ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

রাখাইনে খাদ্যাভাব ও নির্যাতন চলায় রোহিঙ্গারা এখনও অনুপ্রবেশ করছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৮ এপ্রিল ২০১৮

রাখাইনে খাদ্যাভাব ও নির্যাতন চলায় রোহিঙ্গারা এখনও অনুপ্রবেশ করছে

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ কোনভাবেই বন্ধ হচ্ছে না রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ। নাফ নদী পেরিয়ে টেকনাফের উপকূলীয় বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করছে। তবে ইতিপূর্বেকার তুলনায় তা একেবারেই কম। এসব রোহিঙ্গাদের অধিকাংশ উখিয়ার আশ্রয় শিবিরে স্থান পেতে সক্ষম হচ্ছে। অপরদিকে, রাখাইন রাজ্যে যেসব রোহিঙ্গা বসতি এখনও অবশিষ্ট রয়েছে সেখানে এবং যারা বিভিন্ন শিবিরে অবস্থান করছে সেসব পয়েন্টে খাদ্যাভাব দিন দিন প্রকট হচ্ছে। পাশাপাশি সাধারণ রোহিঙ্গাদের ওপর সেনা সদস্য ও উগ্র মগদের নানামুখী অত্যাচার অব্যাহত রয়েছে। অনেকে প্রতিনিয়ত মারধরের শিকার হচ্ছে, কেউ বা পাচ্ছে চলে যাওয়ার হুমকি। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল হোসেন জানিয়েছেন, শনিবার দুপুরে টেকনাফের সাবরাং হারিয়াখালি থেকে নতুন অনুপ্রবেশকারী ৩ রোহিঙ্গা পরিবারকে আশ্রয় ক্যাম্পে প্রেরণ করা হয়েছে। নতুন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের মধ্যে সালেহ আহমদ জানিয়েছেন, খাদ্য সঙ্কটের কারণে তারা রাখাইন থেকে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে। এছাড়া সেখানে রোহিঙ্গাদের জীবনের নিরাপত্তা এখনও নেই। প্রতিদিন রাখাইন থেকে রোহিঙ্গারা দেশান্তরী হচ্ছে, যাদের অধিকাংশ আসছে বাংলাদেশে। অপরদিকে, প্রত্যাবাসন প্রশ্নে মিয়ানমার সরকার এখন সম্পূর্ণ নীরবতাই পালন করে যাচ্ছে। ওপারের সূত্রগুলো জানিয়েছে, সেনাবাহিনী ও এনএলডি সরকারের মধ্যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে একক সিদ্ধান্তে না আসা পর্যন্ত এতে কোন অগ্রগতি হওয়ার আশা নেই। ইতোমধ্যে রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসন হবে এমন রোহিঙ্গাদের জন্য বেশকিছু আশ্রয় শিবির নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা বসতিগুলো নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে আদর্শ বৌদ্ধ পল্লী। যেখানে রাখাইন সম্প্রদায়ের সদস্যদের স্থান করে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী সংগঠন আল ইয়াকিন তথা আরসার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে যাদের সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে তাদেকে ধরপাকড়ের জন্য প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিতরণে ৮ নির্দেশনা ॥ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এনজিওবিষয়ক ব্যুরো রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণে ৮টি নির্দেশনা দিয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার জন্য এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ওই নির্দেশনার মধ্যে সন্ধ্যার পর আশ্রয় শিবিরে কোন এনজিও কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না বলে উল্লেখ রয়েছে। তাদের কার্যক্রম মানবিক সহায়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত থাকা যাবে না। জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৭২টি এনজিও ত্রাণ কার্যক্রম চালালেও এদের কিছু কিছু এনজিওর বিরুদ্ধে ত্রাণ কার্যক্রমে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ইতিপূর্বে সরকার অনিয়মের প্রমাণও পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক কেএম আবদুস সালাম স্বাক্ষরিত ৬ মার্চ প্রেরিত নির্দেশনাপত্রে বলা হয়েছে, অনুমোদিত এফডি-৭ অনুযায়ী সব সামগ্রী নিয়ে সংশ্লিষ্ট এনজিওকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে রিপোর্ট করতে হবে। প্রতি পাতায় এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর কর্মকর্তা কর্তৃক অনুস্বাক্ষরিত এফডি-৭’র কপি আবশ্যিকভাবে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার, জেলা প্রশাসকের কাছে দাখিল করা এবং জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধায়নে ও নির্দেশনা অনুযায়ী কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রকল্পভুক্ত কর্মীদের তালিকা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার, জেলা প্রশাসকের কাছে দাখিল এবং এর অতিরিক্ত কোন কর্মীকে ত্রাণ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত কর যাবে না। এই কার্যক্রমে সংযুক্ত সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবকের এনজিও কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সরবরাহ করা পরিচয়পত্র দৃশ্যমানভাবে ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকের কাছে দাখিল করা এফডি-৭’র প্রাপ্তি স্বীকারপত্র ১৫ দিনের মধ্যে এনজিওবিষয়ক ব্যুরোতে দাখিল করতে হবে। কর্মসূচী বাস্তবায়নের ১৫ দিনের মধ্যে সমাপনী প্রতিবেদন, স্থানীয় প্রশাসনের প্রত্যয়নপত্র এবং ৩০ দিনের মধ্যে অডিট রিপোর্ট এনজিওবিষয়ক ব্যুরোতে দাখিল করতে হবে। চিকিৎসা এবং জরুরী সেবা প্রদানকারী সংস্থাসমূহ ব্যতীত অন্য কোন এনজিও সন্ধ্যার পর রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। এনজিওর কার্যক্রম মানবিক সহায়তার মধ্যে সীমাবন্ধ থাকতে হবে। সংস্থা বা প্রকল্পের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রকল্প বাস্তবায়নকালে রাষ্ট্র, সরকার ও প্রত্যাবাসনবিরোধী কর্মকা-ে জড়িত হতে পারবে না।
×