ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর শিক্ষাঙ্গন শিশুদের কলরবে মুখর

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৮ মার্চ ২০১৮

রাজধানীর শিক্ষাঙ্গন শিশুদের কলরবে মুখর

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন: রং ছড়ানো আলো, লাল সবুজের বাংলাদেশে থাকবে শিশু ভালো’ এই স্লোগানের মধ্য দিয়ে শনিবার সারাদেশে পালিত হল বঙ্গবন্ধুর ৯৮তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস। এ দিনটি ছিল শিশুদের। এদিনে সরকারী ছুটি থাকা সত্ত্বেও শিশুরা উপস্থিত হয়েছে স্ব-স্ব স্কুলে। তারা চিত্রাঙ্কন, রচনা ও কবিতা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে। তাদের কেউ কেউ বঙ্গবন্ধুর ছবি এঁকেছে, কেউবা তাঁর জীবনকাহিনী বর্ণনা করেছে কেউবা কবিতা আবৃত্তি করেছে। এভাবেই নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর চেতনায় উজ্জ্বীবিত হচ্ছে। রাজধানীর মনিপুর গার্লস স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী লামিয়া তাবাসসুম। সে নিজ স্কুল প্রাঙ্গণে হাজির হয়েছে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে। সে জনকণ্ঠকে জানায়, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে স্কুল বন্ধ থাকলেও আমি স্কুলে এসেছি। কারণ আমার ছবি আঁকতে ভাল লাগে। আমি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ দেয়ার ছবি একে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি। সেইসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ওপর রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি।’ দশম শ্রেণীর তানিয়া মাহমুদ বলে, ‘আমি রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি। আমার বিষয় ছিল- বঙ্গবন্ধুর ছেলেবেলা। আমাদের খোকা (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাক নাম) স্কুলে পড়া অবস্থায় মানুষের অধিকার আদায়ে সোচ্চার ছিলেন এটা সর্বজনবিদিত। শিশু বয়সেই অবিভক্ত বাংলার অবিসংবাদিত নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে থামিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘স্কুলের চাল (ছাদ) দিয়ে পানি পড়ে। ওটা ঠিক করে দিয়ে যেতে হবে। সেদিন থেকেইসোহরাওয়ার্দীর প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন টুঙ্গিপাড়ার ছোট্ট খোকা শেখ মুজিব।’ শিশুদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ছিল অবারিত দুয়ার। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন, আজকের শিশুরাই জাতির ভবিষ্যত। আগামী দিনে দেশগড়ার নেতৃত্ব দেবে তারাই। ফলে আগে তাদেরই গড়ে তুলতে হবে। যখন তিনি বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেননি, একজন নেতা হয়ে উঠছেন কেবল, তখনও তিনি তার পরিকল্পনায় শিশুবান্ধব সিদ্ধান্ত রাখতেন বলে জানিয়েছেন তার সহযোদ্ধারা। জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উৎসবসহ চিত্রাঙ্কন, কবিতা, কুইজ, রচনা ইত্যাদি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে থাকে। বঙ্গবন্ধুর ৯৮তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে এবারের আয়োজনেও ছিল ভিন্নতা। ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে শনিবার সকাল ১০টায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমির পক্ষে ধানম-ি বত্রিশ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে একাডেমির কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দের পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচী শুরু হয়। বাদ আছর একাডেমির মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। বিকেল সাড়ে চারটায় বইমেলা-চত্বরের মুক্তমঞ্চে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন কবি মুহম্মদ সামাদ। স্বাগত বক্তব্য দেন শিশু সাহিত্যিক সুজন বড়ুয়া এবং শিশু বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখে নাবিল আইডিয়াল স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফারহান সাদিক সামি। সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমির সাংস্কৃতিক বিভাগের প্রশিক্ষণার্থী এবং একাডেমি পরিচালিত আজিমপুর শিশু বিকাশ কেন্দ্রের শিশুশিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিপুল সংখ্যক শিশু ও অভিভাবকদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠান প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। ১৬ মার্চ থেকে শিশু একাডেমির ১১ দিনব্যাপী বইমেলার দ্বিতীয় দিন ছিল শনিবার। মোট ৭৫টি প্রকাশনা সংস্থার অংশগ্রহণে মেলার দ্বিতীয় দিনও বইপ্রিয় শিশু ও অভিভাবকদের উপস্থিতিতে একাডেমির মেলাপ্রাঙ্গণ সৃজন-উৎসবে পরিণত হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও শিশু দিবস উপলক্ষে শনিবার বিকেলে ধানম-ি ৩২ নম্বরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন অনুষ্ঠানে তথ্য বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট তারানা হালিম বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ পরিচালনায় বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হবে।’ তিনি বলেন, আমরা যোগ্য পরিচালক দিয়ে আগামী নির্বাচনের আগেই বঙ্গবন্ধুর জীবনী দিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজ শুরু করে দিব। প্রয়োজনে এ কাজের জন্য বিদেশ থেকে ভাল কোন পরিচালক বা কলাকুশলী আনা হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করতে তৎকালীন সময়ে কালো আইন তৈরি করা হয়েছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদেরকে তৎকালীন সময়ের কালো ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না। আমরা বর্তমানে দেশের উন্নয়নকে যেমন মনে রাখব, সেই সঙ্গে কালো ইতিহাস সৃষ্টিকারীদেরকেও ঘৃণা করব। অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সমাজসেবার আওতাধীন স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে ৯৮টি বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেছেন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। এ সময় ৯৮ পাউন্ডের কেকও কাটা হয়। সমাজসেবা অধিদফতরের মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে রং ছড়ানোর আলো, লাল-সবুজের বাংলাদেশে থাকবে শিশু ভালো’ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শনিবার বেলা ১১টায় দোয়া ও শিশুদের নিয়ে জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ নুরুল কবিরের সভাপতিত্বে ৯৮ পাউন্ডের একটি কেকও কাটা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাশেদ খান মেনন শিশুদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা চিরদিন বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে চেতনায় ধারণ করবে। বঙ্গবন্ধু আমাদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন, একটি মানচিত্র দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসলে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে অনুসরণ করলেই তোমাদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল।’ এসময় মন্ত্রী একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কাটানো সময়গুলোকে শিশুদের মাঝে গল্পাকারে ব্যাখ্যা করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন এবং জাতীয় শিশু দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে ক্যামব্রিয়ান স্কুল এ্যান্ড কলেজের আয়োজনে এবং আরাবি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সহযোগিতায় শনিবার রাজধানীর মিরপুরের শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে হয়ে গেল শিশু সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগরের শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হৃদয় ছিল পবিত্র শিশুর মতো। তিনি শিশুদের অত্যন্ত ভালবাসতেন। এমন একজন মহান নেতার জন্ম না হলে বাংলাদেশ হতো না। অবিসংবাদিত এই নেতার জন্মদিন জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে উদযাপিত হওয়ার মাধ্যমে চমৎকার এক সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু এখন শুধু দেশে নয় বিশ্ববাসীর কাছে প্রিয় নেতা। প্রিয় নেতা ভবিষ্যত কাণ্ডারি শিশুদের কাছেও।’
×