ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হংকংয়ে চার জাতি ইয়ুথ ফুটবল

ইরানকে হারিয়ে শিরোপার কাছাকাছি বাংলাদেশের মেয়েরা

প্রকাশিত: ০৫:০২, ১ এপ্রিল ২০১৮

 ইরানকে হারিয়ে শিরোপার কাছাকাছি  বাংলাদেশের মেয়েরা

রুমেল খান ॥ যেখানে দেশের পুরুষদের ফুটবল রসাতলে, সেখানে মেয়েদের ফুটবল দারুণ চলে। প্রমাণ চান? গত তিন বছরে তিন ধরনের বয়সভিত্তিক ফুটবলে বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা জিতেছে চার-চারটি শিরোপা। পঞ্চম শিরোপারও প্রায় দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে তারা। সেই দিনটি হতে পারে আজই, ১ এপ্রিল, রবিবার, ২০১৮। হংকংয়ের সিউ সাই ওয়ান স্পোর্টস গ্রাউন্ডে চলছে অ-১৫ নারী ফুটবলের আসর ‘জকি ক্লাব গার্লস ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ ইনভাইটেশনাল ফুটবল টুর্নামেন্ট’। অংশগ্রহণকারী দল চারটি। খেলা হচ্ছে সিঙ্গেল লীগ পদ্ধতিতে। প্রতিটি দল খেলবে তিনটি করে ম্যাচ। সর্বোচ্চ পয়েন্ট সংগ্রাহক দলটিই জিতবে কাক্সিক্ষত শিরোপা। আর সেই শিরোপাটা নিজেদের করে নেয়ার পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। আজ রবিবার দুপুর দেড়টায় ‘অলিখিত’ ফাইনালে বাংলাদেশ মোকাবেলা করবে স্বাগতিক হংকংকে। বাংলাদেশ জিতলে তো কথাই নেই, আর ড্র করলেও তারা বিপুল গোল-ব্যবধানে এগিয়ে থেকে শিরোপা জিতে নেবে। সেক্ষেত্রে হংকংয়ের জন্য নিশ্চিতভাবেই ম্যাচটি হবে বাঁচা-মরার ম্যাচ। শুক্রবার নিজেদের প্রথম ম্যাচে ‘দ্য বেঙ্গল টাইগার্স’ দল নিজেদের চেয়ে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ২২ ধাপ এগিয়ে থাকা মালয়েশিয়াকে (র‌্যাঙ্কিং ৮০) গোলবন্যায় সয়লাব (১০-১) করে দেয়ার পর শনিবারও নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে প্রায় একই ফলের পুনরাবৃত্তি ঘটায়। এবার তারা ৮-১ গোলে নাস্তানাবুদ করে নিজেদের চেয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ে ৪৪ ধাপ এগিয়ে ইরানকে (র‌্যাঙ্কিং ৫৮)। প্রথমার্ধেই বিজয়ী দল এগিয়ে ছিল ৫-০ গোলে। স্কোরলাইনই বলে দিচ্ছে ইরানী মেয়েদের সামান্যতম ছাড় দেয়নি লাল-সবুজবাহিনী। ২ খেলার প্রতিটিতেই জিতে বাংলাদেশের পয়েন্ট ৬। আছে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে। তবে সমান ম্যাচে সমান পয়েন্ট হংকংয়েরও। কিন্তু বাংলাদেশের চেয়ে গোল গড়ে অনেক পিছিয়ে আছে তারা। নিজেদের দুই ম্যাচে তারা ইরানকে ১-০ গোলে ও মালয়েশিয়াকে একই ব্যবধানে হারায়। যেখানে বাংলাদেশ গোল করেছে ১৮টি সেখানে হংকংয়ের গোল মাত্র ২টি! তবে গোল হজমের ক্ষেত্রে তারা এগিয়ে আছে বাংলাদেশের চেয়ে। যেখানে বাংলাদেশ খেয়েছে দুই গোল সেখানে হংকং এখনও কোন গোল হজম করেনি। হংকংয়ের একটিই সুবিধা। সেটা র‌্যাঙ্কিংয়ে। তারা বাংলাদেশের চেয়ে ৩১ ধাপ এগিয়ে। হংকংয়ের র‌্যাঙ্কিং ৭১, বাংলাদেশের ১০২। কিন্তু এই টুর্নামেন্টে নৈপুণ্য এবং গোল স্কোরিংয়ের নিরিখে হংকংয়ের চেয়ে যোজন ব্যবধানে এগিয়ে বাংলাদেশই। এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। এটাই