ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ষবরণে বর্বর হামলা

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ৫ এপ্রিল ২০১৮

বর্ষবরণে বর্বর হামলা

বর্ষবরণে বেঁধে দেয়া সময়ের আদেশ দেয়া হয়েছে এক কঠিন বাস্তবতার নিরিখে মনে হয়। আর এই বাস্তবতা বড়ই নির্মম। সময় বয়ে চলে কিন্তু সময়ের স্মৃতিচিহ্ন তা তো মানুষের মন থেকে সহজে মুছে না সময়ের পলে পলে এই মানব সমাজে ঘটে যাওয়া হাজার ঘটনা সময়ের বুকে স্মৃতি মানুষের চোখে স্মৃতির মিনার হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। বাঙালী মাত্রই কি ভুলে যেতে পারবে সেই ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনার বটমূলে বাংলা বর্ষবরণকে উপলক্ষ করে যে নারকীয় মানবহত্যার নরাধমযজ্ঞ এই বাংলায় ঘটিয়েছিল বাংলার অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির দুশমনেরা। আমি মনে করি তা কোনদিন তাবত বিশ্বের অসাম্প্রদায়িক বাঙালী বিবেক ভুলতে পারবে না। সেদিনের সেই বিভীষিকাময় ঘটনা আজ কোটি বাঙালীর মনে দুঃস্বপ্নের স্মৃতিসৌধ হয়ে হাজার বছরের ঐতিহ্যলালিত অসাম্প্রদায়িক বাঙালী চেতনাকে ব্যথিত করে। বাঙালীর সোনালি সংস্কৃতির কপালে যে কলঙ্কতিলক সেই দিন একটি বর্বর জঙ্গীগোষ্ঠী বাংলা নববর্ষকে ইসলামবিরোধী বলে পরিয়ে দিল তা কি এত তাড়াতাড়ি উঠে যাবে। পহেলা বৈশাখ উদযাপন তো বাঙালীর বিনোদনের বন্যা এই বাংলাদেশে। এই বন্যাকে প্রতিরোধ করার মতো কোটি মানুষের আবেগের ঢলকে প্রতিহত করার মতো কোন বাঁধ বা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা খুবই দুষ্কর। বাঙালীর বহু বছরের রোপিত এই অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিশাল বৃক্ষের ডাল ছাঁটাই করা পহেলা বৈশাখ উদযাপনের সময়কে সংক্ষিপ্ত করা যেন এদেশের উৎসবপাগল মানুষের আবেগে আঘাত করার সামিল। বাংলাদেশের বিচক্ষণ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তাব্যক্তিদের অবশ্যই বাঙালীর প্রাণের মেলা পহেলা বৈশাখ বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান যাতে মনের মতো করে নির্বিঘেœ পালন করতে পারে সে ব্যাপারে বোধোদয় হবে। পাশাপাশি উদ্ভূত পরিস্থিতি সামালে সামগ্রিক পদক্ষেপ সর্বতোভাবে বাস্তবায়ন করবেন। বাংলাদেশে বাঙালী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সচেষ্ট সক্রিয় অশুভ ধর্মোন্মত্ত প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদী শক্তি সবসময়ই চাইবে যে কোন ছুতোয় এই বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানকে বানচাল করে দিতে এবং তারা এ বিষয়ে কিছুটা মরিয়া তাই বলে তাদের ভয়ে হাত-পা পেটের ভেতরে ঢুকিয়ে বসে থাকলে তো হবে না। বাঙালী কি নপুংসক? না এমন বদনাম তো এই বিশ্বের কেউ কোন দিন দিতে পারবে না কেননা বাঙালী যে বীরের জাতি মাস্টার দা সূর্যসেন তিতুমীর নেতাজী সুভাষ বোস বঙ্গবন্ধুর বীররক্ত তো আমাদের শরীরে আজও প্রবাহিত। তাই আমি মনে করি এই বর্ষবরণের এই সর্বজনীন উৎসবের মূল বাংলার মাটি থেকে উৎপাটনের যতই উদ্যোগ উৎসাহ দেখাক না কেন বর্বর গোষ্ঠী আমরা নির্ভীক থেকে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক শক্তির সাহায্যে প্রতিহত করব। মাথাব্যথা হলেই কি রোগীর মাথাটা কেটে নিতে হবে অনুষ্ঠানের সময়সূচী সংক্ষিপ্ত করায় এটাই মনে হয়। বালির বাঁধ তো টিকে না সামান্য মাটি চাপা দিয়ে, বিষধর সাপের গর্ত বন্ধ করে বিষাক্ত সাপের ছোবল থেকে কে কবে রক্ষা পেয়েছে? আমাদের জানমালের নিরাপত্তা হেফাজতকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি এতই হীনবল এতই বুদ্ধিহীন যে বর্বরদের বিধ্বংসী খেলার খবর রাখে না বিষদাঁত ভাঙতে পারে না? বিকেল পাঁচটার মধ্যে আয়োজন সমাপ্ত করার নির্দেশনা মনে হয় যেন একটা কারফিউ কিন্তু এ কারফিউ কার জন্য? এদেশের কোটি কোটি কৃষক জেলে কামার কুমারের প্রাণের মেলা পহেলা বৈশাখ বরণ অনুষ্ঠানের যেন কোন প্রকার নিষেধ নিষেধাজ্ঞায় অঙ্গহানি না ঘটে এই কামনা করি এদেশের একজন নগণ্য নাগরিক হিসেবে। চন্দ্রনাথ ডিগ্রী কলেজ, নেত্রকোনা থেকে
×