ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ায় টিবি ক্লিনিক ও হাসপাতালের দূরত্ব ৫ কিমি ॥ রোগী ভোগান্তি

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ২৯ মার্চ ২০১৮

বগুড়ায় টিবি ক্লিনিক ও হাসপাতালের দূরত্ব ৫ কিমি ॥ রোগী ভোগান্তি

সমুদ্র হক ॥ টিবি ক্লিনিক ও টিবি হাসপাতালের অবস্থান দুই মেরুতে। একটি শহরের দক্ষিণে ঠনঠনিয়ায় আরেকটি উত্তরে উপশহরে। ব্যবধান প্রায় ৫ কিলোমিটার। ক্লিনিকটি বহির্বিভাগ (আউটডোর)। হাসপাতাল অন্তর্বিভাগ (ইনডোর)। নিয়মানুযায়ী সকল হাসপাতালেই ইনডোর ও আউটডোর এক সঙ্গে থাকার কথা। বগুড়ায় এমন ব্যবধানে ইনডোর ও আউটডোর কার্যক্রম চলছে দীর্ঘ দিন ধরে। রোগীদের ভোগান্তি বাড়ছে। কর্তৃপক্ষ জানালেন, হাসপাতাল ও ক্লিনিক একই সঙ্গে রাখার জন্য স্বাস্থ্যবিভাগে চিঠি চালাচালি হয়েছে। এদিকে টিবি ক্লিনিকে সম্প্রতি কোটি টাকা মূল্যের অত্যাধুনিক জিন এক্সপার্ট মেশিন স্থাপিত হয়েছে। অত্যাধুনিক এলইডি মাইক্রোস্কপ আনা হয়েছে। যক্ষ্মা রোগ নির্ণয় সহজ হয়েছে। তবে এক্স রে যন্ত্রটি দীর্ঘদিন ধরে বিকল। এরপরও সবচেয়ে বড় যে সমস্যা দৃষ্টিতে আসছে তা হলো- গত শতকের ষাটের দশকে স্থাপিত টিবি ক্লিনিকের ভবন নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। পুরনো কাঠামোয় গড়া এই বিল্ডিং ধসে যেতে পারে যে কোন সময়ে। চিকিৎসক ও রোগী ঝুঁকির মধ্যেই ভবনে আসছেন। এই বিষয়ে সিভিল সার্জন শামসুল হক বিষয়টির গুরুত্ব অনুভব করেন। তিনি সাধ্যমত চেষ্টা করছেন আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপনে। টিবি ক্লিনিক ও হাসপাতালের জন্য একটি গাড়ি ছিল। তাও দীর্ঘদিন ধরে অকেজো। ২০ শয্যার যক্ষ্মা হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে অন্তত একশ’ শয্যা করার পক্ষে মত দেন তিনি। টিবি বা যক্ষ্মা ভাল হয় এমন স্লোগানে স্বাস্থ্য অধিদফতর দীর্ঘদিন ধরে প্রচার চালাচ্ছে। যক্ষ্মারোধে সরকারী ও বেসরকারীভাবে নানা কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিশেষ করে ডাইরেক্ট অবজার্ভড ট্রিটমেন্ট (ডট) অনেক সুফল এনেছে। যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা কমছে এটাও যেমন ঠিক চিকিৎসার অবহেলায় রোগী বাড়ছেও। যক্ষ্মা ধরা পড়ার পর রোগ নিরাময়ে প্রথম কয়েকটি ডোজ সেবনের পর রোগী অনেক সময় মনে করে যক্ষ্মা সেরে গেছে। ওষুধ সেবন বন্ধ করে দেয়। ফলে রোগটি ফিরে আসে ভয়াবহ হয়ে। বগুড়ায় যক্ষ্মা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হয় ষাটের দশকে। এর পরই স্থাপিত হয় যক্ষ্মা ক্লিনিক। একই সেবার প্রতিষ্ঠান অনেক দূরত্বে দুই জায়গায় হওয়ায় রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। শহরের উত্তরে ঠনঠনিয়া জিন এক্সপার্ট যন্ত্রে রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রোগী ভর্তি করার অনুমতি পত্র দেয়া হয়। এই পত্র দিয়ে রোগীকে যেতে হয় ৫ কিলোমিটার দূরে উপশহরের ২০ শয্যার হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা কার্যক্রমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ও রিপোর্ট দেখাতে ফের ছুটতে হয় ঠনঠনিয়ায়। রোগী সেরে যাওয়ার পর তা ছাড়পত্র নিতে হয় ক্লিনিক থেকে। যক্ষ্মা বা বক্ষ্যব্যাধি ক্লিনিক ও হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে আছেন কনসালটেন্ট। যক্ষ্মা হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় আছেন দুইজন মেডিক্যাল অফিসার। যার একজন বর্তমানে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। প্রতি মাসে গড়ে অন্তত ৪শ’ জটিল রোগী কাশি পরীক্ষার জন্য ক্লিনিকে আসে। বগুড়া ছাড়াও রোগী আসে নাটোর, জয়পুরহাট, নওগাঁ, গাইবান্ধা ও সিরাজগঞ্জ থেকে। জটিল রোগী ভর্তি করতে হয়। গত বছর (২০১৭) ক্লিনিকে ৫৩ হাজার ৪শ’১৩ যক্ষ্মা সন্দেহের রোগীকে পরীক্ষার পর ৫ হাজার ৭শ’৬৫ জন যক্ষ্মা রোগী ধরা পরে। এর মধ্যে ১শ’২৯ জন যক্ষ্মা সেরে যাওয়ার পর পুনরায় আক্রান্ত। তার আগের বছর ২০১৬ সালে ৫২ হাজার ৭শ’৯২ জন যক্ষ্মা সন্দেহের রোগীকে পরীক্ষা করে ৫ হাজার ২শ’ জন যক্ষ্মা রোগী ধরা পড়ে। এর মধ্যে ১শ’৪ জন পুনরাক্রান্ত।
×