ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

কেমন আছেন সীমান্তবাসী

ভারতে বাড়ি- উঠান এদেশে, সীমান্ত যেখানে একাকার

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ১ এপ্রিল ২০১৮

ভারতে বাড়ি- উঠান এদেশে, সীমান্ত যেখানে একাকার

তৌহিদুর রহমান, উত্তর ২৪ পরগণা থেকে ফিরে ॥ ভারতের অংশে পড়েছে বাড়ি। আর সেই বাড়ির উঠান পড়েছে বাংলাদেশে। আবার ভারতের মাটিতে পড়েছে পুকুর। সেই পুকুরের পাশের বাড়িটিই বাংলাদেশের। গ্রামের মধ্য দিয়ে রাস্তা কাঁচা চলে গেছে। সেই রাস্তাটি বাংলাদেশের। তবে এই রাস্তার এক পাশের বাসিন্দারা ভারতের, আর অপর পাশের বাসিন্দারা বাংলাদেশের। দুই দেশের লোকেরাই ব্যবহার করে সেই রাস্তা। এখানে কোন কাঁটাতার সীমানা নেই। কোন বাড়ি কোন দেশের মধ্যে পড়েছে, সেটা দেখে বোঝার উপায় নেই। এভাবেই দুই বাংলার সীমানা মিলে মিশে যেন একাকার হয়ে গেছে। ভারতের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বশিরহাট থানার সীমান্তের একটি এলাকা পানিতর। আর সাতক্ষীরা জেলার সদর থানার ভোমরা ইউনিয়নের একটি গ্রাম হাড়দ্দহা। ইছামতির নদীর তীরে এই গ্রাম দুইটি অবস্থিত। আর দুই গ্রামের মধ্যে দিয়ে আঁকাবাঁকা সীমান্ত রয়েছে। এই সীমান্ত চলে গেছে, কোন কোন বাড়ির উঠানের মধ্য দিয়ে। একই জায়গার মধ্যে কয়েকটি বাড়ি। তবে একটি বাড়ি ভারতে, আরেকটি বাড়ি বাংলাদেশে। দুই দেশের নাগরিক তারা। তবে দেখে বোঝার উপায় নেই কে কোন দেশের নাগরিক। দুই দেশের সীমান্তে নানা ধরনের সমস্যা থাকলেও এখানের সীমান্ত একেবারেই অন্যরকম। গ্রামের মধ্য দিয়ে কোন কাঁটাতারের বেড়া নেই। এক দেশের বাড়ির লোক অন্য দেশের বাড়িতে প্রবেশ করছেন একেবারেই বিনা বাধায়। এক দেশের পুকুরে অন্য দেশের মানুষ গোসল করছেন। এক দেশের টিউবওয়েলের পানি অন্য দেশের লোকজন ব্যবহার করছেন। যুগ যুগ ধরে সেখানকার অধিবাসীরা মিলে মিশে বসবাস করছেন। তবে কখনও কোন বিরোধ হয়নি। এই দুই গ্রামের মধ্যে দুই দেশের সীমানা পিলার আছে। সেই পিলার দিয়েই বাড়ির মধ্যে সীমানা চিহ্নিত হয়েছে। বাংলাদেশের অংশে হাড়দ্দহা গ্রামের বাসিন্দা নুর মোহাম্মাদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের বাসিন্দা প্রায় একই বাড়িতে বসবাস করলেও কখনও কোন সমস্যা হয়নি। আমরা এখানে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছি। ভারতের কোন বাসিন্দার বিপদ-আপদে আমরা তাদের সহায়তা করি। আমাদের কোন বিপদ-আপদে তারাও সহায়তা করে থাকেন। এখানে আমরা এভাবেই যুগ যুগ ধরে বসবাস করছি, কখনও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। হাড়দ্দহা গ্রামের রোজিনা পারভিন জনকণ্ঠকে জানান, সীমান্তের এই গ্রামে আছি। দুই দেশের দুই গ্রামের নাম আলাদা হলেও বাড়িঘরগুলো একই জায়গায়। আমরা দুই অংশের লোকই মিলেমিশে এখানে থাকি। আমাদের মধ্যে কখনও কোন সমস্যা হয়নি বলেও তিনি জানান। ভারতের সীমান্ত বাহিনী বিএসএফের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের একটি প্রতিনিধি দল গত শুক্রবার পানিতর ও হাড়দ্দহা সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। এই সময় দুই দেশের সীমান্তের বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপ করে নানা তথ্য জানা যায়। ভারতের পানিতর গ্রামের বাসিন্দা হাজী রজব আলী জনকণ্ঠকে জানান, এখানে দুই দেশের বাসিন্দারা মিলে মিশে থাকেন। কখনও কোন সমস্যা হয়নি। এক উঠানে দুই দেশের বাড়ি থাকলেও সবাই সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে সঙ্গে বসবাস করছেন। এমনও হয়েছে, বাংলাদেশের সীমান্তের হাড়দ্দহ গ্রামের কোন বাড়ির সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর জরুরী চিকিৎসা বিএসএফের সহায়তায় বশিরহাটে নিয়ে গিয়ে করা হয়েছে। আবার ভারতের পানিতর গ্রামের কোন লোকের জরুরী প্রয়োজনে সহায়তা করেছে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি)। এমন সম্প্রীতি বিরল বলেও তিনি মন্তব্য করেন। দুই গ্রামের দুই পাশেই রয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত বাহিনীর ক্যাম্প। ভারতের পানিতর ক্যাম্প বিএসএফ বাহিনীর কমান্ডার অফিসার কে এল স্লাথিয়া উপস্থিত গণমাধ্যমের কর্মিদের জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের এই সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরে দুই দেশের বাসিন্দারা মিলে মিশে বসবাস করছেন। এখানে কোন অপরাধ সংঘটিত হয়নি। এই বাসিন্দারা ক্রাইমলেস বললে ভুল হবে না। এখানের সীমান্তে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী তৎপরতাও নেই। দুই দেশের সীমান্ত বাহিনীর মধ্যেও চমৎকার সমন্বয় রয়েছে। যে কোন প্রয়োজনে আমরা একে অপরের সহায়তা নিয়ে থাকি বলেও তিনি মন্তব্য করেন তিনি। পানিতর ও হাড়দ্দহা গ্রাম পরিদর্শনকালে বিজিবির কর্মকর্তারাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। হাড়দ্দহা গ্রামের সীমান্তের বিজিবির শাখার ক্যাম্প কমান্ডার আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, এই দুই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। একই বাড়ির মধ্যে বসবাস করছেন দুই দেশের বাসিন্দা। তবে তাদের দেখলে বাইরে থেকে কেউ ধারণাই করতে পারবেন না যে, তারা দুই দেশের লোক। সীমান্তের এই গ্রামে কোন অপরাধ সংঘটিত হয় না বলেও তিনি জানান। উল্লেখ্য, হাড়দ্দহা সীমান্ত থেকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দূরত্ব প্রায় ১৯ কিলোমিটার। এই গ্রামের নিকটেই রয়েছে শাখরা বিজিবির ক্যাম্প। আর ভারতের উত্তর ২৪ পরগণার বশিরহাট থানা থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে পানিতর গ্রাম।
×