ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার তদন্ত শেষ হতে এক বছরও লাগতে পারে দীর্ঘসূত্রতায় পড়তে পারে মরদেহ শনাক্তকরণ ও হস্তান্তর

লাশ আসছে কাল ॥ নেপাল ট্র্যাজেডি

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ১৬ মার্চ ২০১৮

লাশ আসছে কাল ॥  নেপাল ট্র্যাজেডি

আজাদ সুলায়মান ॥ নেপাল ট্র্যাজেডির তদন্ত, লাশ শনাক্তকরণ ও হস্তান্তরে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দিতে পারে। এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সিভিল এভিয়েশনের পাশাপাশি পররাষ্ট্র, বিমান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। এ জন্য সবার দৃষ্টি এখন নেপালে। কীভাবে লাশ হস্তান্তর করা হবে, কত দিনে কোন্ প্রক্রিয়ায় তদন্ত সম্পন্ন করা হবে এবং এই দুর্ঘটনার দায়ভার কাদেরÑ এ সব প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। এমন প্রশ্ন নিয়ে বৃহস্পতিবারও দেখা গেছে- হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর, সিভিল এভিয়েশন ও ইউএস-বাংলা অফিসে স্বজনদের উৎসুক দৃষ্টি। এমন অবস্থায় বৃহস্পতিবার নেপাল ট্র্যাজেডির শিকার আহত একজনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। শেহরিন নামের এই ভিকটিম ঢাকায় পৌঁছার পরই তার গতকালই নেয়া হয় ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে। নেপাল থেকে অপর একজনকে পাঠান হয়েছে দিল্লীতে। এরই মধ্যে যেসব লাশ চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলো কাল ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হতে পারে। স্মরণকালের ভয়াবহ এই বিয়োগান্তক ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধার্থে গতকাল রাষ্ট্রীয় শোক দিবস পালন করা হয়। এ জন্য সরকারী প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিদেশের দূতাবাসগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় এবং কালো ব্যাজ ধারণ করা হয়। এ দিকে নেপাল ও ঢাকায় সিভিল এভিয়েশনের দেয়া তথ্যে জানা যায়-এ ঘটনায় নিহত মোট ৫১ জনের মধ্যে মাত্র ১১ জনের লাশ চিহ্নিত করা গেছে। ৩০ মরদেহের ময়না তদন্ত শেষে এদেরকে চিহ্নিত করা হয় বলে জানিয়েছে ত্রিভুবন ইউনিভার্সিটি টিচিং হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ। লাশ শনাক্তের এমন জটিলতায় দ্রুত সহায়তা দিতে বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে নেপাল গেছে সিআইডির একটি টিম। তারা বৃহস্পতিবারই আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু করেছে। সিআইডির একটি সূত্র জানায়-শুধু যে নিহতের লাশ শনাক্ত করা জটিল বিষয় তা নয়- যারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাদের শনাক্ত করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। জীবিতদের মধ্যে মাত্র ১২ জনকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। বাকিদের চিহ্নিত করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ জন্যই নেপাল ও ঢাকা যৌথভাবে সবার পরিচয় শনাক্তে প্রয়োজনে ডিএনএ পরীক্ষা সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছে। যৌথ উদ্যোগ ছাড়াও নিজস্ব ল্যাবে বাংলাদেশী লাশের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় শনাক্তের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। এ দিকে ইতোমধ্যে যেসব লাশ শনাক্ত হয়েছে সেগুলো কাল-পরশুই স্বজনদের বুঝিয়ে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বলে দেশটিতে সফররত বাংলাদেশ মেডিক্যাল টিমের সদস্য ও ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ। তিনি বলেন, ৩৫ জনের লাশের ময়নাতদন্ত শেষ করেছি। আমরা আগামীকালের মধ্যে আমাদের কাজ শেষ করতে পারব। পরদিন