ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের দ্বিতীয় বৈঠক অনিশ্চিত

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর কোন লক্ষণ নেই, ওরা এখনও আসছে

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৮ এপ্রিল ২০১৮

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর কোন লক্ষণ নেই, ওরা এখনও আসছে

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রশ্নে মিয়ানমার দীর্ঘ সময়জুড়ে কালক্ষেপণ করে চলেছে। তারা রোহিঙ্গা ইস্যুতে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার পরও তার বরখেলাপ করেছে। শেষ পর্যন্ত মিয়ানমার সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সে দেশের একটি রেডিওতে সাক্ষাতকারে জানান দিয়েছেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় এ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হতে পারে। এদিকে আগামী ১১ এপ্রিল সমাজকল্যাণমন্ত্রী উইন আয়ে বাংলাদেশ সফরে এসে উখিয়া টেকনাফে রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির পরিদর্শনের কথা রয়েছে। এরপরই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সহায়তার জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার নতুন একটি চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। অপরদিকে, রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে এসে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ এখনও অব্যাহত রয়েছে। গত শুক্রবার নাফ নদী দিয়ে নৌকাযোগে পার হয়ে এসেছে ১১ রোহিঙ্গা। র‌্যাব সদস্যরা এ বিষয়ে অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গাদের আনয়ন কাজে দুই দালালকে তিন মাসের কারাদ- দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সীমান্তের ওপার ও এপারের সূত্রগুলো জানিয়েছে, রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ কখন বন্ধ হবে তা সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। যেখানে প্রত্যাবাসনের কথা চলছে সেখান থেকে রোহিঙ্গারা এখনও পালিয়ে আসছে। রাখাইন রাজ্যে পরিচালিত সামরিক অভিযানের তিন মাস পর গত বছরের ২৩ নবেম্বর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে। শর্ত ছিল চুক্তি স্বাক্ষরের দুই মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে। কিন্তু ইতোমধ্যে পাঁচ মাস সময় অতিবাহিত হতে চলেছে। কিন্তু চুক্তির কোন কার্যকারিতা নেই। বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম দফায় যে একটি তালিকা দেয়া হয়েছিল তাতে পূরণকৃত ফরম চুক্তির আলোকে হয়নি দাবি করে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী। চলতি মাসের শেষদিকে দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের দ্বিতীয় বৈঠক হওয়ার যে কথা রয়েছে সে বিষয়ে মিয়ানমার পক্ষ সময় চাইতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। গত শুক্রবার মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে দেশটির সরকারী উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এক বৈঠকও হয়েছে। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের বিষয়ে সময় চাওয়ার। এদিকে রোহিঙ্গাদের সহজে প্রত্যাবাসন না করতে বিভিন্ন এনজিও সংস্থা সরকারের মন গলানোর প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা (এনজিও) তাদের স্বার্থ সিদ্ধির উদ্দেশে গর্ভবতী মহিলা ও শিশুদের নিয়ে মনগড়া জরিপ প্রচার করে চলেছে। গর্ভবতী মহিলা ও শিশুরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানানো হচ্ছে। অথচ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার সময় রোহিঙ্গারা বিভিন্ন রোগ বহন করে এসেছে। সরকার মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বসে থাকেনি। বাসস্থান, খাবার, পরিধেয় কাপড়, থালাবাসন ইত্যাদি ত্রাণসামগ্রী প্রদানের পাশাপাশি জোরালোভাবে স্বাস্থ্যসেবাও দিয়ে চলেছে। রোহিঙ্গাদের সুস্থ রাখতে স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও সংস্থার কর্মীরাও কাজ করে যাচ্ছে। টেকনাফ ও উখিয়ায় সরকারীভাবে ১৭টি শিশুদের পুষ্টিহীনতা দূরীকরণে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র চালু রয়েছে। উখিয়ায় সরকারী ১১টি ও বেরসকারী ৭৬টি মেডিক্যাল ক্যাম্পে শিশুদের পুষ্টিহীনতা দূরীকরণে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে। টেকনাফ উপজেলায় সরকারী ছয়টি ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থা পরিচালিত ২০টি মেডিক্যাল সেন্টারে শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে। অথচ ২২ হাজার গর্ভবর্তী রোহিঙ্গা মা ও ২৫ হাজার শিশু মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে বলে অপপ্রচার করে প্রত্যাবাসনে বিলম্ব ঘটানোর একটা কৌশল বলে জানিয়েছেন সচেতন মহল। রোহিঙ্গাদের মধ্যে এইডস, ডিপথেরিয়া, হাঁপানি, কাশি, চর্মরোগ, চোখের রোগ, আমাশয়, পেটের ব্যথা, নিউমোনিয়া, পুষ্টিহীনতা ও শ^াসতন্ত্রের সংক্রমণসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছে এদেশে। বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পর সরকার ও এনজিও সংস্থার কর্মীরা ওই রোহিঙ্গাদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে। প্রত্যাবাসন হলেও সেখানে আন্তর্জাতিকভাবে চিকিৎসাসেবা দেয়ার বিষয়েও জাতিসংঘ মিয়ানমারের কাছে প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে কিছু রোহিঙ্গাদরদি এনজিও তাদের স্বার্থ হাসিল বা বিদেশী অর্থ আত্মসাত করতে রোহিঙ্গাদের আরও বেশিদিন স্থায়ী করে রাখার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এনজিও কর্মী ইয়াবাসহ আটক ॥ টেকনাফে ১০ হাজার ২৯ পিস ইয়াবাসহ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্বরত এক এনজিও সংস্থার নারী কর্মীকে গ্রেফতার করেছে বিজিবি। এনজিও কর্মী লাকি শর্মা টেকনাফ ডেইলপাড়ার বাসিন্দা প্রবাস কান্তি দাসের স্ত্রী। ধৃত মহিলাকে জব্দকৃত ইয়াবা ট্যাবলেটসহ টেকনাফ মডেল থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে দমদমিয়া চেকপোস্টে যানবাহন তল্লাশিকালে কক্সবাজারগামী স্পেশাল সার্ভিস পরিবহনের একটি বাস থেকে বিজিবি তাকে আটক করে। শনিবার টেকনাফ থানা পুলিশ ওই এনজিও কর্মীকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। জানা গেছে, ধৃত নারী শেডসহ বিভিন্ন এনজিও সংস্থায় কর্মরত ছিল। সর্বশেষ সে টেকনাফে গণস্বাস্থ্য এনজিওতে কর্মরত ছিল বলে সূত্র জানিয়েছে।
×