ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

গারো মা-মেয়ে হত্যায় ভাগ্নে ও তার তিন বন্ধু জড়িত!

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২২ মার্চ ২০১৮

গারো মা-মেয়ে হত্যায় ভাগ্নে ও তার তিন বন্ধু জড়িত!

স্টাফ রিপোর্টার ॥ টাকার জন্য রাজধানীর গুলশানের কালাচাঁদপুরে গারো মা মেয়েকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ ও পরিবারের সন্দেহ। হত্যার সঙ্গে নিহত সুজাতার আপন ভাগ্নে ও তার তিন বন্ধু জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এ ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ জব্দ হয়েছে। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হত্যাকা-টি ঘটানো হয়। হত্যাকারীরা হত্যাকা- শেষে পোশাক পরিবর্তন করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় হত্যাকারীদের চোখে মুখে বাড়তি উদ্বেগ লক্ষ্য করা গেছে। এ ঘটনায় দুই জনকে হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশান থানার উত্তর কালাচাঁদপুরের ক-২৫ নম্বর বাড়ির চার তলার ফ্ল্যাট থেকে বেসেথ চিরান (৬৫) ও তার মেয়ে সুজাতা চিরানের (৪২) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সুজাতাকে গলা কেঁটে হত্যা করা হয়। আর বেসেথের লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। বুধবার এ ঘটনায় নিহত সুজাতার স্বামী আশীষ মানখিন বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় সঞ্জীব চিরান ও তার তিন বন্ধুকে আসামি করা হয়েছে। নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বাড়িঘর করার জন্য সুজাতা টাকা জমিয়েছিল। জমিয়ে রাখা সেই টাকার বিষয়ে পরিবারের মধ্যে আলোচনা হয়। কবে নাগাদ বাড়িঘর তৈরি শুরু করবেন, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি নিহত সুজাতার বড় বোনের ছেলে মামলার আসামি সঞ্জীব জানতে পারে। এরপর থেকেই সে টাকার জন্য সুজাতাকে চাপ দিয়ে আসছিল। তারই ধারাবাহিকতায় হত্যাকা-টি ঘটে। গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সালাউদ্দিন মিয়া জানান, ঘটনাস্থল থেকে হত্যার আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। হত্যাকা-ের ঘটনায় ধস্তাধস্তির চিহ্ন মিলেছে। একাধিক ব্যক্তি হত্যাকা-ে জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাড়িটির নিচতলায় থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে তার পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তাতে দেখা যায়, বিকেল চারটার দিকে সুজাতার বড় বোনের ছেলে সঞ্জীব তিন বন্ধুসহ সুজাতাদের বাসায় যায়। প্রায় দুই ঘণ্টা পর অন্য পোশাক পরে বেরিয়ে যায়। তাদের চোখে মুখে বাড়তি উদ্বেগ লক্ষ্য করা গেছে। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সঞ্জীব তার তিন বন্ধু নিয়ে সুজাতাদের বাড়িতে যায়। সুজাতার বড় মেয়ে মায়াবী তাদের রান্না করে খাওয়ান। এরপর তিনি সাড়ে চারটার দিকে কাজে বেরিয়ে যান। সুজাতার চার সন্তানের মধ্যে সবার বড় ছেলে গ্রামে থাকেন। তিন মেয়ের মধ্যে সবার ছোট মেয়ে ধানম-ি একটি হোস্টেলে থাকে। বাকি দুই মেয়ে সুজাতার সঙ্গে থাকেন। তারা বিউটি পার্র্লারে চাকরি করেন। সুজাতার বড় মেয়ের একবছর বয়সী একটি সন্তান রয়েছে। সুজাতার বড় মেয়ে মায়াবীর স্বামী পিলেস্তা সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাসায় যান। তিনি বাইর থেকে দরজা ছিটকিনি দিয়ে বন্ধ দেখেন। ঢুকেই তিনি সুজাতা ও তার মায়ের লাশ দেখতে পান। সুজাতার স্বামী আশীষ মানখিন জানান, সুজাতার বড় বোনের ছেলে সঞ্জীব। বেকার সঞ্জীব তার খালা সুজাতার কাছ থেকে টাকা পয়সা দাবি করে আসছিল। টাকার সূত্রধরেই হয়ত সঞ্জীব খুনের ঘটনাটি ঘটিয়েছে। সুজাতা চিরানের মেয়ে মায়াবী চিরান তার মা ও নানীর খুনী যারাই হোক, তাকে গ্রেফতার দাবি করেছেন। খুনের পেছনে তার বড় খালার ছেলে সঞ্জীব জড়িত থাকতে পারে। বুধবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে ময়মনসিংহের হালুঘাট থানার জয়রামপুরের চন্দ্রাঘাটে শেষকৃত্য করা হয়। মা-মেয়ের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক প্রদীপ বিশ্বাস জানান, মা বেসেথ চিরানকে শ্বাসরোধে আর তার মেয়ে সুজাতা চিরানকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সুজাতার বুক, পিঠ, হাতসহ শরীরে ১৪টি কাটার জখম আছে। গলায় জবাই করার গভীর ক্ষত রয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সুজাতার মৃত্যু হয়েছে।
×