ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলো মীর কাসেম, সাকাসহ যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে সোচ্চার থাকা ব্যক্তিকে ;###;ড. কামাল হোসেনও থাকবেন মূল শুনানিতে

আবার কারলাইল ॥ যুদ্ধাপরাধীদের পর এবার খালেদার পক্ষে

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২১ মার্চ ২০১৮

আবার কারলাইল ॥ যুদ্ধাপরাধীদের পর এবার খালেদার পক্ষে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীসহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে সোচ্চার সেই লর্ড কারলাইলকে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বিএনপি। মঙ্গলবার নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ব্রিটেনে বিএনপির যারা সমর্থক আছেন তারা ব্রিটিশ আইনজীবী লর্ড কারলাইলকে নিয়োগ দিয়েছেন। লর্ড কারলাইল খালেদা জিয়ার মামলায় আইনজীবীদের প্যানেলকে সহযোগিতা ও পরামর্শ দেবেন। মূল কেইসের শুনানিতে ড. কামাল হোসেনও খালেদা জিয়ার মামলায় পরামর্শ দেবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব। ইহুদী আইনজীবী লর্ড কারলাইল বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কট্টর সমালোচক। তিনি এই বিচারের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে নানা সভা, সেমিনার এবং ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে দূতিয়ালি করেছেন। আদালত যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদ-ের রায় বহাল রাখার পর লর্ড কারলাইল বাংলাদেশ সরকারের কাছে একটি চিঠিও লিখেছিলেন। এতে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তোলেন এবং ঐ আদালতের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার সুপারিশ করেন। আলবদর নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর না করার দাবিতে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনারের কাছে চিঠিও লিখেছিলেন ব্রিটিশ এই আইনজীবী। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার সেই লর্ড কারলাইলই হচ্ছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের পরামর্শক। ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, লর্ড কারলাইল দীর্ঘদিন যুক্তরাজ্যের রাজনীতি ও আইন পেশার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। সেদেশে আমাদের রাজনীতির যারা সমর্থক রয়েছেন তাদের সঙ্গে কথা বলে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে তিনি পরামর্শ দেবেন। খালেদা জিয়ার মামলাগুলো পরিচালনা করার জন্য তিনি প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ দেবেন। লর্ড কারলাইল তার অফিস থেকে একটা চিঠি পাঠিয়েছেন জানিয়ে ফখরুল বলেন, এখন থেকে খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়ে সহযোগিতা প্রদান করবেন, পরামর্শ দেবেন এবং প্রয়োজনীয় আইনী সহযোগিতা যতটুকু করা তার পক্ষে সম্ভব সেটা তিনি করবেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেলে সিনিয়রদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক এ্যাটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ্যাডভোকেট আবদুর রেজ্জাক খান ও এ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন। খালেদা জিয়ার মামলা পরিচালনার জন্য দেশের আইনজীবীরা তাহলে কি যথেষ্ট নন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা ঠিক না, তবে খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরার জন্য লর্ড কারলাইলকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আমরা এই আইনজীবীকে পেয়ে আনন্দিত। ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার নামে ৩৬টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে নজিরবিহীনভাবে। এতে প্রমাণ হয় দেশে আইনের শাসন নেই। দেশের অন্যতম শীর্ষ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন খালেদা জিয়ার মামলায় পরামর্শ দেবেন কি না জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি বলেছেন কেইসের বিষয়টা পড়ছেন। যতটুকু পরামর্শ প্রয়োজন তিনি দেবেন, যখন মূল কেইসের শুনানি হবে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসের সদস্য কারলাইলের আইনজীবী হিসেবে অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, লর্ড কারলাইল কুইন্স কাউন্সিলের সদস্য। দীর্ঘকাল ধরে তিনি আইন পেশা ও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি কমনওয়েলথ রাইটস ইনিশিয়েটিভের চেয়ারম্যান। ২৮ বছর ধরে তিনি পার্টটাইম জজ হিসেবে কাজ করেছেন ‘ইনক্লুডিং ইন দি হাইকোর্ট অব জাস্টিস’। তিনি একজন সাবেক এমপি। খালেদা জিয়ার সব মামলায় দেশীয় আইনজীবীদের সহায়তা করতে লর্ড কারলাইলকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সবগুলো মামলার আইনজীবী প্যানেলের সদস্য হবেন তিনি। খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়ে তিনি ওখান থেকে কাজ করবেন। প্রয়োজনে বাংলাদেশেও আসবেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আতাউর রহমার ঢালী, আব্দুস সালাম, আবুল খায়ের