ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সুভাষ সিংহ রায়

অর্ধসত্য, আংশিক সত্য ॥ বিএনপির রাজনীতি

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ৬ এপ্রিল ২০১৮

অর্ধসত্য, আংশিক সত্য ॥ বিএনপির রাজনীতি

আফম বাহাউদ্দিন নাসিম এখন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সংসদ সদস্য। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনের পর তাঁকে গ্রেফতার করে যে অমানুষিক অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছিল তা হয়ত অনেকেই ভুলে গেছেন। ক্ষীণদৃষ্টিসম্পন্ন বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই এখন বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাস নিয়ে ভীষণ চিন্তিত ও মর্মাহত। অথচ ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের পরের সেই ভয়ঙ্কর দিনগুলোতে বেগম খালেদা জিয়ার মন্তব্য বিবৃতি পুনর্পাঠ করলে বোঝা যাবে কতটা নিষ্ঠুর পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশ গিয়েছে। তখন পলিটিক্যাল ক্রিটিকরা আওয়ামী লীগ বিএনপির পাল্টাপাল্টি ঘটনা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেছে। জাতীয় প্রেসক্লাবে আফম বাহাউদ্দিন নাসিমের সহধর্মিণী যে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন সেখানে মানবাধিকারের ঝান্ডা তুলে ধরার মানুষের অনেককে দেখা যায়নি। এখনকার সময়ে যেভাবে বিএনপি নেত্রীর পক্ষে মানবাধিকারের কথা শুনতে পাই, তখন তারা কেন নিশ্চুপ ছিলেন? অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন, ‘বাংলার বিবেক বড়ই সন্দেহজনক, ’৭৪-এর বিবেক ’৭৬-এর সেনাশাসকের সেবাদাসে পরিণত হয়।’ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার কথা বিএনপি না হয় ভুলে যায়; কিন্তু পলিটিক্যাল ক্রিটিকরা ভোলেন কি করে? বেগম খালেদা জিয়া ২১ আগস্টের পর কি প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? তখন জাতীয় সংসদ চলছিল। সেখানে এ ব্যাপারে সরকারী দল বিএনপির কেমন আচরণ ছিল? প্রায় দশজনের মতো সংসদ সদস্য মারাত্মকভাবে আহত হওয়ার পরও সংসদে মুলতবি প্রস্তাব আনতে দেয়া হয়নি। বরং কি নিষ্ঠুরভাবে বলা হয়েছিল, শেখ হাসিনা ভ্যানিটিব্যাগে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলেন। একটি সরকার কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে তা দেখিয়েছিল সেই সময়কার জামায়াত-বিএনপি সরকার। গাজীপুরের কাপাসিয়ার জামালউদ্দিন ফকির অসাধারণ মেধাবী ছিলেন। তিনি সাঁতারে চ্যাম্পিয়ন ছিলেন; তাকে পিটিয়ে হত্যা করে পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছিল। তিনি বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন পাঠাগারের সভাপতি ছিলেন। তখন এখনকার মতো বিরোধী দলের সংবাদ পত্রিকাগুলো ছাপত না। জনকণ্ঠসহ দু’-একটি পত্রিকা সে সময়কার বিবেচনায় দুঃসাহসিক কাজ করেছিল। আজকের প্রধানমন্ত্রী সে সময় প্রতিদিনই ঢাকা শহরের হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছুটে গেছেন। তখন মানবতার ফেরিওয়ালাদের কোথাও দেখা যায়নি। সুশাসনের জন্য নাগরিকদের টুঁ শব্দ করতে দেখিনি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ২৩ বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে নোঙ্গরখানা খুলতে হয়েছিল। বিএনপির পক্ষ থেকে সব সময় বলা হয় তাদের সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হয় না। