ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

স্বদেশ রায়ের গুচ্ছ কবিতা

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৬ এপ্রিল ২০১৮

স্বদেশ রায়ের গুচ্ছ কবিতা

জল রেখা একদিন অনেক জলের রেখা এসে এঁকে বেঁকে তোমার শরীরে অনেক ছবি এঁকে দিলো। তুমি সে ছবির দিকে না তাকিয়ে কেবলই সুইমিং পুলে জলের সঙ্গে অনেক খেলায় মাতলে আর আমি, এক বুক জলে দাঁড়িয়ে কেবলই দেখলাম তোমার শরীরে কত ছবি আঁকছে জল। আহা! জল কি নিপুণ শিল্পী। গভীর সমুদ্রের বুকে অনেক রোদের নিচে আমি দেখেছি জল কত ছবি আঁকে তিমির শরীরে। ওই সব তিমিরা ভালোবাসায় একে অপরের শরীরে শীরর ঢেলে দেয়। সুইমিং পুল থেকে উঠে আরও রাতের গভীরে তোমার শরীরে তিমির মতই শরীর ঢেলে দেব আমি, তোমার আঙুল তখন জলরেখা হয়ে যাবে, অনেক অনেক ছবি এঁকে যাবে আমার শরীরে। আহা! তোমার আঙুল জল রেখা আর তোমার শরীরে আমি সাগরের উদ্দাম তিমি না সুইমিং পুলের এলানো শরীরের সেই ছবি। কী আমি ভালোবাসি জানি না, তুমি কি জানো কী ভালোবাসো তুমি? . হারানো দ্বীপ খুঁজে পেয়ে ভয়টা আমাকে শীতের চাদরের মতো জড়িয়ে ধরেছে, তোমার সঙ্গে দেখা হলে তোমাকে হারিয়ে ফেলি যদি। তোমাকে হারালে আমার কৃষ্ণচূড়া হারিয়ে যাবে, হারিয়ে যাবে শুকসরসীতে ভাসা দীর্ঘ গ্রীবার রাজহাঁস হারিয়ে যাবে নদীর জোয়ারের ছল ছল পানি- হারিয়ে যাবে বর্ষা দিনের মাতাল বাতাসের দোলানি। তুমি হারিয়ে গেলে, হারিয়ে যাবে আমার শিমুল গাছের কাঁটা, রেলগাড়ির ভেঁপু, যাত্রীর কোলাহল। এমনকি তুমি হারিয়ে গেলে আমার শরৎও হারিয়ে যেতে পারে- হারিয়ে যেতে পারে পূঁজোর দিনের অনেক ধুপের গন্ধ। সারাটা জীবন বেহুলার মতো ভেলা নিয়ে ভেসে ভেসে এ আমি কোন স্বর্গে এলাম! এখন তোমার সঙ্গে দেখা হলে উর্বসী বুড়ি হয়ে যাবে, রম্ভার মাথায় দেখা যাবে পাকা চুল। তাহলে কী তোমার সেই আষাঢ়ের ঘন মেঘের মতো চুলও আমি হারিয়ে ফেলব? এ তুমি কোন জয় দিলে বিধাতা! এর থেকে পরাজিত, পলাতক আমি সবার অলক্ষ্যে ছিলাম তো অনেক ভালো। বাতাসে মাতাল সেই শাদা ওড়নায় নিত্য ভাসতো আমার মন- যেমন করে নাবিক ভাসে শাদা ফেনার সমুদ্রে সারাজীবন। . সাধারণ মেয়ে রাজলক্ষ্মী, একটি ঝড়ো বাতাস এসে তোমাকে ভুলিয়ে দিতে চায়, সে বলে তুমি অতি সাধারণ বাতাস, যা নিত্যদিন বয়ে চলে- বরং তুমি আমাকে দেখো, দেখো আমি ঝড়, আমি কন্যা