ভরসা ও প্রেরণা জোগাবে তাদের। তারপরও এটা ‘অলিখিত’ ফাইনাল। তাছাড়া ফুটবলে অসম্ভব বলে কিছু নেই। মেয়েদের ফুটবলে কোন পর্যায়েই এর আগে হংকংকে মোকাবেলা করেনি বাংলাদেশ। এটা কিছুটা অস্বস্তির কারণ হতে পারে তাদের জন্য। প্রথম ম্যাচের সঙ্গে দ্বিতীয় ম্যাচের কিছুটা তফাত আছে মারিয়া বাহিনীর। মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যাদের কেউই হ্যাটট্রিক করতে পারেনি (হ্যাটট্রিক বঞ্চিত হয় তিনজন) এবং ১০টি গোল করে সাত ফুটবলার। আর শনিবারের খেলায় ইরানের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করে দুই ফুটবলার (হ্যাটট্রিক বঞ্চিত হয় একজন) এবং ৮টি গোল করে চার ফুটবলার। হ্যাটট্রিক করে তহুরা খাতুন এবং শামসুন্নাহার। অপর দুটি গোল করে আনাই মগিনি এবং আনুচিং মগিনি। হ্যাঁ পাঠকদের অনুমান ঠিকÑ আনাই ও আনুচিং হচ্ছে সহোদরা। শনিবারের ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের কোচ ছোটন, অধিনায়ক মারিয়া মান্দা এবং হ্যাটট্রিকধারী তহুরা খাতুনের অভিন্ন বক্তব্যÑ তারা নিজেদের সেরাটা দিয়েই এ আসরে চ্যাম্পিয়ন হতে চান এবং তাদের আত্মবিশ্বাসের কোন কমতি নেই। ইরানকে অবশ্য আগেও বয়সভিত্তিক ফুটবলে হারানোর অভিজ্ঞতা আছে মারিয়া-তহুরাদের। ২০১৬ সালে এএফসি অ-১৬ মহিলা ফুটবলে নিজেদের মাঠে ইরানকে ৩-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। কাজেই আত্মবিশ্বাসের পারদটা উঁচুতেই ছিল তাদের। মাঠের খেলাতেও তার প্রভাব ফেলেছিল তারা ভালভাবেই। ময়মনসিংহের ‘মেসি’ খ্যাত ফরোয়ার্ড তহুরার এই আসরে মোট গোল ৫টি যা এখন পর্যন্ত যুগ্মভাবে সর্বোচ্চ। আর আন্তর্জাতিক ফুটবলে এটা তার তৃতীয় হ্যাটট্রিক এবং মোট গোলসংখ্যা ২১। মিডফিল্ডার শামসুন্নাহারেরও এই আসরে গোলসংখ্যা তহুরার সমান। এই আসরে এ পর্যন্ত ২টি হ্যাটট্রিক হয়েছে। দুটিই করেছে বাংলাদেশের তহুরা ও শামসুন্নাহার। আজ যদি বাংলাদেশ দল চ্যাম্পিয়ন হতে পারে তাহলে দেশের বাইরে তারা শিরোপা জিতবে তৃতীয়বারের মতো। এর আগে তারা ২১ ডিসেম্বর, ২০১৫ সালে নেপাল থেকে ‘এফসি অ-১৪ বালিকা আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপ’ এবং ৩ মে, ২০১৬ সালে তাজিকিস্তান থেকে একই দল একই আসরের শিরোপা জিতেছিল। ১ এপ্রিল, ২০১৮। তৃতীয় তারিখটিও কি সাফল্যে মোড়া থাকবে? লক্ষ্য পূরণের পথে মালয়েশিয়া-ইরান বধে তিনটি ধাপের দুটি ধাপ পেরুনো গেছে। আজ হংকংকে হারাতে পারলে বা তাদের সঙ্গে ড্র করতে পারলেই অতিক্রম করা যাবে তৃতীয় ও শেষ ধাপটিও। পারবে কী বাংলার বাঘিনীরা? আবার পচা শামুকে পা কাটবে না তো? বাংলাদেশ দল ॥ গোলরক্ষক-মাহমুদা আক্তার, রূপনা চাকমা; ডিফেন্ডার-আঁখি খাতুন (সহ-অধিনায়ক), নিলুফা ইয়াসমীন নীলা, আনাই মগিনি, নাজমা, দীপা খাতুন, রুনা আক্তার, রুমি আক্তার; মিডফিল্ডার- মারিয়া মান্দা, মনিকা চাকমা, লাবনী আক্তার, তহুরা খাতুন, মুন্নী আক্তার, শামসুন্নাহার, সোহাগী কিসকু; ফরোয়ার্ড-ঋতুপর্ণা চাকমা, সাজেদা খাতুন, আনুচিং মগিনি, শামসুন্নাহার, কোচ-গোলাম রব্বানী ছোটন।
×