ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অসাধু চক্রের জাল

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ১ এপ্রিল ২০১৮

অসাধু চক্রের জাল

ব্যবসায়ীরা মুনাফা করবে সেটাই সঙ্গত ও স্বাভাবিক। কিন্তু সেই মুনাফা কতটুকু করা সমীচীন? লাভের নামে মানুষের পকেট কাটা কিংবা শিল্পের কোন একটি খাতকে বিপর্যস্ত করে দেয়ার অবকাশ নেই। মুনাফা করতে গিয়ে নিয়মনীতি লঙ্ঘন এবং বাস্তবতাবর্জিত তৎপরতা হচ্ছে কিনাÑ সেটাই দেখার বিষয়। এর আগেও এমনটা লক্ষ্য করা গেছে, এটা নতুন কিছু নয়। সুযোগসন্ধানী অসাধু ব্যবসায়ী চক্র পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে। এতে শুধু সংশ্লিষ্ট পণ্যের ভোক্তরাই নয়, ক্ষতি ও অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হন সংশ্লিষ্ট আরও অনেক মানুষ। অসাধু ব্যবসায়ীদের একটি চক্র পরস্পর যোগসাজশ করে রডের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে দেশের নির্মাণ খাতের উদ্যোক্তাদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি (বিএসিআই)। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করা হয়। জানানো হয়Ñ দুই দিন আগে অর্থাৎ ২৭ মার্চ সকালে টনপ্রতি এমএস রডের দাম ছিল ৬৩ হাজার টাকা আর ওইদিন বিকেলে টন প্রতি রডের দাম দাঁড়ায় ৭২ হাজার টাকা। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ৯ হাজার টাকা। এতেই প্রমাণ হয়, একটি চক্র সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রডের দাম বাড়াচ্ছে। উল্লেখ্য, মাত্র ছয় মাস আগেও টনপ্রতি রডের দর ছিল ৪৮ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা। তার মানে হলো, মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে ব্যবসায়ীরা রডের মূল্য ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, তারা সাধারণত ৫ শতাংশ লাভ করে থাকেন। কিন্তু রডের মূল্য বৃদ্ধিতে তাদের ২৫ শতাংশ লোকসান হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার কথা ভাবতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে তাদের মনোভাব থেকে মনে হচ্ছে রডের দাম স্বাভাবিক না হলে এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে তারা নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেবেন। তাতে পরিস্থিতি যে আরও খারাপ হবে এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। কেননা এই পেশার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ জড়িত। নির্মাণসামগ্রীর দর বাড়ার ফলে নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে অনেক মানুষ কর্মহীন হবে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, দেশের এমএস রড প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এককভাবে কোন নিয়মনীতি না মেনে অস্বাভাবিক এবং অব্যাহতভাবে রডের দর বাড়িয়ে চলেছে। রড প্রস্তুতকারী কোম্পানিসমূহের যুক্তি হলো, কাঁচামালের দাম, পরিবহন খরচ, ডলারের দাম, ব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধি ও চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাস বিলম্বের কারণে রডের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ এসব কারণে রডের দাম সর্বোচ্চ ৭ থেকে ৮ শতাংশ বাড়তে পারে; কিন্তু কোন অবস্থাতেই ৫০ শতাংশ নয়। বর্তমানে আরও শঙ্কার বিষয় হলো রডের সিন্ডিকেটের দেখাদেখি সিমেন্ট কোম্পানিগুলো গত ২৫ দিনে ব্যাগ প্রতি ৬০ টাকা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি টাইলস, ইলেকট্রিক ক্যাবল, স্যানিটারি মালামাল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের অসাধু চক্রের জাল ছিন্ন করতে হবে। অতীতে কয়েকবার সিন্ডিকেট করে রডের দাম বৃদ্ধি করা হলেও সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করব এবারও সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেয়া হবে এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে যাতে করে বিভিন্ন খাতের অসাধু ব্যবসায়ীরা সতর্ক হয়ে যায়।
×