ভূইয়া, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ। কে এই লর্ড কারলাইল? পোল্যান্ড থেকে যুক্তরাজ্যে অভিবাসিত ইহুদী আইনজীবী লর্ড কারলাইল বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের কঠোর সমালোচক। তিনি এই বিচারের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে নানা সভা, সেমিনার এবং ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে দূতিয়ালি করেছেন। যাকে পুরো জামায়াতসহ যুদ্ধাপরাধীরা বিদেশে তাদের অন্যতম আইনী ও রাজনৈতিক সহযোগী হিসেবেও মনে করতেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার সেই লর্ড কারলাইলই হচ্ছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের পরামর্শক। বাংলাদেশের সুপ্রীমকোর্ট ২০১৬ সালের ৮ মার্চ জামায়াত নেতা যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের মৃত্যুদ-ের রায় বহাল রাখার পর লর্ড কারলাইল বাংলাদেশ সরকারের কাছে একটি চিঠিও লিখেছিলেন। এতে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তোলেন এবং ঐ আদালতের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার সুপারিশ করেন। আলবদর নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর না করার দাবিতে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনারের কাছে চিঠিও লিখেছিলেন ব্রিটিশ এই আইনজীবী। ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলন চলাকালে বাংলাদেশে ‘গ্রহণযোগ্য’ সরকার গঠনে উদ্যোগ নিতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে অনুরোধ করেছিলেন লর্ড কারলাইল। ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে নিরপেক্ষতা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানান এ লর্ড কারলাইল। জেনেভার ইউনাইটেড নেশনস হাইকমিশন ফর হিউম্যান রাইটসের হাইকমিশনার নাভী পিল্লাই বরাবর লিখিত এক চিঠিতে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপও চেয়েছিলেন লর্ড কারলাইল। ২০১৩ সালের ১৫ জুন জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামে ফলাও করে প্রচার করা হয় তাদের পক্ষে আইনজীবী লর্ড কারলাইলের কর্মকা-। ‘নিরপেক্ষতা এবং ন্যায়বিচারে ব্যর্থতায় আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেছেন লর্ড এরিক এভেবারি ও লর্ড কারলাইল’ এ শিরোনামে সংগ্রামে প্রকাশ করা হয়েছিল তাদের তৎপরতার কথা। বলা হয়েছিল, ‘আইসিটির নিরপেক্ষতা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতার জন্য আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি জানিয়েছেন লর্ড এরিক এভেবারি এবং লর্ড কারলাইল। জেনেভার ইউনাইটেড নেশনস হাইকমিশন ফর হিউম্যান রাইটসের হাইকমিশনারের কাছে লিখিত এক চিঠিতে তারা এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। চিঠিতে তারা বলেন, ‘বেশ কিছুকাল থেকেই আন্তর্জাতিক আদালতের কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন বেসরকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বিভিন্ন কার্যক্রমকে সমালোচনা করে বেসরকারী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার বিবৃতি আপনার দৃষ্টিগোচর হয়ে থাকবে। একজন অভিযুক্তের মৃত্যুদ-াদেশ নিয়ে করা আপীলের কার্যক্রম শেষ হয়ে তা এখন রায়ের অপেক্ষায় আছে। এই প্রেক্ষাপটে আপনার উচিত হবে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে একটি নিরপেক্ষ প্রতিনিধি দলকে পুরো বিচার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করার জন্য আমন্ত্রণ পাঠানোর অনুরোধ জানানো। এই প্রতিনিধি দল ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম পর্যালোচনা করবে। কারাবন্দী বিচারাধীন ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাত করে তাদের উদ্বেগের বিষয়গুলো জানবে। জনগণ থেকে খালেদা জিয়াকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে সরকার- খসরু ॥ বর্তমান সরকার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নীলনক্সা বাস্তবায়ন করতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দী করে দেশের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বাংলাদেশ জাতীয় দল’ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আমির খসরু বলেন, জনগণের ওপর সরকার আস্থা হারিয়ে ফেলেছে, জনগণও সরকারের ওপর আস্থা হারিয়েছে। সরকার ও জনগণের সম্পর্ক আস্থাহীনতার মধ্যে চলছে। তাই প্রতিবাদের বিস্ফোরণ ঠেকাতে সরকার জনগণকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোট দেয়ার সুযোগ দিতে চায় না। তিনি বলেন, দেশ-জাতি যে সঙ্কটে আছে তা আমদের এক হয়ে মোকাবেলা করতে হবে। যতই জীবনের ঝুঁকি থাকুক আমরা রাজপথে থাকব। আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট সৈয়দ এহ্সানুল হুদার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ন্যাপ মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, জাপা (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, এনডিপি মহাসচিব মঞ্জুর হোসেন ঈসা, এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব শাহদাৎ হোসেন সেলিম প্রমুখ।
×