ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

মারুফ রায়হান

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ১০ এপ্রিল ২০১৮

ঢাকার দিনরাত

উত্তরায় আমাদের বাসা থেকে দিয়াবাড়ি খুব দূরে নয়। গত সপ্তাহে সেখানে দেশে প্রথমবারের মতো মেট্রো রেলের কর্মযজ্ঞ দৃশ্যমান হলো স্প্যান প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। ঢাকার এক নম্বর সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে যানজট। মেট্রোরেল চালু হলে সেই জট অনেকটাই কমে যাবে বলে রাজধানীবাসী আশা করে। বিদায় ১৪২৪ বর্ষ বিদায়ের ঘণ্টা বাজছে। বাংলা বছরের এটিই শেষ ‘ঢাকার দিনরাত’। কয়েকদিন পরেই নববর্ষ, পহেলা বৈশাখ। আকাশে বাতাসে ভেসে আসছে উৎসবের আগাম ছটা। তবে তাতে কিছুটা বিরক্তিও ভর করেছে গত বছরের মতো। অনেকের সঙ্গে কথা বলেই এমনটা মনে হলো। মানুষ চায় বাধাবিঘœহীন নিরঙ্কুশ উৎসব। পুলিশের চাপিয়ে দেয়া সীমাবদ্ধতায় মন সায় দেয় না। যদি উৎসবকে সীমিত ও সঙ্কুুচিত করে ফেলতে হয় অল্প ক’জন বখাটের কারণে, কিংবা আরও স্পষ্ট করে বললে উৎসববিরোধী বাঙালী সংস্কৃতিবিরোধী জামায়াত-শিবির-হেফাজতী চক্রের হুমকিকে যদি আমলে নেয়া লাগে, তাহলে আফসোসের সীমা পরিসীমা থাকে না। এ যেন অনেকটা সেরকম : সড়কে সড়কে ট্রাক-বাস বেসামাল হয়ে পরিণত হতে পারে যন্ত্রদানবে। তাই হাত-পা গুটিয়ে ঘরে বসে থাকলাম। বলা যায়, বিষয়টা এমন : ঘরের দরোজা-জানালাও বন্ধ রাখলাম, পাছে ওই পথ দিয়ে রোগব্যাধি ঢুকে পড়ে। আসলে এবারের উৎসব হওয়া উচিত আরও প্রাণবন্ত ও প্রসারিত। দু’বছর আগের রমনা উদ্যানের গ্লানিটুকু উড়িয়ে দিতে চাই বেশি বেশি করে নারীর অংশগ্রহণ। এবং অবশ্যই তাদের পাশে থাকবে সচেতন নাগরিকরা। যাতে ছোটখাটো ঝামেলা বাধাতেও কারও দুঃসাহস না হয়। পহেলা বৈশাখে বিকেল পাঁচটার পর ঢাবি ক্যাম্পাসে ঢোকা যাবে না- এমন সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে ঢোকার মূল ফটকটিও বন্ধ রাখা হবে। উৎসবের দিন কোথায় সব উন্মুক্ত থাকবে, তা নয়। তার বদলে নিষেধাজ্ঞা আর প্রতিবন্ধকতা! যাহোক, অনেক আগেই রাজধানীতে শুরু হয়ে গেছে ১৪২৫ বাংলা বর্ষবরণের প্রস্ততি। চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ও শিল্পীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন মঙ্গল শোভাযাত্রার নানা উপকরণ তৈরিতে। তেমনি ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা সরা রং করার কাজে। এগুলো বিক্রি করে পাওয়া অর্থ খরচ হবে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনে। রাত বারোটা এক মিনিটে নয়, বাংলা নববর্ষ শুরু হয় সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে (আহা ওই সময়ে অনুভব করা যায় ‘বৈশাখের ভোরের হাওয়া আসে মৃদুমন্দ’)। রাজধানীবাসীর আয়েশি অংশটিও প্রভাতনিদ্রার সুখটুকু ঝেড়ে ফেলে বৃহৎ আনন্দের সন্ধানে নববর্ষ উৎসবে যোগ দেয়। সকলেই যে সকাল-সকাল বেরিয়ে পড়েন রমনার উদ্দেশে এমন নয়। টেলিভিশনের কল্যাণে এখন কেবল ছায়ানট কেন, ধানম-ির রবীন্দ্রসরোবরসহ কয়েকটি স্থানে আয়োজিত বেশকিছু সাংস্কৃতিক সংগঠনের বর্ষবরণ উৎসব প্রত্যক্ষ করা যায় সরাসরি। এ উদ্যোগের ফলে দূর পরবাসে অবস্থানকারী বাংলাদেশের অগণিত মানুষের সঙ্গে মাতৃভূমির ভৌগোলিক দূরত্ব মুহূর্তে ঘুচে যায়। তবে হ্যাঁ, খোঁজ নিলে দেখা যাবে বাড়ির কাছাকাছি জায়গায় কোন না কোন আয়োজন চলছেই বর্ষবরণের। উত্তরায়ও একাধিক বড়সড় উৎসব চলে। নগরবাসীর নিরানন্দময় নিস্তরঙ্গ জীবনপ্রবাহে বৈশাখ সত্যিকারার্থেই নিয়ে আসে আনন্দের উপলক্ষ। ভোজ আর উপভোগের পহেলা বৈশাখে বাঙালী আপনা থেকেই আত্মপরিচয় খুঁজে পায় এবং আর দশজন স্বজাতির সঙ্গে আত্মীয়তা অনুভব করে। ধর্মীয় পরিচয় সেখানে সামান্যতম প্রতিবন্ধক নয়। বছরের প্রথম দিনে এটি এক অনন্য অর্জন। আমাদের জাতীয় জীবনে পহেলা বৈশাখ এমন একটি মুহূর্ত যখন বাঙালী হিসেবে আমাদের মনে এক অনিঃশেষ গৌরব এসে বাঁশি বাজায়; জেগে ওঠে ভ্রাতৃত্ববোধ, মুমূর্ষুরে উড়ায়ে প্রাণে বেজে ওঠে নব আনন্দ গান। ভুলে যাচ্ছি না যে দেশের পাহাড়ি জনপদে অবাঙালী আদিবাসীরা বৈসাবী উৎসবে মাতে পহেলা বৈশাখের ঠিক আগে-আগে। ঢাকার বাইরে দেশজুড়েই শহরে শহরে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব চলে। যদিও জীবনাচারে বাংলা যাদের চিরসখা সেইসব পল্লীবাসীর পহেলা বৈশাখ উদযাপনে রয়েছে কিছুটা ভিন্নতা। হালখাতা আর গ্রামীণ মেলার ভেতর দিয়ে বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামেও নতুন বছরের সূচনালগ্নের প্রাণোচ্ছল হাওয়া এসে আছড়ে পড়ে। নগর কিছুটা প্রভাবিতও করে চলেছে এখন পল্লীকে। পহেলা বৈশাখে ঢাকার রাস্তায় ঢল নামবে মানুষের, এ তো জানা কথাই। খোলা প্রাঙ্গণে ও সড়কে মানুষের এই মহাসমাবেশ কেবল একুশে ফেব্রুয়ারির জনসমাগমের সঙ্গেই তুলনীয়। তবে একুশের অভ্যন্তরে শোকবিধুরতা থাকে, আনুষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতা থাকে যা সম্পূর্ণরূপে অনুপস্থিত পহেলা বৈশাখে। এই দিন কেবলই যেন আনন্দে ডানা মেলবার। সমগ্র রাজধানীই যেন হয়ে ওঠে সংস্কৃতিমেলাÑ যার অংশ বৈশাখী মেলা, আবৃত্তি আর গানের আসর। একসময় জাতীয় কবিতা পরিষদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠের আয়োজন করত। এখন আর দেখি না। