ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিটিআরসির নির্দেশ মানছে না মোবাইল অপারেটররা ॥ খুদে বার্তায় নানা অফার, নেই মনিটরের কোন উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ২৪ মার্চ ২০১৮

বিটিআরসির নির্দেশ মানছে না মোবাইল অপারেটররা ॥ খুদে বার্তায় নানা অফার, নেই মনিটরের কোন উদ্যোগ

ফিরোজ মান্না ॥ বিটিআরসির দেয়া নির্দেশ মোবাইল অপারেটররা মানছে না। তারা বেঁধে দেয়া অফারের চেয়ে অনেক বেশি অফার গ্রাহককে প্রতিনিয়ত এসএমএসের মাধ্যমে দিয়ে যাচ্ছে। বিটিআরসির পক্ষ থেকে বেশি অফার দেয়ার বিষয়টি মনিটর করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এ মাসের গোড়ার দিকে বিটিআরসির জারি করা নির্দেশে বলা হয়েছিল, মোবাইল অপারেটররা পঁয়ত্রিশটির বেশি অফার গ্রাহকদের দিতে পারবে না। নানা ধরনের অফার দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে বিটিআরসি এ নির্দেশ জারি করে। মোবাইল অপারেটররা বিশটি রেগুলার অফার ও পনেরটি প্রমোশনাল অফার দিতে পারবে। এর বাইরে অপারেটররা কোন অফার ঘোষণা করলে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়ে দেয় বিটিআরসি। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কমিশন (বিটিআরসি) জারি করা নির্দেশে উল্লেখ করা হয়েছে, কমিশনের তত্ত্বাবধানে মোবাইল সেবা বিষয়ক গণশুনানির আলোকে এবং গ্রাহকের স্বার্থ বিবেচনা করে এখন থেকে প্রতি মোবাইল অপারেটর এক সঙ্গে সর্বোচ্চ বিশটি রেগুলার অফার এবং ১৫ প্রমোশনাল অফার বাজারজাত করতে পারবে। এছাড়াও মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের বিল শক থেকে রক্ষা করতে ‘ পে পার ইউজ’ ৫ টাকার বেশি কাটা যাবে না। তবে কোন গ্রাহক ৫ টাকার বেশি লিমিট নিতে চাইলে তার কাছ থেকে এসএমএস বা ইউএসএসডির মাধ্যমে কনসেন্ট নিতে হবে যাতে গ্রাহক পরবর্তীতে অভিযোগ করলে অপারেটর দৃশ্যমান প্রমাণ তুলে ধরতে পারে। এ সিদ্ধান্ত ১ মার্চ থেকে কার্যকর হবে। কোন অপারেটর বিটিআরসির নির্দেশ অমান্য করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। মোবাইল অপারেটররা পঁয়ত্রিশের বেশি অফার দিলেও বিটিআরসির পক্ষ থেকে মনিটর করা হয় না। ফলে অপারেটররা বেশি অফার দিলেও বিটিআরসির আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কোন সুযোগই থাকছে না। বিটিআরসি সূত্র জানায়, এখন থেকে মোবাইল অপারেটরদের বিভিন্ন অফার ও ইন্টারনেট প্যাকেজ থেকে শুরু করে কলড্রপ সব কিছু মনিটর করা হবে। অপারেটররা অফার ও ইন্টারনেট প্যাকেজের নামে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়ে গ্রাহকদের কয়েক হাজার অভিযোগ বিটিআরসিতে জমা পড়েছে। এ গুলো আমলে নেয়া হবে। গত বছরের মার্চে বিটিআরসির বোর্ড মিটিংয়ে মনিটরিং সেল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এবার ফোরজি চালুর পর এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে বিটিআরসি। মনিটরিং সেল যে কোন অপারেটরের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তদন্ত করবে। তদন্তে প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণিত হলে, আইন অনুযায়ী গ্রাহককে বড় অঙ্কের টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে সংশ্লিষ্ট অপারেটরকে। মোবাইল অপারেটরগুলোকে এ বিষয়ে বিটিআরসি কয়েক দফা চিঠি দিয়ে সতর্ক করলেও অপারেটররা তাতে গুরুত্ব দেয়নি। এবার বিটিআরসি নিজ উদ্যোগে ব্যবস্থা নেবে। গ্রাহক স্বার্থের কথা মাথায় রেখে বিটিআরসি বোর্ড সভায় সম্প্রতি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিটিআরসির অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন প্যাকেজ ও অফার দিচ্ছে মোবাইল অপারেটররা। দিনের কোন অংশে কত পয়সা মিনিট বা সেকেন্ড, আবার কোন নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা রিচার্জ করলে ‘এত মিনিটি ও এত এসএমএস ফ্রি’। এসব অফার পাঠিয়ে গ্রাহকদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলছে। গ্রাহকরা এসব অফার গ্রহণ করে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। একইভাবে ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেও অফার দিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। মোবাইল গ্রাহকরা এসব এসএমএসের কারণে এখন অতিষ্ঠ। এরপরও অপারেটররা কাজটি করেই যাচ্ছে। বিটিআরসি অপারেটরদের চিঠি দিয়ে সতর্ক করলেও অফার দিয়েই যাচ্ছে। সাধারণ গ্রাহক কোন না কোনভাবে প্রতারিত বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে (ন্যূনতম সম্ভাবনা) বা আশঙ্কা রয়েছে এমন কোন প্যাকেজ বা অফার অনুমোদন দেয়া হবে না। গ্রাহকদের ফিডব্যাক ব্যবস্থা রাখতে হবে। কোন প্যাকেজ বা অফারের মেয়াদ সর্বনিম্ন ৭ দিন হতে হবে। তবে ঈদ, পূজা, বড়দিন ও নববর্ষ এসব ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা আলাদাভাবে স্বল্প সময়ের জন্য (ন্যূনতম তিন দিন) অনুমোদন দেয়া হবে। যদি কোন অপারেটর বিশেষ দিনগুলোতে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে কম অফার দেয় তাহলে ওই অপারেটরের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোন অফার বা প্যাকেজ গ্রাহকের অনুমোদন ছাড়া স্বয়ংক্রিয় চালু হবে না। কোন অফার শেষ হওয়ার পর স্বয়ংক্রিয় চালু হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মাসিক অফার হতে হবে ন্যূনতম ৩০ দিন। মাসিক অফার ৩০ দিনের এক ঘণ্টা কম হলেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। যে সব গ্রাহক বিটিআরসিতে অভিযোগ দিয়েছেন, তারা সমাজের সচেতন ও শিক্ষিত মানুষ। বিটিআরসি পর্যন্ত আসার মতো সুযোগ তাদের রয়েছে। যারা খুব সাধারণ গ্রাহক তারা নানাভাবে প্রতারণার শিকার হলেও বিটিআরসি পর্যন্ত আসতে পারছেন না। দেশে বর্তমানে ১৪ কোটির ওপরে মোবাইল গ্রাহক। প্রতিদিন মোবাইল অপারেটররা এক টাকা করেও হাতিয়ে নিলেও প্রতিদিন ১৪ কোটি টাকা গ্রাহকদের কাছ থেকে কত কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে। বিটিআরসির এক কর্মকর্তা বলেন, এসব কিছু মাথায় রেখেই বিটিআরসি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গ্রাহক স্বার্থ রক্ষাসহ অপারেটরদের ব্যবসা পরিচালনার বিষয়টিও মাথায় রাখা হয়েছে। কোন প্রকার অনিয়ম মেনে নেয়া হবে না।
×