ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত হাউস অব কমন্স

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৯ মার্চ ২০১৮

জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত হাউস অব কমন্স

সাজিয়া স্নিগ্ধা, লন্ডন থেকে ॥ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ৪৭তম বার্ষিকী উপলক্ষে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব কমন্সের ‘দ্য টেরেস প্যাভিলিয়নে গত মঙ্গলবার ২৭ মার্চ অর্ধশতাধিক ব্রিটিশ এমপির উপস্থিতিতে অনন্য মর্যাদায় বাঙালী জাতির গৌরবোজ্জ্বল এ দিনটি উদযাপন করেছে। কনজারভেটিভ পার্টি, লেবার পার্টি, লিবারেল ডেমোক্র্যাটস ও স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির এমপিসহ অর্ধশতাধিক ব্রিটিশ এমপি স্বাধীনতা দিবসের এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। দুপুর ১২.৩০ মিনিটে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ এমপিদের প্রবেশকালে তাঁদেরকে স্বাগত জানান যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। আগত অতিথিদের উপস্থিতি এবং আসন গ্রহণের পরেই অনুষ্ঠান আমন্ত্রণকারী জিম ফিজপেট্রিকস এমপি তার স্বাগত বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যের প্রথমেই বন্ধুরাষ্ট্র বাংলাদেশের ৪৭ তম স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানান সবাইকে। এমপিদের ব্যাপক উপস্থিতিকে সাধুবাদ জানিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন মুক্তিযুদ্ধের সেই অমোঘ বানী ‘জয় বাংলা’ সেøাগানের মাধ্যমে। এরপর যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে তৎকালীন ব্রিটিশ এমপিদের অবদান, সাহায্য, সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের ভূমিকার কথাও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক স্বাধীনতা পরবর্তীকালে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ থেকে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে উন্নয়নের যে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে সে সম্পর্কে ব্রিটিশ এমপিদের অবহিত করেন। সঙ্গীতা আহমেদ ও সৈয়দা সায়মা আহমদের যৌথ পরিচালনায় এর পর বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি। স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার বর্তমান চিত্র তথ্য-উপাত্তসহকারে উপস্থাপন করেন তিনি। সম্প্রতি বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বাংলাদেশের উন্নয়নর পক্ষে ব্রিটিশ এমপিদের সমর্থন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তিনি। লন্ডনে হাইকমিশনার নাজমুল কাওনাইন তার বক্তব্যে, এ ধরনের আয়োজন ব্রিটেনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদার করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ এখন জাতির জনকের কন্যার নেতৃত্বে যেভাবে এগিয়ে চলছে সে সম্পর্কে সকলকে অবহিত করার সুযোগ তৈরি হবে। বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু জিম ফিজ পেট্রিকসকে চমৎকার এ উদ্যোগে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান তিনি। অনুষ্ঠানে অন্যান্য ব্রিটিশ এমপির মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এন মেইন, জোয়ানা চ্যারি, জুলি কুপার, হেলেন গ্রান্ট (কনজারভেটিভ পার্টির ভাইস চেয়ার), লিজ ক্যান্ডাল, পল স্কালি, মাইকেল এলিস (পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারি), টমি শেফার্ড (শ্যাডো এসএনপি স্পোকস পার্সন), ডেভি আব্রাহাম (শ্যাডো সেক্রেটারি অব স্টেইট ফর ওয়ার্ক এ্যান্ড পেনশন), ভ্যালেরি ভাজ (শ্যাডো লিডার অব দি হাউস অব কমন্স), চিয়ন ওয়ারা, জনাথন এ্যাশওয়ার্থ (শ্যাডো সেকেটারি অব স্টেইট ফর হেলথ), জন ম্যাকডোনাল্ড (শ্যাডো চ্যান্সেলার অব দি এক্সচেকার), কিয়ার স্টার্মার, জন স্টিফেন্স, ক্রিশ্চিয়ান ম্যাথসন, মোহাম্মদ ইয়াসীন, জেসিকা মর্ডান, জুডিথ কউমিন্স, জিম ম্যাকমোহান, জনাথন রেনল্ডস (শ্যাডো ইকোনমিক সেক্রেটারি), মাইক ফির, ফাবিয়ান