ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আজ একনেকে অনুমোদন

সরকারী চাকুরেদের জন্য নোয়াখালীতে নয়টি দশতলা ভবন হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২০ মার্চ ২০১৮

সরকারী চাকুরেদের জন্য নোয়াখালীতে নয়টি দশতলা ভবন হবে

আনোয়ার রোজেন ॥ নোয়াখালী জেলায় সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সঙ্কট নিরসনে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে সদরের কোর্ট রোড সংলগ্ন এলাকায় নয়টি ১০ তলা ভবনে মোট ৩২৪টি ফ্ল্যাট তৈরি করবে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এসব ফ্ল্যাটের আয়তন হবে ৬৫০ থেকে ১ হাজার ২৫০ বর্গফুট। ফ্ল্যাটগুলো তৈরিতে ব্যয় হবে ২১৯ কোটি টাকা। ব্যয়ের সম্পূর্ণ অর্থ দেয়া হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ফ্ল্যাটগুলো তৈরি হলে নোয়াখালীতে কর্মরত সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপযুক্ত, মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যকর আবাসন নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি তাদের কাজের মানও বৃদ্ধি পাবে। এজন্য একটি প্রকল্প চূড়ান্ত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘নোয়াখালী সদরে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনের কথা রয়েছে। একনেকে অনুমোদন ২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ করবে গণপূর্ত অধিদফতর। সোমবার পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, নোয়াখালী অনেক পুরনো একটি জেলা। জেলায় অনেকগুলো সরকারী-আধা সরকারী প্রতিষ্ঠান আছে। কিন্তু সে তুলনায় সরকারী আবাসিক সংখ্যা অনেক কম। এই আবাসিক সঙ্কটের কারণে জেলার সরকারী কর্মকর্তারা তাদের আর্থিক সামর্থ্যরে তুলনায় বেশি ভাড়ায় অথবা নিম্নমানের বাসা ভাড়া নিতে বাধ্য হন। এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি সরকারী আবাসিক এলাকার সুন্দর পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে, যা পরোক্ষভাবে তাদের কর্মদক্ষতা হ্রাস করে। তিনি আরও বলেন, সার্বিকভাবে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। রাজধানীতে কর্মরত সরকারী চাকুরেদের মাত্র ৮ শতাংশ আবাসন সুবিধা পেয়ে থাকেন। বিশাল একটি অংশ বেসরকারীভাবে ভাড়া বাসায় অবস্থান করেন। ফলে তাদের নানাবিধ সমস্যার মধ্য দিয়ে দিন কাটাতে হয়। এজন্য সরকার চেষ্টা করছে তাদের আবাসন সঙ্কট দূর করার। ইতোমধ্যেই এ সংক্রান্ত অনেকগুলো প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আবার কোন কোনটির বাস্তবায়নও হয়ে গেছে। আমরা চাই সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাক। তারা যেন আবাসনের দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে মনোযোগ দিয়ে দেশের জন্য কাজ করতে পারেন। নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী জেলায় বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মোট কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা ৫ হাজার ১৭৪ জন। এর মধ্যে কর্মকর্তা ৯২২ জন এবং কর্মচারী ৪ হাজার ২৫২ জন। তাছাড়া স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানেও অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। বর্তমানে তাদের জন্য ১ হাজার ২৫০ বর্গফুট আয়তনের তিনটি, ১ হাজার বর্গফুটের ছয়টি, ৮০০ বর্গফুটের ১০টি এবং ৬৫০ বর্গফুটের সাতটি বহুতল ভবন। মোট ২৬টি তিন তলা ভবনে ফ্ল্যাট আছে সাকল্যে ২৭৭টি, যা জেলায় কর্মরত সরকারী চাকরিজীবীর সংখ্যার বিপরীতে অপ্রতুল। বিদ্যমান ভবনগুলো ষাটের নির্মিত, দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে এবং লবণাক্ত এলাকার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় জরাজীর্ণ এবং বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। লবণাক্ততার কারণে ঝরে পড়েছে ভবনের দেয়ালের প্লাস্টার। ছাদের রডে মরিচা ধরে খসে পড়ছে কংক্রিট। ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনাও ঘটছে। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যমান ২৬টি ভবনের মধ্যে নয়টি পরিত্যক্ত তিন তলা ভবন ভেঙ্গে একই জায়গায় নয়টি ১০ তলা ভবন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য জুয়েনা আজিজ বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৩২৪ জন সরকারী চাকরিজীবীর পরিবারকে আবাসিক সুবিধা প্রদান করা সম্ভব হবে। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সঙ্কট আংশিকভাবে লাঘব হবে। ফ্ল্যাটগুলোতে উন্নত ও স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিভিন্ন ভবনের মধ্যবর্তী খালি জায়গায় শিশুদের খেলার জায়গাতে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া আবাসন এলাকার মধ্যে অবস্থিত দুটি বড় পুকুরের সংস্কারও করা হবে। সূত্র জানায়, প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছে নয়টি ১০ তলা ভবন নির্মাণ। এর মধ্যে ছয়টি ভবনে ৭২টি করে ২১৬টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ১ হাজার ২৫০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট হবে দুটি ভবনে, ১ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট হবে দুটি ভবনে ও ৮০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট হবে দুটি ভবনে। অপর তিনটি ভবনে ৬৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট হবে ১০৮টি। প্রতিটি ভবনে ইউনিট থাকবে চারটি। এছাড়াও প্রকল্পের ভবনের ছাদে সোলার সিস্টেম, লিফট সুবিধা, জেনারেটর সুবিধা, অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কাজ করা হবে।
×