ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

একাত্তরের গণহত্যা নিয়ে গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের নতুন প্রতিবেদন

মাত্র দশ জেলাতেই গণহত্যার ঘটনা ২১০৭

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ৩১ মার্চ ২০১৮

 মাত্র দশ জেলাতেই গণহত্যার ঘটনা ২১০৭

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ ধারণা করা হতো ১৯৭১ সালে সারাদেশে গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে ৯০৫। অথচ দেশের মাত্র ১০ জেলাতেই ২১০৭ গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে। একাত্তরের গণহত্যা নিয়ে গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের নতুন প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণা কেন্দ্রের এই জরিপে বলা হয়েছে, ১০ জেলায় নির্যাতন কেন্দ্রের সংখ্যা ৩৪২টি, বধ্যভূমি ২০৪টি ও গণকবর ১৫১টি। জেলাগুলো হচ্ছেÑ নীলফামারী, নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, নাটোর, ভোলা, সাতক্ষীরা, রাজশাহী, খুলনা, পাবনা ও কুড়িগ্রাম। শুক্রবার রাজধানীর বাংলা একাডেমির শামসুর রাহমান হল মিলনায়তনে এই জরিপের তথ্য তুলে ধরেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। গণহত্যাÑবধ্যভূমি ও গণকবর জরিপ শীর্ষক দিনব্যাপী এই সেমিনার ‘গণহত্যাÑবধ্যভূমি ও গণকবর জরিপ’ নামে ১০টি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচনও করা হয়। একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে সেমিনারে সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। জরিপকার্যের সঙ্গে যুক্তদের দাবি, মাত্র ১০ জেলায় জরিপ চালিয়ে ২১০৭ গণহত্যার ঘটনা পাওয়া গেছে। দেশের প্রতিটি জেলায় জরিপ চালালে গণহত্যার ভয়াবহতার চিত্র আবারও সামনে চলে আসবে। গণহত্যা বিষয়ে মানুষের ধারণা বদলে যাবে। ১৯৭১ সালের গণহত্যায় বাংলাদেশে মৃতের সংখ্যা ৩০ লক্ষ পেরিয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন জরিপকার্যের সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্টরা। দিনব্যাপী এই সেমিনারের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে জানা-অজানা অনেক হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশের গণহত্যার ভয়াবহতা বিশ্ববাসীকে জানাতে হবে। জানাতে হবে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে। মন্ত্রী বলেন, আজকে মিয়ানমারের গণহত্যাকে আন্তর্জাতিকভাবে অনেক দেশ ও প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতি দিলেও বাংলাদেশের গণহত্যার কোন স্বীকৃতি এখনো মেলেনি। অথচ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যা ছিল আরও ভয়াবহ। কিন্তু বৈশ্বিক কোন রাজনীতির কারণে এই গণহত্যার স্বীকৃতি পাচ্ছি নাÑ তা আমার জানা নেই। তিনি বলেন, গণহত্যা-গণকবর নিয়ে কাজ কতটা প্রয়োজনীয় তা বলে বোঝানো যাবে না। এই কাজটি দেশের প্রতিটি স্থানে ছড়িয়ে দিতে হবে। আসাদুজ্জামান নূর আরও বলেন, দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না এমন কোন দলের বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার নেই। বিশ্বের কোন দেশেই এমনটা হয় না। তাহলে বাংলাদেশ কেন এমন অদ্ভুত পরিস্থিতিতে পড়বে? যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তারা যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হয়। এক্ষেত্রে তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে দেশের সকল নাগরিককে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, প্রথমবারের মতো আমরা ৪৭ বছর পর গণহত্যা-বধ্যভূমি ও গণকবর নিয়ে জরিপ শুরু করেছি। প্রাথমিকভাবে ১০টি জেলায় এই জরিপ করা হয়েছে। পরবর্তীতে দেশের প্রতিটি জেলায় এই জরিপ চালানো হবে। গণহত্যার ওপর ২শ’ থেকে ৩শ’ বই বের করতে পারলে আমার মনে হয় গণহত্যা নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকবে না। তিনি বলেন, ১০ জেলায় যদি ২১০৭ গণহত্যার ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে ৬৪ জেলায় সে সংখ্যা কত দাঁড়াতে পারে? তাহলে গণহত্যায় মৃতের সংখ্যা কি ৩০ লাখে সীমাবদ্ধ থাকে? তিনি বলেন, ২৬০ দিন হিসাবে ধরে আমরা কম করে ধরেছি, হয়ত ১০০ দিন গণহত্যা হয়েছে। তবে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে গণহত্যা আরও বেশি সময় ধরে ঘটেছে বলেই আমরা মনে করি। লেখক ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, ইতিহাস বিকৃতি রোধে এখনও আইন হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে আমরা তা দাবি করে আসলেও তার কোন প্রতিফলন ঘটছে না। দ্রুত ইতিহাস বিকৃতি রোধ আইন করা হোক। যারা ইতিহাস বিকৃতি করবে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, এ ধরনের গবেষণার ফল পুস্তক আকারে বের করে দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারী উদ্যোগে পৌঁছাতে হবে। তাহলেই এদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী তরুণ প্রজন্ম গড়ে উঠবে। তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলো সংগ্রহ করতে হবে। সেখানে প্রকাশিত বইগুলো সংগ্রহের উদ্যোগ নিতে হবে। গণহত্যার প্রচুর প্রমাণ পাকিস্তানেও রয়েছে। এগুলো সংগ্রহে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে প্রথম অধিবেশনে অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান ও শিল্পী হাশেম খান । সেমিনারের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয় দুপুর ২টায়। মুনতাসীর মামুনের সভাপতিত্বে এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লে কর্নেল (অব) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক। ওই অধিবেশন শেষ হয় বিকেল চারটায়।
×