ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আজ ড্র করলেই চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

এবার ইরানকে উড়িয়ে দিল মারিয়ারা

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১ এপ্রিল ২০১৮

এবার ইরানকে উড়িয়ে দিল মারিয়ারা

রুমেল খান ॥ খেলার আগে প্রতিপক্ষকে যথেষ্ট সমীহ করার কথা বললেও মাঠে নেমে কিন্তু কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দিচ্ছে না বাংলার বাঘিনীরা। হংকংয়ের সিউ সাই ওয়ান স্পোর্টস গ্রাউন্ডে চলমান অ-১৫ নারী ফুটবল আসর ‘জকি ক্লাব গার্লস ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ ইনভাইটেশনাল ফুটবল টুর্নামেন্টে’ প্রথম ম্যাচে তারা নিজেদের চেয়ে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ২২ ধাপ এগিয়ে থাকা মালয়েশিয়াকে (৮০) গোলের মালা (১০-১) উপহার দেবার পর শনিবার নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেও প্রায় একই ফলের পুনরাবৃত্তি করেছে। এবার তারা বধ করেছে নিজেদের চেয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ে ৪৪ ধাপ এগিয়ে ইরানকে (৫৮)। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিকে তারা গুনে গুনে দিয়েছে ‘দুই হালি’ গোল, অর্থাৎ আট গোল। প্রথমার্ধেই বিজয়ী দল এগিয়ে ছিল ৫-০ গোলে। অবশ্য হজমও করেছে গত ম্যাচের মতোই একটি (৮-১)। স্কোরলাইনই বলে দিচ্ছে ইরানী মেয়েদের একটুও পাত্তা দেয়নি লাল-সবুজবাহিনী। গত ম্যাচের সঙ্গে মারিয়া বাহিনীর এই ম্যাচের কিছুটা পার্থক্য আছে। মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যাদের কেউই হ্যাটট্রিক করতে পারেনি (হ্যাটট্রিক বঞ্চিত হয় তিনজন) এবং ১০টি গোল করে সাত ফুটবলার। আর শনিবারের খেলায় ইরানের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করে দুই ফুটবলার (হ্যাটট্রিক বঞ্চিত হয় একজন) এবং ৮টি গোল করে চার ফুটবলার। হ্যাটট্রিক করে তহুরা খাতুন এবং শামসুন্নাহার। অপর দুটি গোল করে আনাই মগিনি এবং আনুচিং মগিনি। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন আনাই ও আনুচিং দুই আপন বোন। টুর্নামেন্টটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে সিঙ্গেল লীগ পদ্ধতিতে। সর্বোচ্চ পয়েন্ট অর্জনকারী দল চ্যাম্পিয়ন হবে। সে মোতাবেক চ্যাম্পিয়ন হবার দৌড়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে আছে বাংলাদেশই। ২ খেলার প্রতিটিতেই জিতে তাদের পয়েন্ট ৬। তবে সমান ম্যাচে সমান পয়েন্ট স্বাগতিক হংকংয়েরও। কিন্তু বাংলাদেশের চেয়ে গোল গড়ে অনেক পিছিয়ে আছে তারা। নিজেদের দুই ম্যাচে তারা ইরানকে ও মালয়েশিয়াকে দু’বারই হারায় ১-০ গোলে। যেখানে বাংলাদেশের গোল ১৮, যেখানে হংকংয়ের গোল মাত্র ২টি। তবে গোল হজমের ক্ষেত্রে তারা এগিয়ে আছে বাংলাদেশের চেয়ে। যেখানে বাংলাদেশ খেয়েছে দুই গোল, সেখানে হংকং এখনও কোন গোল হজম করেনি। আজ রবিবার একই ভেন্যুতে দুপুর দেড়টায় অলিখিত ফাইনালে বাংলাদেশ মোকাবেলা করবে হংকংকে। বাংলাদেশ জিতলে তো কথাই নেই। আর ড্র করলেও তারা বিপুল গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে শিরোপা জিতে নেবে। সেক্ষেত্রে হংকংয়ের জন্য নিশ্চিতভাবেই ম্যাচটি হবে বাঁচা-মরার ম্যাচ। র‌্যাঙ্কিংয়ের বিচারে বাংলাদেশের চেয়ে ৩১ ধাপ এগিয়ে হংকং। হংকংয়ের র‌্যাঙ্কিং ৭১, বাংলাদেশের ১০২। কিন্তু এই আসরে পারফর্মেন্সের বিচারে যে হংকংয়ের চেয়ে যোজন ব্যবধানে এগিয়ে বাংলাদেশই, সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তারপরও এটা ফাইনাল, আর ফুটবলে অসম্ভব বলে কিছু নেই। তাছাড়া মেয়েদের ফুটবলে কোন পর্যায়েই এর আগে হংকংকে মোকাবেলা করেনি বাংলাদেশ। এটাই কিছুটা শঙ্কার কারণ হতে পারে। শনিবারের ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেন, ‘গত দুই ম্যাচে মেয়েদের পারফর্মেন্স আর ফলাফল দেখে আমি খুবই খুশি। আমাদের লক্ষ্য ছিল ম্যাচ বাই ম্যাচ এগোনো। এবার আমরা হংকং ম্যাচ নিয়েই ভাবছি। এখন আমাদের লক্ষ্য শেষ ম্যাচ জিতে শিরোপা নিয়ে ঘরে ফেরা।’ দলীয় অধিনায়ক মারিয়া মান্দার অভিমত, ‘আমিও আমাদের দুই ম্যাচের ফল নিয়ে খুশি। শেষ ম্যাচে আমাদের প্রতিপক্ষ হংকং। তারা স্বাগতিক দল। আমরা ওই ম্যাচটা নিজেদের শতভাগ দিয়ে জেতার চেষ্টা করব। আমাদের জন্য সবাই দোয়া করবেন।’ আগের ম্যাচে একটা গোলের জন্য হ্যাটট্রিক না করতে পারার দুঃখটা ইরানের বিপক্ষে ঘুচিয়েছে তহুরা খাতুন। হ্যাটট্রিক পাওয়ার পর এই ফরোয়ার্ডের প্রতিক্রিয়া, ‘সব ম্যাচে নিয়মিত স্কোর করতে পারছি বলে আমি খুবই খুশি। আমরা আমাদের শেষ ম্যাচে সর্বোচ্চটা দিতে চাই এবং আমরা বাংলাদেশের জন্য ট্রফিটা জিততে চাই।’ ইরানকে অবশ্য আগেও বয়সভিত্তিক ফুটবলে হারানোর অভিজ্ঞতা আছে মারিয়া-তহুরাদের। ২০১৬ সালে এএফসি অ-১৬ মহিলা ফুটবলে নিজেদের মাঠে ইরানকে ৩-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। কাজেই আত্মবিশ্বাসের পারদটা উঁচুতেই ছিল তাদের। মাঠের খেলাতেও তার প্রভাব ফেলেছে তারা ভালমতোই। ম্যাচের শুরু থেকেই বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রতিপক্ষকে চেপে ধরে বেঙ্গল টাইগ্রেস দল। প্রথম মিনিটেই গোলের হালখাতা খুলে ফেলে তারা। গোলদাতার নাম তহুরা। এখানেই শেষ হয়নি তার গোলক্ষুধা। ১৩ ও ২৯ মিনিটের মধ্যে আরও দুই গোল করে এই আসরের প্রথম হ্যাটট্রিকের ‘মালকিন’ বনে যায় ময়মনসিংহের ‘মেসি’ খ্যাত তহুরা। গত ম্যাচে দুই গোল করা তহুরার এই আসরে মোট গোল ৫টি যা এখন পর্যন্ত যুগ্মভাবে সর্বোচ্চ। আর আন্তর্জাতিক ফুটবলে এটা তার তৃতীয় হ্যাটট্রিক এবং মোট গোলসংখ্যা ২১। তহুরা এরপর আর গোল পায়নি। তাই বলে কী গোলের মহোৎসব থেমে থাকবে? অন্যরাও যে গোল করতে মুখিয়ে ছিল। ৩২ মিনিটে ডিফেন্ডার আনাই মগিনি গোল করলে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৪-০। এরপরের চিত্রনাট্য মিডফিল্ডার শামসুন্নাহারের । ৪৫+১, ৬৩ ও ৬৯ মিনিটে টানা তিন গোল করে তহুরার মতো সেও করে ফেলে কাক্সিক্ষত হ্যাটট্রিক। এই আসরে তারও গোলসংখ্যা তহুরার সমান (৫টি)। এ হচ্ছে সেই শামসুন্নাহার যার দেয়া একমাত্র গোলেই গত বছরের ২৪ ডিসেম্বরে ঢাকায় নিজেদের মাটিতে ভারতকে হারিয়ে সাফ অ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের অপরাজিত শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। আনুচিংয়ের গোলে ৭৭ মিনিটে ইরানের হারের কফিনে অষ্টম পেরেকটি মারে বাংলাদেশের কিশোরীরা। ইরান তখন চরম বিধ্বস্ত। অবস্থাটা যেন ‘ছেড়ে দে বোন কেঁদে বাঁচি’র মতো। তবে ম্যাচ জেতা নিশ্চিত ভেবেই হয়তো রক্ষণে একটু ঢিল পড়েছিল সেই সুযোগে হাস্তি ইনজুরি ও সংযুক্তি সময়ে (৯০+২ মিনিট) একটি গোল শোধ করলে ব্যবধান কিঞ্চিৎ কমায় ইরান (১-৮)। আজ যদি বাংলাদেশ দল চ্যাম্পিয়ন হতে পারে তাহলে দেশের বাইরে তারা শিরোপা জিতবে তৃতীয়বারের মতো। এর আগে তারা ২১ ডিসেম্বর, ২০১৫ সালে নেপাল থেকে ‘এফসি অ-১৪ বালিকা আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপ’ এবং ৩ মে, ২০১৬ সালে তাজিকিস্তান থেকে একই দল একই আসরের শিরোপা জিতেছিল ১ এপ্রিল, ২০১৮। তৃতীয় তারিখটিও কি সাফল্যে মোড়া থাকবে? লক্ষ্য পূরণের পথে মালয়েশিয়া-ইরান বধে তিনটি ধাপের দুটি ধাপ পেরোনো গেছে। আজ হংকংকে হারাতে পারলে বা তাদের সঙ্গে ড্র করতে পারলেই অতিক্রম করা যাবে তৃতীয় ও শেষ ধাপটিও। পারবে কী বাংলার বাঘিনীরা? আবার পচা শামুকে পা কাটবে না তো?
×