ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ফুটবল ম্যাচ ॥ ১৫ বছর পর ঠিক একই দিনে আবারও লড়াই এ দু’দল

বাংলাদেশ-লাওস মুখোমুখি আজ

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ২৭ মার্চ ২০১৮

বাংলাদেশ-লাওস মুখোমুখি আজ

রুমেল খান ॥ পৃথিবীতে কতই না কাকতালীয় ঘটনা ঘটে থাকে। খেলাধুলার ক্ষেত্রেও এ রকম অনেক ঘটনা ঘটেছে। নিশ্চয়ই আরও ঘটবে। তবে আপাতত মহাপ্রলয় না ঘটলে আজকের দিনে একটা ঘটনা ঘটবেই। তারিখটা মনে রাখুন, আজ ২৭ মার্চ। আজ থেকে ১৫ বছর আগে ২০০৩ সালে হংকংয়ে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল মুখোমুখি হয়েছিল লাওসের। আসর ছিল ২০০৪ এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাইপর্ব (গ্রুপ ‘ডি’)। বাংলাদেশ ওই একটিই ম্যাচ খেলেছিল লাওসের বিরুদ্ধে। সে ম্যাচে ২-১ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। মজার ব্যাপার হচ্ছে- আজ মঙ্গলবার ঠিক একই তারিখে (২৭ মার্চ) দল দুটো আবারও দীর্ঘ ১৫ বছর পর আবারও মুখোমুখি হতে যাচ্ছে! খেলাটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টায়। তবে পার্থক্য হলো সেবার বাংলাদেশ লাওসের মুখোমুখি হয়েছিল এএফসির প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে। আর এবার মুখোমুখি হবে ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে। সেবার খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল হংকংয়ে। আর এবার অনুষ্ঠিত হবে লাওসের ভিয়েনতিয়েনে, নিউ লাওস ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে। ফুটবল ইতিহাস, শক্তি, র‌্যাঙ্কিং ... সবকিছুতেই বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে লাওস। বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। লাওস স্বাধীনতা অর্জন করে ১৯৪৯ সালের ১৯ জুলাই। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন যেখানে প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭২ সালে, সেখানে লাওস ফুটবল ফেডারেশন প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫১ সালে। বাংলাদেশের ফিফা র‌্যাঙ্কিং যেখানে ১৯৭, সেখানে লাওসের র‌্যাঙ্কিং ১৮৩। ‘দ্য বেঙ্গল টাইগার্স’ খ্যাত বাংলাদেশ দল সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে প্রায় ১৭ মাস আগে। ১০ অক্টোবর, ২০১৬ সালে থিম্পুর চাংলিমিথাং জাতীয় স্টেডিয়ামে স্বাগতিক ভুটানের কাছে ৩-১ গোলে হেরেছিল তারা। আর ‘দ্য নেশন’ খ্যাত লাওস সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে মাত্র কদিন আগেই (২১ মার্চ)। নিজেদের মাঠেই তারা কম্বোডিয়ার কাছে হেরে যায় ০-১ গোলে। এদিক দিয়ে বাংলাদেশ-লাওস উভয় দলেরই মিল আছে। বাংলাদেশ তাদের সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচে জয় পেয়েছিল নয় ম্যাচ আগে, ২০১৬ সালের ৮ জানুয়ারি। যশোর জেলা স্টেডিয়ামে তারা ৪-২ গোলে হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কাকে। আর লাওস তাদের সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচে জয় কুড়িয়ে নিয়েছিল তিন ম্যাচ আগে, ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর। তাইপে মিউনিসিপ্যাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সে ম্যাচে তারা ২-১ গোলে হারিয়েছিল তিমুর-লেস্তেকে। বাংলাদেশের প্রসঙ্গে আসা যাক। অতীতে দেখা গেছে জাতীয় দল গঠন করে তাদের অনুশীলন করানো হয়েছে ঢাকা বা বিকেএসপিতে। এবারও সেটা হয়েছে। কিন্তু তার সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন দিক, সেটা হলো এই প্রথমবারের মতো লাল-সবুজ বাহিনী নির্দিষ্ট একটা সময় পর্যন্ত অনুশীলন করেছে বিদেশের মাটিতে! সেই প্রক্রিয়াটাই শুরু হয় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। বিমানযোগে কাতারের উদ্দেশে রওনা হয় বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। আগামী ৪-১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ‘সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ’-এর খেলা ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের প্রস্তুতির জন্য আগামী ২৭ মার্চ লাওসে অনুষ্ঠিত ‘ফিফা টায়ার-১ আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ’-এর খেলায় বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল অংশগ্রহণ করবে। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত সপ্তাহ দুয়েক কাতারে অবস্থান করে কন্ডিশনিং ক্যাম্পের জন্য। ১৫ মার্চ দলটি বিমানযোগে ঢাকায় ফেরে। এরপর ১৯ মার্চ বিমানযোগে রওনা হয়ে বিকেলে থাইল্যান্ড গিয়ে পৌঁছে জাতীয় ফুটবল দল। সেখানে অনুশীলনের পাশাপাশি দুটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলে। একটিতে হারে (রাচাবুড়ি ফল এফসির কাছে ০-১ গোলে), একটিতে জেতে (ব্যাঙ্কক গ্লাস এফসির বিরুদ্ধে ৪-৩ গোলে)। এরপর অর্ডবাহিনী ব্যাঙ্কক থেকে ২৫ মার্চ দল রওনা হয় লাওসে। ২০১৬ সালের ১০ অক্টোবর ভুটানের কাছে ‘ঐতিহাসিক’ লজ্জাজনক হারের পর এটাই হবে বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। আজ লাওসের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে বাংলাদেশ। তবে প্রীতি ম্যাচের পেছনে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপটাই বড় স্বপ্ন মামুনুলদের। এই টুর্নামেন্টে ভাল করতে টনিক হিসেবে কাজ করবে এই কন্ডিশনিং ক্যাম্পÑ এমনটাই আশা বাংলাদেশ দলের। আজ থেকে ১৫ বছর আগে ঠিক এই দিনে লাওসের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। ২০০৪ এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে গ্রুপ ‘ডি’ তে অপর দলটি ছিল হংকং। তারাই শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ পয়েন্ট পেয়ে (বাংলাদেশের সঙ্গে তারা ড্র করেছিল ২-২ গোলে) মূলপর্বে নাম লিখিয়েছিল। লাওস হয়েছিল দ্বিতীয়, আর সর্বনিম্ন স্থানটি ছিল বাংলাদেশের। এখন দেখার বিষয়, ১৫ বছর পর একই দিনে অনুষ্ঠিত একই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে জিতে ফল পাল্টাতে পারে কি না লাল-সবুজ বাহিনী। বাংলাদেশ দল ॥ শহীদুল আলম সোহেল, আশরাফুল ইসলাম রানা, আনিসুর রহমান জিকো, উত্তম কুমার বণিক, বিশ্বনাথ ঘোষ, তপু বর্মণ, রহমত মিয়া, ওয়ালী ফয়সাল, মামুন মিয়া, নাসিরউদ্দিন চৌধুরী, টুটুল হোসেন বাদশা, মামুনুল ইসলাম, ফয়সাল মাহমুদ, আলী হোসেন, জামাল ভূঁইয়া, মাসুক মিয়া জনি, সাদ উদ্দীন, মোঃ আব্দুল্লাহ, বিপলু আহমেদ, আবু সুফিয়ান সুফিল, জাফর ইকবাল, নাবিব নেওয়াজ জীবন ও তৌহিদুল আলম সবুজ।
×