থেকে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করতে পারব। কিছু লাশ দেখেই শনাক্ত করা যাচ্ছে না। ডিএনএ প্রোফাইল করতে হবে সেগুলোর ক্ষেত্রে আরও সময় লাগবে। এ দিকে নেপাল পুলিশের মুখপাত্র মনোজ সাংবাদিকদের জানান, জীবিত ও মৃত উভয়ের ক্ষেত্রেই আরোহীদের শরীরের বড় অংশ পুড়ে গেছে। এতে তাদের চেনা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। জীবিতদের মধ্যে কমবেশি ১১ জনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে বলে জানিয়েছেন মনোজ। তবে এই সংখ্যার যথার্থতা নিয়ে তিনি নিজেও সংশয়ী। শারীরিক ও মানসিক পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ায় তাদের অনেককে চিনতে পারছে না নেপাল। নতুন করে ২ জনের প্রাণহানির খবর দেয়ার আগে পুলিশের মুখপাত্র মনোজ জানান, দুই নেপালী চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন। এখনও চিকিৎসাধীন ১৯ জন। একজন সিঙ্গাপুরে গেছেন চিকিৎসা নিতে। ত্রিভুবন ইউনিভার্সিটি টিচিং হাসপাতালের ফরেনসিক কর্তৃপক্ষের পক্ষে চিকিৎসক প্রমোদ শ্রেষ্ঠ বলেন-আমরা মাত্র ১১ জনের পরিচয় শনাক্ত করতে পেরেছি। বাকি মরদেহ ঝলসে যাওয়ায় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে এখনও তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। চিকিৎসকরা তাদের আঙ্গুল, কানের দুল, অলঙ্কার কিংবা চোয়ালের আকৃতির মাধ্যমে পরিচয় শনাক্ত করার চেষ্টা করবেন। ডাঃ প্রমোদ বলেন-যদি কোনভাবেই আমরা শনাক্ত করতে না পারি তবে ডিএনএ পরীক্ষা করব। সারাদেশে শোকের ছায়া নেমে আসা এই বিমান বিধ্বস্তের প্রকৃত কারণ বের করতে দীর্ঘ সময় লাগার ইঙ্গিত দিয়েছে সিভিল এভিয়েশন। আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশনের রুলস অনুযায়ী এ ধরনের দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে এক বছর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। অবশ্য সবকিছু অনুকূলে থাকলে তার আগেও সম্ভব। এ বিষয়ে ঢাকায় বৃহস্পতিবার সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল নাইম হাসান বলেছেন-অতীতের বিমান দুর্ঘটনার ঘটনা প্রবাহ বিচারে ‘নেপাল ট্র্যাজেডি’ তদন্তে এক থেকে দেড় বছরও সময় লেগে যেতে পারে। এ ছাড়া আইকার (আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন) নিয়ম অনুযায়ী তদন্ত ধীরস্থিরভাবে সম্পন্ন করতে হবে। এটাই তদন্তের নিয়ম। তবে প্রয়োজনে আরও বেশি সময় নেয়া যেতে পারে। সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যান বলেন, বিএস ২১১ উড়োজাহাজ বিধ্বস্তে নিহতদের মধ্যে ১৯ জনের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এখন সেগুলো শনাক্ত করা হবে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে সব মরদেহ দেশে আনা হবে। মরদেহগুলো দ্রত দেশে আনার জন্য আমরা কাজ করছি। জনকণ্ঠের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- তদন্ত নেপাল করবে। আমাদের টিম তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে। এ প্রক্রিয়া চলামান থাকবে। সিভিল এভিয়েশনের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ও পরিচালক (এফএসআর) চৌধুরী জিয়াউল কবির এ সময় উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, গত সমবার ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট (বিএস-২১১) নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয়। এতে আগুন ধরে গেলে তাৎক্ষণিক ৫০ জনের প্রাণহানি ঘটে। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান। ৬৭ যাত্রী ও চার ক্রু ছিলেন হতভাগ্য ওই ফ্লাইটটিতে। মোট ৬৭ যাত্রীর মধ্যে বাংলাদেশী ৩২, নেপালী ৩৩ জন, একজন মালদ্বীপের এবং একজন চীনের নাগরিক ছিলেন। তাদের মধ্যে পুরুষ যাত্রীর সংখ্যা ছিল ৩৭, মহিলা ২৮ ও দু’জন শিশু ছিল।
×