংচুরের ঘটনায় যারা জড়িত তাদের ছাড় দেয়া হবে না। হামলা ছিল পরিকল্পিত। ভিসির বেডরুম পর্যন্ত রক্ষা পায়নি। বাথরুমের কমোডও ভেঙেছে। ভিসির পরিবারের সদস্যদের সোনার গহনা নিয়ে নেয়া হয়েছে। হামলার ঘটনাকে মধ্যযুগীয় আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এটি একাত্তরের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। একাত্তরের ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চ লাইটের রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক হত্যাযজ্ঞ চললেও ভিসির বাসভবন সেদিন আক্রান্ত হয়নি। অথচ স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর সেই ঘটনা ঘটল। কোটা সংস্করণের আন্দোলন, সে আন্দোলনে যে রাজনীতির অন্ধবিদ্বেষের অনুপ্রবেশ ঘটেছে, এটা প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না। সরকারের সঙ্গে আন্দোলনকারী প্রতিনিধিদের বৈঠকে সমঝোতা হওয়ার পরও যারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে বিদ্বেষপ্রসূত রাজনীতি ঢোকানোই তাদের উদ্দেশ্য বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। দোতলা বাসভবনের বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে দেখে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এই বাড়িতে যে দগদগে ক্ষতচিহ্ন, চিনি না তারা কারা আক্রমণ করেছে। বেডরুম রক্ষা পায়নি, সব তছনছ হয়ে গেছে। বাথরুমের কমোড পর্যন্ত অক্ষত নেই। সোনার গয়না ভিসি সাহেবের পরিবারের, সেটাও লুট হয়ে গেছে। বাড়ির আসবাবপত্র সব বাইরে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এটা কেমন বর্বরতা? ওই হামলায় জড়িত অনেককে ইতোমধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে বললেও তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত কিছু জানাননি সেতুমন্ত্রী কাদের। এই নারকীয় বর্বরতার সঙ্গে যারা জড়িত, কোন অবস্থাতেই তাদের ছাড় দেয়া হবে না। তদন্ত চলছে, ইতোমধ্যে যারা ক্রিমিনাল অফেন্ডার, চিহ্নিত হয়েছে, বাকিরাও চিহ্নিত হবে এবং এই বিচার করতেই হবে, যাতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে না পারে। ভিসির বাড়িতে ওই হামলা যে ‘পরিকল্পিত’ ছিল, ভবনের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা নষ্ট করে দেয়ায় তার প্রমাণ। তিনি আরও বলেন, আমরা বলেছি কোটার সঙ্গে ভিসির সম্পর্ক কি? বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে কোটা সংস্করণের সঙ্গে কেন যুক্ত করা হলো। কারা যুক্ত করল? এই প্রশ্নের জবাব তাদের দিতে হবে। এই আন্দোলনে বেশিরভাগ ভূমিকা যারা নিয়েছে, তারা কিন্তু ইতোমধ্যে আমাদের সঙ্গে বসেছে। তারা বলেছে ৭ মে পর্যন্ত এই আন্দোলন স্থগিত রাখবে। এর মধ্যে দেশের প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। আমি মনে করি যারা সত্যিকার অর্থে কোটা সংস্কার করতে চান, এই সমঝোতার পর তারা এখানে থাকবেন না। যারা থাকবেন, তারা এই আন্দোলনের সঙ্গে যে বিদ্বেষপ্রসূত রাজনীতি ঢুকে পড়েছে। যে রাজনীতির অন্ধ আক্রোশের শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, এদের আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে। এখনও যারা আন্দোলনে থাকার ঘোষণা দিচ্ছে, তারা আসলে কোটা সংস্কার চায়, নাকি দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায়- সেই প্রশ্ন তোলেন ওবায়দুল কাদের। বলেন, ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চান কিনা, এটা খতিয়ে দেখতে হবে। এ সময় ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে থাকা ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি বলেন, পুলিশ ইতোমধ্যে ভিসির বাড়িতে হামলার ঘটনার অনেক প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। আরও প্রমাণ সংগ্রহের কাজ চলছে। চাক্ষুস সাক্ষীর জবানবন্দী আমরা নিয়েছি। হামলাকারীরা শুধু সিসি টিভি খুলে নেয়নি, হার্ড ডিস্কটাও খুলে নিয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও সিসি টিভি আছে, মিডিয়ার ফুটেজ আছে। আমরা অনেক প্রমাণ পেয়েছি। এর আগেও যারা ফেসবুকে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় উস্কানি দিয়েছে, তাদের বিষয়েও পুলিশ কাজ করছে বলে জানান পুলিশ কমিশনার। তবে কাদের বিষয়ে কী কাজ হচ্ছে তা তিনি স্পষ্ট করেননি। আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, আমরা কাজ করছি। যেটা আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বলেছেন, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। প্রক্রিয়া চলছে। উপাচার্য মোঃ আখতারুজ্জামান বলেন, এটা সাধারণ বিক্ষোভকারীদের হামলার ঘটনা ছিল না। প্রশিক্ষিত হামলাকারীরা মুখোশ পরে এসেছিল প্রাণনাশের জন্য। সরকার সময় চাওয়ার পরও যারা আন্দোলন করছে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। অন্যদের মধ্যে সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক শামীম, অসীম কোমার উকিল, সুজিত রায় নন্দী উপস্থিত ছিলেন। আন্দোলনে বিভক্তি ॥ কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের নিয়ে জাতীয় সংসদে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর দেয়া বক্তব্য প্রত্যাহার করে না নিলে অবরোধ করে দেশ অচল করার হুমকি দিয়েছে আন্দোলন অব্যাহত রাখার শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। একই সঙ্গে আগামী ৭ মের মধ্যে দাবি মেনে না নিলে ফের অবরোধ কর্মসূচীর ঘোষণা দেন তারা। মঙ্গলবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়। ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের’ ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন আন্দোলনের যুগ্ম-আহ্বায়ক রাশেদ খান। উপাচার্যের বাসভবনে হামলাকারীরা বহিরাগত দাবি করে রাশেদ খান বলেন, আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ নয়। এ সময় তিনি হামলাকারী পুলিশের শাস্তি ও ক্ষতি পূরণের দাবি জানান। নতুন কমিটি নিয়ে তিনি বলেন, যারা নতুন কমিটি করেছে তারা স্বার্থ হাসিলের জন্যই এ কমিটি করেছে। আমাদের ব্যানার ব্যতীত কেউ যদি অন্য ব্যানারে আন্দোলন করে তাদের আমরা প্রতিহত করব। এ সময় আন্দোলন করার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো থেকে যেন কোন আন্দোলনকারীকে যেন বের করে দেয়া না হয় সেজন্য অনুরোধ করা হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে। ক্যাম্পাসে পুলিশী হামলার প্রতিবাদে ও কোটা সংস্কারের দাবিতে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তারা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে খ- খ- বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে এসে জড়ো হয় এবং কোটা সংস্কার ও পুলিশী হামলার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকে। রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিয়ে চাকরির কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ চালিয়েছে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ। অন্যদিকে তাদের এই আন্দোলনের পাল্টা মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলন স্থগিত করা অংশটি বলেছে, এখনও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীরা অনুপ্রবেশকারী। আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেয়া অংশের শিক্ষার্থীরা সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন। ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর বলেন, আমরা আগামী ৭ মে পর্যন্ত কর্মসূচী স্থগিত করেছি। সরকার আমাদের বলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কোটা নিয়ে কী করা যায় জানাবেন। এ সময়ের মধ্যে সব ধরনের আন্দোলন বন্ধ থাকবে এবং ক্লাস-পরীক্ষা চলবে। আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের অনুপ্রবেশকারী’ ও ‘স্বাধীনতা বিরোধী গোষ্ঠী’ আখ্যায়িত করে ছাত্র অধিকার পরিষদের মোহাম্মদ রাশেদ খান বলেন, ভিসির বাসায় যারা হামলা চালিয়েছিল তারাই নতুন কমিটি করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করাই তাদের মূল লক্ষ্য। তবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া অংশটিতে থাকা শিক্ষার্থীরা বলছেন, মে মাসে রোজা শুরু হয়ে যাবে এবং শিক্ষার্থীরা ছুটিতে চলে যাবে। এখন আন্দোলন থামিয়ে দিলে তখন আর নতুন করে শুরু করা যাবে না। তখন দাবিও আর আদায় করা যাবে না। রবিবার রাতে আমাদের উপর যে গুলি হলো, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হলো, হামলা হলো- এর বিচার আগে করতে হবে। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। আন্দোলন থামিয়ে দিলে এই গণজাগরণ আর তৈরি হবে না, সরকারও আমাদের দাবি মেনে নেবে না। রোজার সময় আন্দোলন করলে আমাদের ধর্মবিরোধী ট্যাগ লাগিয়ে দেয়া হবে। ভিসির বাসভবনে হামলার প্রতিবাদে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ মিছিল ও সামাবেশ ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানের বাসভবনে হামলাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির জানিয়েছেন ছাত্রলীগ। অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত এক সমাবেশে এ দাবি করেন সংগঠনটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ। কোটা সংস্কার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পরেও যারা আন্দোলন সংগ্রাম করে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করতে চায় তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনে ভাংচুর, লুটপাট ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ অস্থিতিশীল করার প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে ছাত্রলীগ। মিছিলটি মধুর ক্যান্টিন থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন, ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি কাজী এনায়েত, কর্মসূচী ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন, দফতর সম্পাদক দেলোয়ার শাহজাদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি আবিদ আল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স। ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কোন ষড়যন্ত্রে পা দেবেন না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। যারা উপাচার্যের উপর হামলা চালিয়েছে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এস এম জাকির হোসাইন বলেন, ইমরান এইচ সরকার ফেসবুকে স্যাটাস দেয়ার জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিভ্রান্তির শিকার হয়েছে। তাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইমরান এইচ সরকারকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমাদের মমতাময়ী মা দেশরতœ শেখ হাসিনা কোটা সংস্কারের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এর পরেও যারা আন্দোলন করে বিশৃঙ্খলা করতে চায় তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। আন্দোলন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়েও ॥ কোটা সংস্কার আন্দোলনে থাকা ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের একটি অংশ সরকারের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিলেও তা প্রত্যাখ্যান করে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছে রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের কারণে মঙ্গলবার দুপুর ১২টার পর রামপুরা থেকে বসুন্ধরা পর্যন্ত বীর উত্তম রফিকুল ইসলাম এ্যাভিনিউ এবং প্রগতি সরণি হয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। সরকারী চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে দুপুরে রাজধানীর নর্দ্দা এলাকায় প্রগতি সরণিতে অবস্থান নেয় নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। রামপুরা ব্রিজের কাছে ইস্ট ওয়েস্ট, বসুন্ধরা গেটে নর্থসাউথ, ইনডিপেন্ডেন্ট ও ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, এআইইউবি এবং নতুনবাজার এলাকায় ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি এ্যান্ড সায়েন্সেসের (ইউআইটিএস) শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনে রয়েছে। একই জায়গায় অবস্থান নিলে রামপুরা ব্রিজ হয়ে বাড্ডাগামী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ইউআইটিএসের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে আছে ভাটারা থানার সামনে থেকে শুরু করে বাড্ডা-রামপুরাগামী সড়কে। ফলে রামপুরা থেকে নতুনবাজার হয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুপুর ১২টার দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রধান গেটে অবস্থান নেয়। পরে ইনডিপেন্ডেন্ট, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ও এআইইউবির শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে যোগ দিলে প্রগতি সরণির দুই দিকেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নর্থ সাউথের এনভায়রনমেন্ট সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী তাজিন মাহমুদ আশিক বলেন, কোটা সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে এবং সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত ভাই-বোনদের সঙ্গে আমরা একাত্মতা প্রকাশ করছি। আশিক জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের আন্দোলন শুরুর পর ফেসবুকে ইভেন্ট খুলে মঙ্গলবার তারা আন্দোলনে নামেন। আন্দোলনে সমর্থন জামায়াতের ॥ সরকারী চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে চলা আন্দোলনে সমর্থ জানিয়েছে জামায়াত। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, সরকারী চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে দেশের মেধাবী তরুণ ছাত্র সমাজ যে আন্দোলন করছে তা ন্যায়সঙ্গত। অবিলম্বে তাদের এ ন্যায়সঙ্গত দাবি সরকারের মেনে নেয়া উচিত। ছাত্র সমাজের দাবি মেনে নেয়ার পরিবর্তে তাদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হামলা এবং গ্রেফতার নির্যাতনের আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একগুয়েমি পরিহার করে অবিলম্বে আন্দোলনকারীদের সব দাবি মেনে নেয়ার জন্য আমি সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।’ কর্মক্ষেত্রে মেধা ও যোগ্যতার মূল্যায়নের বিকল্প নেই ॥ আল্লামা মাসঊদ কর্মক্ষেত্রে মেধা ও যোগ্যতার মূল্যায়ন হলে দেশ আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে অভিমত জানিয়েছেন বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান ও ঐতিহাসিক শোলাকিয়া গ্র্যান ইমাম শাইখুল হাদিস আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। তিনি বলেন, মৌলিকভাবে কোটা পদ্ধতি সমর্থনযোগ্য নয়। তবে মুক্তিযোদ্ধা ও পিছিয়ে পড়াদের জন্য এক তৃতীয়াংশ রাখা যেতে পারে। পিছিয়ে পড়া জাতিকে এগিয়ে নিয়ে আসার জন্য যদি এ কোটা ব্যবস্থা রাখা হয় তাহলে এক তৃতীয়াংশ কোটা বিবেচনাসাপেক্ষে রাখা যেতে পারে। এর বেশি রাখা উচিত নয়। মুক্তিযুদ্ধে অবদান যারা রেখেছেন তাদের বিষয়টি ছোট করে দেখার সুযোগ নেই উল্লেখ করে আল্লামা মাসঊদ বলেন, কোটা পদ্ধতির মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান রয়েছে। দেশের জন্য যেহেতু মুক্তিযোদ্ধারা বহু অবদান রেখেছেন তাই তাদের সন্তানদের জন্য একটি অংশ রাখা যায়। সেটাও যেন বেশি না হয় সে দিকে দৃষ্টি রাখা উচিত। আল্লামা মাসঊদের বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময়ে তিনি এসব কথা বলেন। চাকরির ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতির নির্দেশনা পরীক্ষা-নিরীক্ষার নির্দেশ দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন আল্লামা মাসঊদ। তিনি বলেন, সময়োপযোগী যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এ জাতীয় যেকোন আন্দোলনে একাত্তরের পরাজিত শক্তি যেকোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
×