ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ণিল উদ্বোধন

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ৫ এপ্রিল ২০১৮

 বর্ণিল উদ্বোধন

গোলাম মোস্তফা ॥ ‘স্বপ্নকে ভাগাভগি করি’ স্লোগানকে সামনে রেখে বুধবার পর্দা উঠল ২১তম কমনওয়েলথ গেমসের। বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় অস্ট্রেলিয়ার পর্যটন নগরী গোল্ডকোস্টের কারারা স্টেডিয়ামে প্রধান অতিথি হিসেবে গেমসের উদ্বোধন করেন প্রিন্স অব ওয়েলস চার্লস। এ সময় কমনওয়েলথ গেমস ফেডারেশনের (সিজিএফ) প্রেসিডেন্ট লুইস মার্টিনও উপস্থিত ছিলেন। এবারের আসরে বাংলাদেশসহ কমনওয়েলথভুক্ত ৭১টি দেশের ৬ হাজার ছয় শ’রও বেশি এ্যাথলেট এবং কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন। এবারের আসরের মূল আয়োজক গোল্ডকোস্ট হলেও ব্রিসবেন, কেয়ার্নস এবং টাউন্সভিলেতেও অনুষ্ঠিত হবে বেশ কয়েকটি ডিসিপ্লিন। এবারের আসরে বাংলাদেশের পতাকাবহন করেছেন গত আসরের রৌপ্যজয়ী আব্দুল্লা হেল বাকী। বাংলাদেশের বহরে ছিল মোট ২৬ জন এ্যাথলেট। তবে ১২ জনের শূটিং দলটাই ছিল সবার বড়। বাকী আর শোভন চৌধুরী খেলবেন ৫০ মিটার রাইফেলের দুটি ইভেন্টে। পিস্তলের দুটি ইভেন্টে শাকিল আহমেদের সঙ্গে আনোয়ার হোসেন। মেয়েদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে আতকিয়া হাসান ও উম্মে জাকিয়া সুলতানা, আরদিনা সুলতানা ও আরমিন আশা পিস্তলে, এছাড়া সুরাইয়া আক্তার ও শারমিন শিল্পা খেলবেন ৫০ মিটার রাইফেল থ্রি পজিশন ও প্রোন। ৮ এপ্রিল ছেলে ও মেয়েদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেল ও পিস্তল ইভেন্ট দিয়ে শুরু হবে শূটিং। গেমসটির ইতিহাসে সর্বাধিক ডিসিপ্লিনে অনুষ্ঠিত হবে এবারের আসরে। মোট ২৩টি ডিসিপ্লিনের পাশাপাশি থাকছে ৭টি প্যারা স্পোর্টস। সর্বমোট ২৭৫টি স্বর্ণপদক জয়ের জন্য লড়বে কমনওয়েলথভুক্ত দেশের ক্রীড়াবিদরা। এবারই প্রথম মাল্টিইভেন্টের গেমে লিঙ্গ সমতা আনা হয়েছে। গেমেসে সমান সংখ্যক পদক রাখা হয়েছে নারী ও পুরুষ এ্যাথলেটদের জন্য। আসরে প্রথমবারের মতো অভিষিক্ত হতে যাচ্ছে বিচ ভলিবল, প্যারা ট্রাইথলন ও মহিলাদের সেভেন-এ সাইড রাগবি। গোল্ডকোস্ট শহরকে ‘সার্ফিং প্যারাডাইস’ বলা হলেও, দৃষ্টি নন্দন খেলাটি এখনও কমনওয়েলথভুক্ত না হওয়ায় সেটি স্থান পায়নি প্রতিযোগিতায়। তবে ২০১৪ সালে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত সমাপনী অনুষ্ঠানের মতো এবারও বড় একটি অংশ জুড়ে ছিল সার্ফিং নিয়ে উপস্থাপনা। গেমসকে সফল করে তোলার লক্ষ্যে ২০১২ সালের জানুয়ারিতে গড়ে তোলা হয় গোল্ডকোস্ট ২০১৮ কমনওয়েলথ গেমস কর্পোরেশন (গোলডক)। যার প্রধান কাজ হচ্ছে বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে ইভেন্টটিকে সফল করার জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সরকারকে সহায়তা করা। এবারের টুর্নামেন্টে এমন কয়েকজন এ্যাথলেট রয়েছেন যাদের ওপর আলাদা করেই দৃষ্টি থাকবে ভক্ত-অনুরাগীদের। তাদের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার চাড ল্য ক্ল, কাস্টার সিমেনিয়া, অস্ট্রেলিয়ার স্যালি পিয়ারসন, লরেন পার্কার, স্কাই নিকোলসন, বতসোয়ানার ইসাক মাকওয়ালা, ভারতের রাকেশ কুমার পাত্রা, কিরবিতির ডেভিড কাতাওয়াতাউ, জ্যামাইকার এলাইন থমসন এবং ওয়েলসের আনা হার্সি অন্যতম। প্রতি চার বছর পরপর আয়োজিত হয় কমনওয়েলথ গেমস। এ নিয়ে সর্বাধিক ৫ম বারের মতো আয়োজন করছে অস্ট্রেলিয়া। ১৯৩৮ সালে সিডনি শহর গেমসটি আয়োজন করার পর ১৯৬২ সালে পার্থ, ১৯৮২ সালে ব্রিসবেন এবং ২০০৬ সালে মেলবোর্নে আয়োজিত হয়েছে কমনওয়েলথ গেমস। তবে অস্ট্রেলিয়ার কোন আঞ্চলিক শহরের উদ্যোগে এই প্রথম আয়োজিত হচ্ছে গেমসটি। ১৯৩০ সালে কানাডার হ্যামিল্টনে এককালের ব্রিটিশ রাজ্যভুক্ত ১১টি দেশের অংশগ্রহণে আয়োজন করা হয়েছিল কমনওয়েলথ গেমসের। যেখানে অংশ নেয় ৪০০ এ্যাথলেট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৪২ ও ১৯৪৬ সালে গেমসটি আয়োজিত হয়নি। এরপর থেকে আবারও নিয়মিত সেটি আয়োজিত হয়ে আসছে। এই কমনওয়েলথ গেমস আয়োজনের প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন একজন ক্রীড়া সাংবাদিক। এর পরিচালনায় ছিলেন মেলভিল মার্কস (ববি) রবসন। তিনিই বাস্তবতার নিরিখে বুঝিয়ে আলোচনার মাধ্যমে কমনওয়েলথভুক্ত জাতিকে একীভূক্ত করেছেন। যা গত তিন দশক ধরে বিরাজমান। কমনওয়েলথ গেমসের অন্তর্নিহিত অর্থ শুধু খেলাধুলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে খেলাধুলার মাধ্যমে কমনওয়েলথভুক্ত পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মানবতার জয়গান।
×