হ্যামিলটন, উইল কুইন্স, মার্ক টামি, রবার্ট বাকল্যান্ড কিউসি, ড্যানিয়েল জেনার, অ্যাঞ্জেলা রায়নার, লয়েড রাসেল ময়লি, নিক ডাকিন, স্টিভ ম্যাককেভ প্রমুখ। আগত ব্রিটিশ এমপিদের মধ্যে লেবার এমপি স্টিভেন টিমস, বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্র প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের অভাবনীয় সাফল্য এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের মানবিক ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যদি সে সময় তাদের সাহায্যের হাত রোহিঙ্গাদের প্রতি না বাড়িয়ে দিত তাহলে নির্যাতিত-নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের ভাগ্যে কি হতো তা কল্পনাতীত। এক্ষেত্রে মানবতার এবং সাহসিকতার এক বিরল দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ বলে অভিমত দেন তিনি। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশ বিষয়ক অল পার্টি এ্যালায়েন্সের চেয়ার এন মেইন এমপি বলেন, ৪৭ বছর আগে বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিসংগ্রাম করেছে। আজ তারা সেই সংগ্রামের বিজয়কে উদযাপন করছে। মাত্র ৪৭ বছরে বাংলাদেশ যে উন্নয়ন করেছে তা সত্যই অচিন্তনীয়। আমার সহকর্মীরা শুধু রোহিঙ্গাদের আশ্রয় এবং সাহায্যের কথা বলেছেন কিন্তু যতœ এবং আতিথেয়তার কথা কেউ বলেননি। বাংলাদেশ সরকার শুধু রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়নি, তাদেরকে নিজেদের দেশের মানুষদের মতো সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা প্রদান করছে যা সত্যি অকল্পনীয়। এডিনবরার সাউথ ইস্ট এর এমপি জোয়ানা চেরি বাংলাদেশী কমিউনিটির প্রশংসা করেন। তিনি ব্রিটেনে বাংলাদেশিদের ইমিগ্রেশন জটিলতার কথা উল্লেখ করে বলেন আমি আশাবাদী বাংলাদেশের মতো স্কটল্যান্ডও একদিন তাদের স্বাধীনতা অর্জন করবে আর আমরাও স্বাধীনতা দিবস পালন করতে পারব। হেলথ এ্যান্ড সেফটি মিনিস্ট্রির জুলি কুপার এমপি বলেন, বাংলাদেশ অত্যন্ত অল্প সময়ে দ্রুতগতিতে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করেছে। যে কোন প্রয়োজনে পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্রিটেন অতীতের মতো ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের পাশে সবসময় থাকবে। লিস ম্যাকানিজ এমপি বাংলাদেশের মানুষের আতিথেয়তার প্রশংসা করে বলেন রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশীদের এই মহৎ গুণটির আবার পরিচয় দিয়েছে। এমপিদের বক্তব্যের মাঝে জনাথন এ্যাশওয়ার্থ, রবার্ট বাকল্যান্ড কিউসি, স্টিভেন টিমস, জিম ফিজপেট্রিকসসহ অন্যদের জয় বাংলা সেøাগানে মুখরিত হতে থাকে পুরো ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব কমন্সে স্বাধীনতা দিবস আয়োজন সম্পর্কে সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান ফারুক বলেন, ’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অনেক এমপি আমাদের সাহায্য-সহযোগিতা করেছিল তাই তাদেরকে নিয়েই আমরা আমাদের স্বাধীনতা দিবস পালন করছি। বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। তাঁদের সাহায্য-সহযোগিতা যে বৃথা যায়নি এটিও জানানো আমাদের অন্যতম উদ্দেশ্য। দ্বিতীয়বারের মতো ব্রিটিশ এমপিদের নিয়ে আমরা এ আয়োজনটি করেছি। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আছে, যা পৃথিবীর খুব কম দেশেরই আছে। নতুন প্রজন্মের ব্রিটিশ জনপ্রতিনিধিদের কাছে স্বাধীনতা উত্তরকাল এবং বর্তমান বাংলাদেশের চিত্র তুলে ধরার জন্যই আমাদের এ প্রয়াস। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা সাফল্য গাঁথা নিয়ে দুটি প্রমাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণও সকলকে শোনানো হয়। এছাড়া দেশাত্মবোধক গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠান শেষে সকল ব্রিটিশ এমপির হাতে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচার ইংরেজী সংস্করণসহ বাংলাদেশের উন্নয়নের বিভিন্ন পরিসংখ্যান সংবলিত তথ্য ব্রিটিশ এমপিদের হাতে তুলে দেয়া হয়।
×