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে রাসেল স্কয়ার থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে সাভার স্মৃতিসৌধের সামনে রেখে এসেছিল। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতনের কথা বাংলাদেশের কে না জানে। আবার আফম বাহাউদ্দিন নাসিমের কথায় ফিরে আসি। সে সময় আমাকে অনেকেই বলেছেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ওপর মানসিক চাপে বিপর্যস্ত করার জন্য আফম বাহাউদ্দিন নাসিমকে ক্রমাগত অত্যাচার করা হয়েছিল। ॥ দুই ॥ এখন বিএনপির পক্ষ থেকে প্রায়ই বলা হয়, জেলখানাতে কোন জায়গা নেই। বিএনপির সব নেতা-কর্মীদের ধরে নিয়ে জেলখানা ভরে ফেলা হয়েছে। পাকিস্তানের একজন বিচারক ছিলেন বিচারপতি রুস্তম কায়ানী। তিনি প্রধান বিচারপতিও ছিলেন। তাঁর লেখা মোট পাঁচটি বইয়ের কথা আমি জানি। এর মধ্যে তিনটে বই হচ্ছে The whole Truth, Not the whole truth, Half truth। আমরা বাংলাদেশে আংশিক সত্য, অর্ধ সত্যের সমাহার দেখি। এটা কিন্তু মিথ্যার চেয়ে ভয়ঙ্কর। বাংলাদেশে এখন ৬৮টি কারাগার আছে, আর এখন মোট কয়েদি আছেন ৭৯২৮০ জন । এরা সবাই নিশ্চয়ই বিএনপির নেতা-কর্মী নয়। ষোলো কোটি জনসংখ্যার দেশে কারাগারে কয়েদির এই সংখ্যা কি খুব বেশি? বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাস নিয়ে আমাদের মানবতার ফেরিওয়ালাদের ভীষণ ব্যাকুলতা। আমরা জানি, বেগম জিয়া সব সময় রাজকীয় জীবনযাপনে অভ্যস্ত। কষ্ট কি জিনিস কখনই বোধ হয় খুব একটা টের পাননি এবং তাঁর ভক্তকুলের সংখ্যা নিতান্তই কম নয়; বিশেষ করে অভিজাত সমাজে। বিখ্যাত রাজনীতিবিদরা জেলখানায় গিয়ে খুবই গঠনমূলক সময় কাটান। বই পড়েন, ডায়েরি লেখেন, বই লেখেন, ধর্মাচরণে অধিক মনোযোগী হন, বাগান করেন। বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ পড়লেই তা বিশেষভাবে জানা যায়। জেলখানা রাজনীতিবিদদের সমৃদ্ধ করে, মূল্যবোধের জায়গা আরও শাণিত করে। ১/১১-এর সময়ে শেখ হাসিনা জেলখানার ভেতরে নানাভাবে ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে বঙ্গবন্ধু বিশিষ্ট সমাজসেবী চন্দ্র ঘোষের কথা লিখেছেন। চন্দ্র ঘোষ বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, ‘আমাকে বাইরের হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন। আমার তো কেউ নেই। আমি শেখ মুজিবুর রহমানকে একবার দেখতে চাই, সে আমার ভাইয়ের মতো। জীবনে তো আর দেখা হবে না।’ সিভিল সার্জন এবং জেলের সুপারিনটেনডেন্ট তাঁদের নির্দেশে আমাকে জেলগেটে নিয়ে যাওয়া হলো। চন্দ্র ঘোষ স্ট্রেচারে শুয়ে আছেন। দেখে মনে হলো আর বাঁচবেন না। আমাকে দেখে কেঁদে ফেললেন এবং বললেন, “ভাই, এরা আমাকে ‘সাম্প্রদায়িক’ বলে বদনাম দিল; শুধু এই আমার দুঃখ মরার সময়! কোনদিন হিন্দু-মুসলমানকে দুই চোখে দেখি নাই। সকলকে আমায় ক্ষমা করে দিতে বোলো। আর তোমার কাছে আমার অনুরোধ রইল, মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখ। মানুষে