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বৈশাখ বিষয়ক স্বরচিত কবিতা পাঠের আসরে একবার অংশ নিতে গিয়ে মনে হয়েছিল কবিরাও উন্মুখ হয়ে থাকেন নববর্ষে তার পাঠককে নতুন কবিতার স্বাদ দিতে। ভেবে পাই না প্রতি বৈশাখে কেন নয় একটি নির্দিষ্ট স্থানে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠের আয়োজন? রমনার বটমূলের উৎসবের মতো সেটিও হতে পারে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গৌরবদীপ্ত অংশ। তবে বৈশাখ কেবল আনন্দের নয়, প্রতিবাদেরও। সংবাদপত্রে বৈশাখী ক্রোড়পত্র ধারণ করে বৈশাখের চালচিত্র। উৎসবের শাখা-প্রশাখার আলোকপাত আর বৈশাখ-বন্দনা থাকে তার বড় জায়গা নিয়ে। ফিবছর পুরনো বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরে অগ্রযাত্রা এবং আত্মশুদ্ধির শপথ নেয়া হয়। আমাদের চিন্তাবিদরা বিশ্বসভায় বাঙালীর অবস্থান শনাক্ত করেও লেখেন। তবে তা যৎসামান্যই। প্রতিবাদের জায়গাটি প্রতুল নয়। এর প্রকাশ্য রূপ দেখতে পাই চারুকলা থেকে বেরুনো শোভাযাত্রায়। লোক ঐতিহ্যের মোটিফের সমান্তরালে এতে থাকে প্রতীকী মোটিফ। স্বৈরাচার, জঙ্গীবাদ ও মৌলবাদবিরোধিতা তাতে প্রত্যক্ষ করা যায়। দেশের সংস্কৃতিকর্মীদের দৃষ্টিভঙ্গির বার্তা থাকে তাতে, থাকে আন্দোলনের সঙ্কেত। আনন্দ প্রকাশের সহযোগে কখনও কখনও শাসক মহলের অন্যায্য কাজের সমালোচনার এই ভঙ্গিটি ব্যতিক্রমী। বিশ্বের অন্যান্য দেশে নানা জাতির বর্ষবরণের উৎসব থেকে বাঙালীর এই অসামান্য উৎসব এভাবেই পৃথক ব্যঞ্জনা লাভ করে। বাঙালীর এই প্রতিবাদী সত্তাটি বাস্তবিকই অসাধারণ। বৈশাখের শক্তিটিকে ঠিকই চিনেছে অপশক্তি, তাই পহেলা বৈশাখেই তারা আত্মঘাতী হামলার উদ্বোধন ঘটিয়েছিল। বৈশাখ তাই আমাদের নতুন করে সতর্ক হতে শিখিয়েছে। একাত্তরের পরাস্ত শক্তির প্রতিশোধস্পৃহা সম্পর্কে নিশ্চিত করেছে। অনিকেত ভ্রমণ এমনটা আগে হয়েছে বলে জানা নেই। একজন কবি ও সংগঠক তাঁর পঞ্চাশপূর্তি উপলক্ষে রাতভর নদীভ্রমণের আয়োজন করেছেন বিশাল এক স্টিমার নিয়ে, আর তাতে যোগ দিয়েছেন প্রায় দুশ’ লেখক ও শুভানুধ্যায়ী। কবির নাম অনিকেত শামীম আর এই নৌবিহারের নাম দেয়া হয়েছিল ‘অনিকেত ভ্রমণ’। কবি কামরুল হাসানের বয়ান থেকে শোনা যাক ওই ভ্রমণবৃত্তান্তের সূচনাপর্বের কিয়দংশ। তিনি লিখেছেন : ‘স্টিমারের ভিতরে ঢুকে চমৎকৃত হলাম- দুুুু’পাশে দুসারি কেবিনের মাঝে লম্বা টেবিল পাতা, দেখেই বোঝা যায় ডাইনিং হল, সাদা টেবিলক্লথে ঢাকা কাঠের টেবিলের দুপাশে বেতের চেয়ার। পুরো পরিবেশটির ভিতর একটা কৌলিন্য। অনুমান করা কঠিন নয় ১৯২৯ সালে জলে নামা এ ‘অস্ট্রিচ’ স্টিমারে চড়ে অনেক ইংরেজ, উঁচু শ্রেণীর ভারতীয়, অনেক বিখ্যাত মানুষ, যাদের ভিতর অনেক লেখক রয়েছেন, চাঁদপুর, গোয়ালন্দ গিয়েছেন। ঐ বিখ্যাত মানুষদের ভিতর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সৈয়দ মুজতবা আলী থাকার প্রবল সম্ভাবনা। ‘একটি স্টিমারের আত্মকাহিনী’ লিখলে এ স্টিমারের কাহিনী কয়েক খণ্ড হতে পারে।... সমুখভাগটিও সুদৃশ্য, সেখানে একটি চতুষ্কোণ টেবিল, রেলিঙয়ের পাশে প্লাস্টিক চেয়ার। দুটি বক্ররেখা যেভাবে মিলিত হয়ে প্যারাবোলাসদৃশ নৌকার গলুই তৈরি করে সমুখের ছাদখানি অনুরূপ। সাদা রঙের ছাদের নিচ দিয়ে যে দৃশ্যটি অবারিত দেখা যাচ্ছে তা হলো বুড়িগঙ্গা নদী, দ্বিতীয় সেতুটির নিচে যতদূর চোখ যায় ততদূর নদী ও তার বাঁক, দু’পাশে শহর। মনোলোভা দৃশ্য, তবু মনোলোভা নয়। নদীটির দিকে তাকালে আপনার রাগ, হতাশা, ক্ষোভ, দুঃখ- সব একসঙ্গে জড়ো হবে।... স্টিমারের মধ্যভাগে অনেকটা ফাঁকা জায়গায় মঞ্চ সাজানো হয়েছে, প্লাস্টিকের চেয়ার পাতা সারি সারি। সাদা কাপড়ে চারিপাশ মোড়ানো খোঁপের মতো একটি ছোট ঘর, বোধকরি সেটাই মঞ্চ, তবে বড় ছোট। সেখানে ব্যানারে লেখা ‘অনিকেত ভ্রমণ’, ঢাকা থেকে নদীপথে চাঁদপুর, বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, শীতলক্ষ্যা, পদ্মা, মেঘনা, ডাকাতিয়া অববাহিকা পার হয়ে। ছয় নদী পাড়ি? জলে আমরা সকলেই অনিকেত, স্টিমার আমাদের আশ্রয়। তবে অনিকেত কথাটি এসেছে অনিকেত শামীম থেকে, যিনি আমাদের হোস্ট, যাকে ঘিরে এই জলযাত্রা।... স্টিমার ছাড়তেই অনেকে রেলিঙয়ের পাশে এসে জড়ো হলেন। মধ্যমঞ্চে তখন শুরু হয়ে গেছে অতিথিদের পরিচয়পর্ব। তারো আগে অনুষ্ঠানের একটি প্রারম্ভিক বক্তৃতা দিলেন কবি ও অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। তিনি কেবল প্রবল সুদর্শন ও মেধাবী তাই নন, প্রাণশক্তিতে ভরপুর পুরুষ, কথা বলেন চমৎকার! আমরা মুগ্ধ হয়ে তার উদ্দীপনা জাগানো কথামালা শুনি, আর ভাবি জলে ভেসে আমরা কোন ভুল করিনি, আজ সারারাত অনেক আনন্দময় ঘটনা ঘটবে কালের সাক্ষী এই স্টিমারে।’ কবিকে ঘিরে আন্তরিক আয়োজন ঢাকায় কবিতাপাঠের আয়োজন কম হয় না, তবে একজন কবিকে ঘিরে শ্রদ্ধা-ভালবাসাময় আন্তরিক আয়োজন তেমন একটা দেখি না। কবি রুবী রহমান গুরুত্বপূর্ণ একজন কবি। তাঁর প্রতিটি কবিতাই সত্যিকারের কবিতা এবং শিল্প-নিদর্শন। বানোয়াট কিছু তাঁর ভেতরে নেই। সম্পাদকের ‘অর্ডারে’ তিনি তেমন সাড়া দিয়ে কবিতা লিখতে বসে যান নির্দিষ্ট থিম নিয়েÑ এমন নজিরও সেই। তাই তাঁকে নিয়ে আয়োজন হলে সেটি যে কবিতা¯িœগ্ধ হবে তাতে আর সন্দেহ কি! তাঁর তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘তমোহর’ও একটা প্রধান উপলক্ষ ছিল ‘কবিতার প্লাটফরমের’ এই ১৩তম আয়োজনের। আয়োজকদের ভেতর মূলত আছেন তিন কবি: সাবেরা তাবাসসুম, সাকিরা পারভীন, শাহনাজ নাসরীন। আয়োজকদের ভাষায় : ‘শুচিস্নিগ্ধ কবি রুবী রহমান আমাদের কাছে এক সহিষ্ণু বৃক্ষ। বেদনার অনন্ত যাত্রা যার কবিতায় দ্রোহ নয়, ভালবাসার পরম সঙ্গীত হয়ে অনুভূত হয়, গীত হয়।’ দীপনপুরে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী লেখক নজরুল কবিরের হৃদয়স্পর্শী কিছু কথা তুলে দিচ্ছি : ‘রুবি আপাকে দূর থেকে দেখেছি সেই আশির দশকে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে যখন জাতীয় কবিতা পরিষদের জন্ম হয়, তখন থেকে। নব্বই এ স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর ৯১ এ হাতে পেলাম তাঁর প্রথম একক বই ‘যে জীবন ফড়িঙের’। চুপি চুপি কিনে আনি বইমেলা থেকে। তাঁর প্রবাদ প্রতিম ব্যক্তিত্বের জন্য তখন সাহস পাইনি কাছে ভিড়তে। জানাতে পারিনি, পুরনো ঢাকার প্রান্তিক এলাকায় এক যুবক কত রাত তাঁর কবিতা পড়ে একা একা ‘রাজনৈতিক হতাশা’র করালগ্রাস থেকে নিজের বুকের ভেতরের অক্সিজেন সঙ্কট কাটিয়েছে। এই মানুষটির সঙ্গে থাকা আরেকজন ছিলেন আমার প্রিয় এক কমরেড। নব্বই পরবর্তী বিশ্ব রাজনীতিতে যখন ‘পেরেস্ত্রইকা’ আর ‘গ্লাসনস্ত’ নিয়ে তোলপাড়, তখন টিইউসি (ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র)’র কমরেড নুরুল ইসলাম ছিলেন আমার বোঝাপড়ার সহজপাঠ। তর্ক-বিতর্ক আর অভিমান মিলিয়েই ভালবাসার প্রশ্রয় ছিল তাঁর কাছে। কিন্তু ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শিকার হলেন সন্ত্রাসী আক্রমণের। নিজ সন্তানসহ নিজ গৃহে পুড়লেন। মৃত্যুশয্যায় কমরেড বলেও গেলেন সন্দেহজনক হত্যাকারীদের কথা। কিন্তু রাষ্ট্র এক অদ্ভুত রহস্যময়তায় আজও সেই হত্যার বিচার করল না! পেরিয়ে গেছে এক দশক। এই হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে ‘কবি’ ও ‘কমরেড’ এর আধেক পরিবারের সঙ্গে রাজপথে যোগাযোগ বাড়ে গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে। কিন্তু বুকের ভেতরের আফসোস দীর্ঘতর হয়! ‘এই জাতি কী একজন কবিকেও হারাল’! সে-ই কষ্ট কাটে যখন বইমেলায় খবর পাই কবির কাছ থেকেই। বই আসছে। বইয়ের নাম ‘তমোহর! নিজ সন্তানের নাম আর তাঁর যাপিত জীবনের বর্তমান সময় মিলিয়ে এ এক অদ্ভুত সৃৃজন -‘তমোহর’। বড্ড কঠিন বন্ধ্যাসময়ে ‘তামস-হর’কারী এই ‘তমোহর’ আমাদের যাপিত জীবনের এক বাতিঘর। তাই তো রুবী রহমানের ভাষায় বলি, ‘অনাহারে-অর্ধাহারে মরে তো গিয়েছি কবে/ দু’চামচ স্বপ্ন দাও খেয়ে বেঁচে উঠি।’ অনুষ্ঠানে রুবী রহমানের কবিতা নিয়ে কথা বলেন আবুল কাসেম ফজলুল হক, আনোয়ারা সৈয়দ হক, ফেরদৌস নাহার, কাজল শাহনেওয়াজ, আনিসুল হক, মুম রহমান, পিয়াস মজিদসহ অনেকেই। ৮ এপ্রিল ২০১৮ [email protected]
×