ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগে চ্যাম্পিয়ন আবাহনী

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৬ এপ্রিল ২০১৮

প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগে চ্যাম্পিয়ন আবাহনী

মিথুন আশরাফ ॥ ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে ২০১৭-১৮ মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আবাহনী লিমিটেড। বৃহস্পতিবার লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জকে ৯৪ রানে হারিয়ে সর্বোচ্চ ২৪ পয়েন্ট নিয়েই শিরোপা ঘরে তুলে আবাহনী। নাসির হোসেন অসাধারণ ব্যাটিং করে ১২৯ রানের ইনিংস খেলেন। নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাট থেকে আসে ১১৩ রান। এ দুই ব্যাটসম্যানের দুর্দান্ত নৈপুণ্যেই শিরোপা জিতে আবাহনী। লীগের রানার্সআপ হয় শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। দলটি খেলাঘর সমাজকল্যাণ সমিতির কাছে ৪ উইকেটে হেরেও রানার্সআপ হয়। কারণ রূপগঞ্জের সঙ্গে সমান ২০ পয়েন্ট শেখ জামালের। সুপার লীগে রূপগঞ্জকে হারিয়ে ‘হেড টু হেডে’ এগিয়ে থাকে। তাতেই শেখ জামাল রানার্সআপ হয়। বৃহস্পতিবার আরেকটি ম্যাচ হয়। যে আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সকে ৫ উইকেটে হারায় প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব। আবাহনী-রূপগঞ্জ ম্যাচ ॥ বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে টস জিতে রূপগঞ্জ। কিন্তু আবাহনীকে আগে ব্যাট করতে পাঠায়। সুযোগ পেয়ে ব্যাটসম্যানরা এমনই ব্যাটিং করেন যে, ৬ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ৩৭৪ রান তুলে ফেলেন। তাতেই রূপগঞ্জের হারের সমাধি যেন তৈরি হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ২৮০ রানেই অলআউট হয়ে যায় রূপগঞ্জ। আবাহনীর ক্রিকেটাররাও শিরোপা জয়ের উৎসবে মাতেন। এর আগে ২০১৫-১৬ মৌসুমে শেষবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আবাহনী। গত মৌসুমে শিরোপা জিতেছিল গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স। এবার আবার আবাহনী শিরোপা পুনরুদ্ধার করল। এ জয়ে ১৬ ম্যাচে সর্বোচ্চ ২৪ পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলো আবাহনী। আবাহনীর কাছে হারায় রানার্সআপও হতে পারেনি রূপগঞ্জ। সমান ২০ পয়েন্ট হলেও হেড টু হেডে রানার্সআপ হয়েছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। আবাহনীর দেয়া ৩৭৫ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ওপেনার আব্দুল মজিদ ও অভিষেক মিত্রকে হারিয়ে খাদের কিনারায় পড়ে যায় রূপগঞ্জ। সেখান থেকে মুশফিকুর রহীম ও মোহাম্মদ নাঈম মিলে এগিয়ে গিয়ে ৯১ রানের জুটি গড়েন। এরপর মোহাম্মদ নাঈম আউট হয়ে গেলে চতুর্থ উইকেটে অধিনায়ক নাঈম ইসলামকে নিয়ে জুটি বাঁধেন মুশফিক। ৫৮ রান যোগ করেন তারা। এরপর পঞ্চম উইকেটে ভারতীয় ব্যাটসম্যান পারভেজ রসুলের সঙ্গে ৪৯ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক। কিন্তু এ জুটি ভাঙতেই যেন তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়ে রূপগঞ্জের ইনিংস। শেষ ৬টি উইকেট হারায় তারা ৪১ রান তুলতেই। আর দলীয় ২৮০ রানের মাথায় আউট হন চার ব্যাটসম্যান। ৪৪ বল বাকি থাকতেই অলআউট হয়ে যায় দলটি। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৬ রানের ইনিংস খেলেছেন নাঈম ইসলাম। আবাহনীর ওপেনিং জুটিতেই আসে ৯২ রান। এরপর অবশ্য দ্রুত ৩টি উইকেট হারায় তারা। কিন্তু চতুর্থ উইকেটে ১৮৭ রানের জুটিতে বড় সংগ্রহের ভিত পেয়ে যায় আবাহনী। শেষ দিকে মাশরাফি বিন মর্তুজা ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন। ফলে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৭৪ রান করে দলটি। নাসিরকে যেন এতদিন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। ফাইনালে এসে নিজেকে মেলে ধরেন। ৯১ বলে ১২৯ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন এ ব্যাটসম্যান। ১৫টি চার ও ৪টি ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান। নাসিরের সঙ্গে সেঞ্চুরি করেন নাজমুল হোসেন শান্তও। লীগে এটা তার চতুর্থ সেঞ্চুরি। ১০৭ বলে ১১টি চার ও ২টি ছক্কায় ১১৩ রান করেন এ ওপেনার। এ দুইজনের ব্যাটিং তা-বেই শিরোপা জিতে আবাহনী। খেলাঘর-শেখ জামাল ম্যাচ ॥ শেখ জামালের সামনে শিরোপা জেতার সুযোগ ছিল। কিন্তু আবাহনী জিতে সবার আশা শেষ করে দেয়। শেখ জামাল তো ম্যাচই জিততে পারেনি। খেলাঘরের কাছে নাস্তানাবুদ হয়। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে ৪৫ ওভারে ১৬০ রান করতেই গুটিয়ে যায় শেখ জামাল। নুরুল হাসান সোহান সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেন। জবাব দিতে নেমে ৩৬.৫ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৬১ রান করে জিতে যায় খেলাঘর। নাজিমুদ্দিনের ব্যাট থেকে আসে ৬১ রান। ৩২ রানেই চার উইকেট হারিয়ে বসে খেলাঘর। কিন্তু পঞ্চম উইকেটে গিয়ে নাজিমুদ্দিন ও রাফসান আল মাহমুদ (৪৬) মিলে দলকে জয়ের কাছে নিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়। তবে ৫ উইকেট নেয়ায় নাজমুল ইসলাম অপু হন ম্যাচ সেরা। দোলেশ্বর-গাজী গ্রুপ ম্যাচ ॥ ফতুল্লায় দুই দলের মধ্যকার আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচ হয়। দুই দলই শিরোপা রেস থেকে আগেই ছিটকে পড়ে। এরপরও জয়ের ক্ষুধা ঠিকই থাকে। কিন্তু গাজী গ্রুপ যখন ৯৫ রানেই অলআউট হয়ে যায় তখন দোলেশ্বরের জেতা যেন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। মেহেদী হাসান (৩৯) ছাড়া কেউই ব্যাট হাতে হাল ধরতে পারেননি। মাসুম আহমেদ ৪টি ও আরাফাত সানি ৩টি উইকেট শিকার করেন। জবাব দিতে নেমে ৭২ রান করতেই ৫ উইকেট হারায় দোলেশ্বর। তবে শেষ পর্যন্ত জয় পেতে খুব কষ্ট হয়নি। ২৪ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৯৯ রান করে জিতে দোলেশ্বর। সায়েম ৩৬ ও ফজলে মাহমুদ ৩১ রান করেন। স্কোর ॥ আবাহনী-রূপগঞ্জ ম্যাচ, আবাহনী ইনিংস ॥ ৩৭৪/৬; ৫০ ওভার (বিজয় ৫৭, শান্ত ১১৩, বিহারি ৬, মিঠুন ১, নাসির ১২৯, সৈকত ১৯*, মিরাজ ৭, মাশরাফি ২৮*; শহীদ ২/৮১, আশিকুজ্জামান ০/৬৮, পারভেজ ৩/৪২, আসিফ ১/৯৩, মোশাররফ ০/৫৩, নাঈম ইসলাম ০/৩২)। রূপগঞ্জ ইনিংস ॥ ২৮০/১০; ৪২.৪ ওভার (মজিদ ০, মোহাম্মদ নাঈম ৭০, অভিষেক ১৩, মুশফিক ৬৭, নাঈম ইসলাম ৭৬, পারভেজ ২৯, মিলন ৭, মোশাররফ ৭, শহীদ ০, আশিকুজ্জামান ০*, আসিফ ০; মিরাজ ২/২৯, মাশরাফি ১/৩০, সানজামুল ২/৬৩, সন্দিপ ২/৫৩, নাসির ২/৬৭, সাকলাইন ০/৩৭)। ফল ॥ আবাহনী ৯৪ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ নাসির হোসেন। খেলাঘর-শেখ জামাল ম্যাচ, শেখ জামাল ইনিংস ॥ ১৬০/১০; ৪৫ ওভার (সোহান ৪৭, সোহাগ ২৭, আল ইমরান ২৫; সাদ্দাম ২/১৮)। খেলাঘর ইনিংস ॥ ১৬১/৬; ৩৬.৫ ওভার (নাজিমুদ্দিন ৬১, রাফসান ৪৬; নাজমুল ৫/৩২)। ফল ॥ খেলাঘর ৪ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ নাজমুল ইসলাম (শেখ জামাল)। দোলেশ্বর-গাজী গ্রুপ ম্যাচ, গাজী গ্রুপ ইনিংস ॥ ৯৫/১০; ২১.৪ ওভার (মেহেদী ৩৯, মুমিনুল ১৬, নাদিফ ১০; নাসুম ৪/১০, আরাফাত ৩/২৬)। দোলেশ্বর ইনিংস ॥ ৯৯/৫; ২৪ ওভার (সায়েম ৩৬, ফজলে ৩১; রনি ৩/২৭)। ফল ॥ দোলেশ্বর ৫ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ নাসুম আহমেদ (দোলেশ্বর)।
×