মানুষে কোন পার্থক্য ভগবানও করেন নাই। আমার তো কেউ নাই, আপন ভেবে তোমাকেই শেষ দেখা দেখে নিলাম। ভগবান তোমার মঙ্গল করুক।” এমনভাবে কথাগুলো বললেন যে, সুপারিনটেনডেন্ট, জেলার, ডেপুটি জেলার, ডাক্তার ও গোয়েন্দা কর্মচারী সকলের চোখেই পানি এসে গিয়েছিল। আর আমার চোখেও পানি এসে গিয়েছিল। বললাম, ‘চিন্তা করবেন না, আমি মানুষকে মানুষ হিসেবেই দেখি। রাজনীতিতে আমার কাছে মুসলমান, হিন্দু ও খ্রীস্টান বলে কিছু নাই। সকলেই মানুষ।’ জানি না বেগম খালেদা জিয়ার বই পড়ার অভ্যাস আছে কিনা। এখন তিনি বঙ্গবন্ধুর বই দুটো পড়তে পারেন। বেগম খালেদা জিয়া ও তাঁর দলকে ভাবতে হবে রাজনৈতিক দল নৈতিকতার জগত থেকে বিচ্যুত হলে বিশাল খাদের ভেতর প্রবেশ করে। অপরাধমূলক বিশ্বাসঘাতকের ঘটনা ঘটলে সেখান থেকে খুব সহজে পার পাওয়া যায় না । ॥ তিন ॥ এই পরিসরে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ থেকে কয়েকটা উৎকলন করতে পারি। আমাদের এখনকার রাজনীতিবিদরা এখান থেকে দীক্ষা নিতে পারেন। যারা বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে বিপণনের দায়িত্ব নিয়েছেন তাঁরা কি একটা ছবিও দেখাতে পারবেন, যেখানে দুস্থ মানুষকে সহমর্মিতা প্রদর্শন করছেন? আমার মনে আছে খুবই গরিব বৃদ্ধ এক মহিলা কয়েক ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। শুনেছে এই পথে আমি যাব। আমাকে দেখে আমার হাত ধরে বলল, ‘বাবা আমার এই কুঁড়েঘরে তোমায় একটু বসতে হবে।’ আমি তার হাত ধরেই তার বাড়িতে যাই। অনেক লোক আমার সঙ্গে। আমাকে মাটিতে একটা পাটি বিছিয়ে বসতে দিয়ে এক বাটি দুধ, একটা পান ও চার আনা পয়সা এনে আমার সামনে ধরে বলল, ‘খাও বাবা, আর পয়সা কয়টা তুমি নেও, আমার তো কিছুই নাই।’ আমার চোখে পানি এলো। আমি দুধ একটু মুখে নিয়ে সেই পয়সার সঙ্গে আরও কিছু টাকা তার হাতে দিয়ে বললাম, ‘তোমার দোয়া আমার জন্য যথেষ্ট, তোমার দোয়ার মূল্য টাকা দিয়ে শোধ করা যায় না।’ টাকা সে নিল না, আমার মাথায় মুখে হাত দিয়ে বলল, ‘গরিবের দোয়া তোমার জন্য আছে বাবা।’ নীরবে আমার চক্ষু দিয়ে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়েছিল। যখন তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসি সেই দিনই আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, ‘মানুষকে ধোঁকা আমি দিতে পারব না।’ বাংলাদেশে কাউকে আমরা সেই রাজনীতির পথে চলতে দেখিনি। বরং সবকিছু চলেছে উল্টোপথে। খুব যেন গর্ব করে বলতে শুনেছি ‘আই উইল মেক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট ফর দ্য পলিটিশিয়ানস্’। একের পর রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো নীলনকশা অনুযায়ী ধ্বংস করা হয়েছে। জিয়াউর রহমানের সময়ে রাষ্ট্রপতি ছিলেন বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম। তিনি স্পষ্ট করে লিখে গিয়েছেন অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারা ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করেছেন। তাদের কেউ কেউ এখনও বেঁচে আছেন, এখনও পর্যন্ত সেই কাজটিই তারা করে যাচ্ছেন। বেগম খালেদা জিয়া বোধ হয় বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও কারাগারের রোজনামচা পড়েননি। কারাগারের দিনগুলোতে বইটা পড়লে তাঁরই উপকার হবে। যে রাজনীতিবিদ মানুষের ভালবাসা অর্জন করতে পারেন তিনিই প্রকৃত রাজনীতিবিদ। যদিও এ রকম উদাহরণ পাঠকদের জানা তারপরও এই পরিসরে একটা বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে। ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার দরিদ্র রিক্সা-ভ্যানচালক হাসমত আলী। আওয়ামী লীগের একজন অন্ধভক্ত। আওয়ামী লীগের মিছিল-মিটিংয়ের কথা শুনলেই ছুটে যেতেন। নৌকা আর বঙ্গবন্ধু নিয়েই মেতে থাকতেন সারা দিন। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের আয় দিয়ে কোনমতে সংসার চালান আর অল্প অল্প করে টাকা জমান। একদিন সেই টাকা দিয়ে নিজের স্ত্রীর নামে নয়, সন্তানের নামে নয়, দরিদ্র হাসমত এক খন্ড জমি কেনেন শেখ হাসিনার নামে। তিনি বলতেন, ‘শেখ হাসিনা আমার মেয়ে। মেয়েটা এখন এতিম। তাই ওর নামে এই জমি কিনে রেখে গেলাম।’ রমিজা খাতুন বলেন, তাঁর স্বামী নিজের ছেলেকে যতটা না ভালবাসতেন তার চেয়ে বেশি ভালবাসতেন শেখ হাসিনাকে। শেখ হাসিনাকে মেয়ে সম্বোধন করে প্রায়ই বলতেন, বঙ্গবন্ধুকে রাজাকাররা পরিকল্পিতভাবে সপরিবারে হত্যা করেছে। এখন তাঁর মেয়ে শেখ হাসিনাকেও হত্যার ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি প্রতিদিন নামাজ পড়ে শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করতেন আর বলতেন, ‘শেখ হাসিনা আমার মেয়ে। এই মেয়েটার জন্য কিছু একটা করা দরকার।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘হাসমত আলীর মতো আওয়ামী লীগের সমর্থক যতদিন বাংলাদেশের মাটিতে থাকবে, ততদিন আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না। সারাদেশের এমন হাসমত আলীদের দোয়া আর ভালবাসার কারণেই আমি সন্ত্রাসীদের গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে গেছি।’ এ রকম অসংখ্য উদাহরণ শেখ হাসিনাকে খালেদা জিয়ার থেকে পৃথক করে রেখেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলতেন, নেতার আদর্শ থাকতে হয়, নীতি থাকতে হয় । ॥ চার ॥ গত ৩ এপ্রিল ‘দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন’ একটা শিরোনাম করেছে ‘কে চালাবে বিএনপি’। সত্যি সত্যি বিএনপি এমন একটা সঙ্কটে পড়েছে। এর জন্য অবশ্যই রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি নিজেই দায়ী। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ৩ তারিখে দৈনিক প্রথম আলোর ৩ নম্বর পৃষ্ঠায় একটা সাক্ষাতকারভিত্তিক প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। সেখান থেকে কয়েকটি লাইন পাঠকদের জন্য উৎকলন করছি। উইলিয়াম মাইলাম ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এছাড়া তিনি ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানেও রাষ্ট্রদূত ছিলেন। দক্ষিণ এশীয় বিশেষজ্ঞ হিসেবে সুপরিচিত এই কূটনীতিক বর্তমানে ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টারের সিনিয়র স্কলার হিসেবে কর্মরত। নিজ দফতর থেকে তিনি টেলিফোনে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন। রাষ্ট্রদূত মাইলাম মনে করেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করা