ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পঞ্চগড়ে রাবার ড্যাম সুবিধা বঞ্চিত কৃষক

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১৫ মার্চ ২০১৮

পঞ্চগড়ে রাবার ড্যাম সুবিধা বঞ্চিত কৃষক

স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড় ॥ ভরা বোরো মৌসুমেও কৃষকের কাজে আসছে না পঞ্চগড়ের তালমা রাবার ড্যাম। উদ্বোধন হওয়ার পর মাত্র এক বছর কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া গেলেও তার পরের বছর থেকে তা নেমে আসে ৫০ থেকে ১০০ হেক্টরে। ওই রাবার ড্যামের পানি যাওয়া লাইনে ভেঙ্গে যাওয়া, ড্যাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, উজানে বালুমহল নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং সমিতির নেতাকর্মীদের খামখেয়ালীর কারণেই ভরা বোরো মৌসুমেও কৃষকরা সেচ সুবিধা পাচ্ছে না। আর সেচ সুবিধা না পাওয়ায় ওই এলাকায় কমে এসেছে বোরো চাষাবাদ। চলতি মৌসুমে রাবার ড্যামের পানির আশায় মাত্র ৫০-৬০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করলেও রাবারটি বেশি না ফুলানোয় তাদের ভাগ্যে জুটছেনা ড্যামের সেচ সুবিধা। কৃষকদের অভিযোগ তালমা নদীর রাবার ড্যাম সংলগ্ন হিমালয় বিনোদন পার্ককে সুবিধা দেয়ার জন্যই তালমা রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির নেতারা রাবার ৪/৫ ফুটের বেশি ফুলাচ্ছেন না। তাই কৃষকরা ড্যামের পানি না পেয়ে বোরোর চারাগাছ বাঁচাতে বিকল্প দোল সেচনি দিয়ে ক্ষেতে সেচ দিচ্ছেন। কৃষকের ক্ষেতে পানি না থাকলেও ড্যামের পানিতে কেবল সুবিধা পাচ্ছে ওই বিনোদন কেন্দ্র। সরকারী নদীর ড্যামের পানিতে প্রতিদিন চলছে বিনোদন কেন্দ্রের রং বেরংয়ের বোট। অথচ এসব দেখার কেউ নেই। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে মাঝারি নদীতে ১০টি রাবার ড্যাম নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে পঞ্চগড় সদর উপজেলার তালমা নদীতে সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে রাবার ড্যাম নির্মাণ কাজ শুরু হয়। একই সঙ্গে ওই নদী সংলগ্ন পাশ^বর্তী এলাকায় সেচ সুবিধা দেয়ার জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে একটি চ্যানেল নির্মাণ করা হয়। পরের বছর থেকে স্বল্প খরচে সেচ সুবিধা পায় ওই এলাকায় প্রায় ১০ গ্রামের সহ¯্রাধিক মানুষ। বোরো চাষসহ রবি শস্য চাষে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়। শুরুতে তালমা রাবার ড্যাম থেকে মামা-ভাগিনা ব্রিজ হয়ে উত্তরে বিষমণি পর্যন্ত এবং দক্ষিণে কুচিয়ার মোড় পর্যন্ত কৃষকরা সেচ সুবিধা পেত। পূর্ব জালাসী, তালমা, চছপাড়া, বিষমণি, খোঙ্গাপাড়া, কুচিয়ারমোড়, ডিয়াবাড়ি, টেংনাপাড়া, বড়দহ, ঠুটাপুকুরী, পাথরডোবাসহ প্রায় ১০টি গ্রামের কৃষকরা বোরো চাষ করত এই ড্যামের পানি থেকেই। ড্যামটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য একটি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি গঠন করা হয়। প্রত্যেক সদস্যকে ১২০ টাকা দিয়ে সদস্য হয়ে প্রতি মাসে ৫০ টাকা করে সঞ্চয় জমা দিতে হতো। বর্তমান তালমা রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সদস্য সংখ্যা রয়েছে প্রায় ৪’শ। প্রথম বছর পুরোদমে কৃষকরা রাবার ড্যামের সেচ সুবিধা পেলেও তার পরের বছর থেকেই বিভিন্ন কারণে রাবার ড্যামের সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে শুরু করে কৃষকরা। পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) নবীরুল ইসলাম জানান, আমরা কৃষকদের সমস্যার কথা শুনেছি। সমিতির নেতারা কাউকে বিশেষ কোন সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে কিনা সে বিষয়ে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। সেই সাথে ড্যামের উজানের বালুমহলটি বিলুপ্ত করার বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। ওই ড্যামের অধীনে কৃষকরা যাতে শতভাগ ড্যামের সেচ সুবিধা পায় তা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। পঞ্চগড় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান জানান, গত বন্যায় ড্যামের চ্যনেলের বিভিন্ন স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ড্যামের রাবারে ত্রুটি দেখা দেয়। সম্প্রতি ড্যামটি প্রায় ৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজ করে চালু করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া আরও ৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত চ্যানেলের সংস্কার কাজও চলছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোঃ শামছুল হক জানান, অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যার কারণে দীর্ঘদিন ধরে আমাদের কৃষকরা তালমা রাবার ড্যামের সেচ সুবিধা পাচ্ছে না। রাবার ড্যামটি নষ্ট হয়েছিল। আমরা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরকে তা ঠিক করে দিতে বলেছিলাম। তারা সংস্কার করে দিয়েছে।
×