ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

অভিনন্দন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৩:২৮, ২৭ মার্চ ২০১৮

অভিনন্দন প্রধানমন্ত্রী

মাঝে মাঝে অবাক হয়ে ভাবিÑ প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাও কি ভাবতে পেরেছেন বাংলাদেশ নামক পিছিয়ে পড়া রাষ্ট্রকে তিনি এমন উচ্চতায় উন্নীত করতে পারবেন? অবাক হই আর যাই হই, তিনি পেরেছেন। আসলে নির্লোভ মানুষের পক্ষে অনেক অসাধ্য সাধন করা সম্ভব। সেই সঙ্গে প্রয়োজন মানবপ্রেম। বাংলাদেশের জনগণের প্রতি মমত্ব আছে বলেই তিনি জননেত্রী। শত চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন অনন্য উচ্চতায়। তার নিরলস পরিশ্রম, সততা, মেধার সর্বোচ্চ প্রয়োগ আছে বলেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের তকমা পেল। অভিনন্দন জননেত্রী শেখ হাসিনা। অভিনন্দন প্রধানমন্ত্রী। কেন জননেত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দুইভাবে অভিনন্দন পাবেন শেখ হাসিনা? জনবান্ধব নেত্রী হিসেবে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি সম্পাদন করেছেন, দেশে কঠোরভাবে জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিয়েছেন, শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে শুধু মুখেই বলেননি বরং তা দৃশ্যমান করেছেন, বিদ্যুত ও জ্বালানি উৎপাদনে সাফল্য এনেছেন, লাখ লাখ সরকারী-বেসরকারী কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করেছেন, স্বাস্থ্য-শিক্ষা প্রায় সব ক্ষেত্রেই উন্নয়নের ছোঁয়া লাগিয়েছেন। নারী শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত অবৈতনিক এবং তাদের জন্য উপবৃত্তির ব্যবস্থা করে নারীর ক্ষমতায়নকে বাস্তবিক রূপ দেন শেখ হাসিনা। এসব গুরুত্বপূর্ণ জনহিতকর কাজগুলো একজন জনকল্যাণকামী নেত্রীই পরিশ্রমের সঙ্গে এগিয়ে নিতে পারেন। এই কাজগুলোতে সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের নেপথ্যে জনকল্যাণই নিহিত। এই অর্থে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকার। শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকারও শেখ হাসিনা। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষে বাংলাদেশ আজ অনেক এগিয়ে। ডিজিটালাইজেশন সময়ের অত্যাবশ্যকীয় বিষয় ছিল। শেখ হাসিনা পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশকে ডিজিটাল আলো দেখিয়েছেন। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষে বাংলাদেশ আজ অনেক এগিয়ে। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে আনার সাফল্য শেখ হাসিনার। ভারতের সঙ্গে নিষ্পন্ন না হওয়া ছিটমহল বিনিময়ে ২০১৫ সালের ১ আগস্ট সাফল্য আসে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইতোমধ্যে তিনি বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর, সৎ ও পরিশ্রমী প্রধানমন্ত্রীর আখ্যা পেয়েছেন। এই স্বীকৃতি প্রকৃতিগত। কেননা, শেখ হাসিনার চ্যালেঞ্জিং কাজগুলোই তাকে এই স্বীকৃতি এনে দিয়েছে। না হলে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্পের কাজ নিজস্ব অর্থায়নে করার সাহস দেখানো ছিল খুবই সময়ের দাবি। এই সাহস না দেখালে হয়ত পদ্মা সেতুর স্বপ্নও দেখত না বাংলাদেশ। ২০১৪ সালে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর অর্থনীতিকে আরও মজবুত অবস্থানে দাঁড় করিয়েছেন শেখ হাসিনা। জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৬-এ ওপরে রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের হার ২৮ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নকল্প সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য তিনি। ২০১৫ সালে জাতিসংঘের ৭০তম অধিবেশনে শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা সম্পর্কিত প্রস্তাবনা তুলে ধরে বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টি কাড়েন। ইউনিয়ন পর্যায়ে ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবায় বিশ্বের কাছে রোল মডেল হয়ে ওঠে। শেখ হাসিনা যে কাজ করে যাচ্ছেন, এর প্রমাণ তার নানা রকম অর্জন। ২০০৮ সালে ২য় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর শিশুমৃত্যু হ্রাসসংক্রান্ত এমডিজি-৪ অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল এ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করে, ২০১১ সালের ২৬ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের হাউস অব কমন্সের স্পীকার জন বেক্রো এমপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দূরদর্শী নেতৃত্ব, সুশাসন, মানবাধিকার রক্ষা, আঞ্চলিক শান্তি ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সচেতনতা বৃদ্ধিতে অবদানের জন্য ‘গ্লোবাল ডাইভারসিটি এ্যাওয়ার্ড’ দিয়েছেন, ২০১২ সালে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় আইএনইএইচসিও কর্তৃক ‘কালচারাল ডাইভারসিটি’ পদক পেয়েছেন, ২০১৩ সালে খাদ্য নিরাপত্তা এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচনে অবদানের জন্য জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ‘ডিপ্লোমা এ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন, ২০১৪ সালে নারী ও শিশু শিক্ষা উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য ইউনেস্কো কর্র্তৃক ‘শান্তিবৃক্ষ’ পদক তারই, ২০১৫ সালে জাতিসংঘের ৭০তম অধিবেশনে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ এবং তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে অবদানের জন্য ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’সহ নানা পুরস্কার রয়েছে শেখ হাসিনার অর্জনের তালিকায়। তার এই অর্জন জাতি হিসেবে আমাদের গর্বিত করে। কাজ করার মানসিকতা, মানবকল্যাণের স্পৃহা, কঠোর পরিশ্রমের মানসিকতা, রুচিশীলতা, দূরদর্শিতা, সততা ও বুদ্ধিমত্তা থাকলেই সমগ্র জাতির উন্নয়ন সম্ভব। শেখ হাসিনার মাঝে এই গুণাবলীর সমন্বয় আছে। নির্লোভ, ধার্মিক এমন একজন মানুষই তো জনগণকে ভালবাসতে পারেন। তাদের উন্নয়নে নিজেকে কর্মী হিসেবে নিবেদিত করতে পারেন। শেখ হাসিনার এতসব অর্জন তার একার নয়। এই অর্জনগুলো দেশ ও জনগণের মুখ উজ্জ্বল করেছে। তাই শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একা কাজ করলেই চলবে না। আমাদেরও কাজ করতে হবে। সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞকে গতিশীল রাখতে এই সরকারকে আবার ক্ষমতায় আনতে হবে। নাহলে স্থবির হয়ে পড়তে পারে চলমান সকল উন্নয়নযজ্ঞ। আমাদের উন্নয়নশীল রাষ্ট্রকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে কোন্ রাষ্ট্রনায়কের ওপর আমরা নির্ভর করতে পারব, তা আমাদেরই বুঝতে হবে। লেখক : চিকিৎসক ও কথাসাহিত্যিক [email protected]
×