নটরাজের, আমার নাচের কটাক্ষে স্বর্গ, মর্ত্য পাতাল সবই জেগে ওঠে এক সুরে- আর সেই আমি দুবাহু রাখতে চাই তোমার গলায়। বলো রাজলক্ষ্মী তাকি কখনো হয়! ঝড়ো বাতাস কি কখনো কেড়ে নিতে পারে আমার নিঃশ্বাসের অতি সাধারণ বাতাসকে। আমি এই ধুলো, ময়লা জড়ানো সাধারণ বাতাসে ডুবে থাকতে চাই, শুধু চাই নয়- আমি তো ডুবে আছি, ডুবে থাকবো জীবনের গলিপথের শেষ প্রান্তে গিয়েও থাকব আমি। জীবনের ওপারে জানি কিছুই থাকে না, তারপরেও তুমি যদি থাকো রাজলক্ষ্মী, তোমার জন্যে আমি সকল সত্যকে দুপায়ে মাড়িয়ে চলে যাব জীবনের ওপারেও। . ডুব সাঁতার তোমার সামনে উম্মুক্ত আকাশ, দিগন্ত রেখায় ডুবে যাচ্ছে দিনের সূর্যটি- তোমার হৃদয়ের মতই লাল গোলাকার আলোর রেখা তার চারপাশে। তোমার পাখনায় তখন নীড়ে ফেরার উদ্দাম গতিবেগ, তোমার ঠোঁটে তখন আরক্ত সূর্যের আবীর মাখানো আভা। এদিকে যে আমাকে তুমি ভুলে যাওয়া বাতাস থেকে কুড়িয়ে পেয়েছো, সে আমি কবেই ভুলে গেছি দিগন্ত রেখা, লাল আগুনের টুপি পরে যে সূর্য এক দিগন্তে উঁকি দিত আরেক দিগন্তে হারিয়ে যেত- সে এখন আমার অনেক অনেক অতীতের এক স্মৃতি। তুমি তোমার জীবনভর আকাশ দেখেছো, দিগন্ত রেখা দেখেছো- হয়তো দেখছো অজস্্র ভালো লাগার বৃষ্টির ফোঁটা, মনের অতলে খুঁজলেও পাবে না কবে কোনদিন তোমার নীল সরোবরের মতো গভীর চোখ দুটি ক্ষণিক দৃষ্টি ফেলেছিলে কিনা আমার সাধারণ মুখের ওপর। তোমার দৃষ্টির বাইরে থাকলেও কোন ক্ষতি মনে করিনি আমি, তোমাকে দেখেছিলাম আমি, এখনও প্রতিদিন দেখি- যেমন করে দেখ তুমি তোমার সামনে নিজেকে মেলে ধরা লাল টুপি পরা দিগন্ত রেখার সূর্যটিকে। তুমি সূর্যকে ভালোবাসো আমি জানি, তোমাকে ভালোবাসার দূরন্ত সাহস আমি পাইনি কখনো, তবে তার থেকেও সাহসী আমি তোমাকে রেখে দিয়েছি মনের অনেক অনেক গভীর অতলান্তে - যেখানে জমা থাকে মনের সব বরফ- তাই হাজার বছর কেটে গেলেও তুমি তেমনি থাকবে- যেমন হিমবাহের শীতল শরীরে অবিকল থাকে পর্বতারোহীর কোমর থেকে খসে পড়া তার লাল ফিতাটি। পর্বতারোহীর লাল ফিতার একটা নাম আছে। তোমাকে ভালোবাসার সাহস পাইনি, আবার ভুলতে পারেনি একটি মুহূর্তের জন্যে। তাই কোন শব্দে, কোন অভিধায় ডাকবো তোমাকে- জানি না আজও। শুধু জানি তুমি অবিকল তেমনটি আছো, আমার মনের শান্ত শীতল পুকুরে। যেখানে তোমাকে নিয়ে আমার একাকি একান্ত ডুব সাঁতার- একান্ত আমারই ডুব সাঁতার।
×