বিএনপির জন্য বড় ধরনের জুয়া খেলা ছিল, যে খেলায় তারা হেরে গেছে। সেই একই খেলা আবারও খেললে তার ফলাফল খুব ভিন্ন হবে বলে মনে হয় না। মাইলাম মনে করেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে সফল হতে হলে বিএনপিকে মধ্যপন্থী দল হিসেবে রূপান্তরিত হতে হবে। তাঁর ধারণা, বিএনপির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে নতুন, বিশেষত তরুণ নেতৃত্ব খুঁজে নেয়া। খালেদার পুত্র তারেক রহমানকে এই দলের দায়িত্ব দেয়া একটি ভুল হবে বলে মনে করেন এই কূটনীতিক। তিনি বলেন, ‘আমার তো মনে হয়, তারেক এখন যেমন পূর্ব লন্ডনে আছেন, তাঁর সেখানেই থাকা উচিত। সেখানে বসে বাঙালী খানা ভাত ও মুরগির ঝোল খেয়ে তিনি অনায়াসে সময় কাটিয়ে দিতে পারবেন।’ মাইলাম মনে করেন, বাংলাদেশের এই অগ্রগতির আসল দাবিদার দেশের ব্যক্তি মালিকানা খাত। এই খাতকে সামনে এগোতে দিতে হাসিনার সরকার বাধা দেয়নি, এই কৃতিত্ব তাদের দিতে হবে। গত কয়েক বছরে তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি রীতিমতো তাক লাগানোর মতো। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকটি পোশাক শিল্প-কারখানা ঘুরে দেখার সুযোগ তাঁর হয়েছে। মাইলাম বলেন, সেখানে যা দেখেছেন তা তাঁর কাছে খুবই উৎসাহব্যঞ্জক মনে হয়েছে। মাইলাম মনে করেন, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যক্তি মালিকানা খাত অগ্রগতি অর্জন করেছে। সামাজিক ক্ষেত্রে, বিশেষত নারী অধিকার, শিশুকল্যাণ ও শিক্ষাখাতে অসামান্য অগ্রগতি অর্জনে ভূমিকা রেখেছে দেশের বেসরকারী সাহায্য সংস্থাসমূহ; সেখানেও সরকারের ভূমিকা উল্লেখ করার মতো। মাইলাম হেসে বলেছিলেন, এখন অনেক পাকিস্তানী বুদ্ধিজীবী তাঁর কাছে নিজের দেশের দুরবস্থা বর্ণনার সময় বাংলাদেশের উদাহরণ দেন। তাঁরা ঈর্ষার সঙ্গেই বলেন, ‘দেখুন, বাংলাদেশ কেমন তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে, আর আমরা কেবল পিছু হটছি।’ এই সাফল্য সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ কতটুকু জনপ্রিয় তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়।’ এই বর্ষীয়ান কূটনীতিক মনে করেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সাফল্যের জন্য শক্তিশালী বিরোধী দল প্রয়োজন। কিন্তু বিএনপি সেই দল নয়। দেশে একটি তৃতীয় ধারার রাজনৈতিক দল চাই; কিন্তু এই মুহূর্তে তেমন কোন নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান তাঁর চোখে পড়ে না। সত্যি সত্যি বিএনপির এখন ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা। চেয়ারপার্সন কারাগারে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন ফেরারি, মহাসচিবের অবস্থা কুল রাখি শ্যাম রাখি অবস্থা। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন বিশ্বাস করেন না মহাসচিবকে, জ্যেষ্ঠ নেতারা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সনের কথায় চলতে চান না। এই বোধ হয় নিয়তি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শাস্তির কথা বলতেন এবং প্রায়শ্চিত্তেরও কথা বলতেন। বিএনপিকে আপাতত এরই মধ্যে ঘুরপাক খেতে হবে। লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
×